২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:১৭:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


সাধারণ সভায় বহিষ্কৃত হলেন মইনুল-শেফাজ, বিক্ষুব্ধদের জনতার সভায় অবাঞ্ছিত বদরুল
কমান্ডো স্টাইলে জালালাবাদের সাধারণ সভা : মারামারি-হাতাহাতি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
কমান্ডো স্টাইলে জালালাবাদের সাধারণ সভা : মারামারি-হাতাহাতি ভিতরে চেয়ার নিয়ে মারামারি


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। একটি ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সংকটের এবং সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেই সংকট এবং সমস্যার একমাত্র স্থান ছিল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা। কিন্তু বদরুল হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন অংশটি সেই সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা না করে সংকট আরো গভীর করেছে। জালালাবাদকে শশ্মানে পাঠানো বা বিভক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। সাধারণ সভার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। দুই একটি সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু চিন্তা-চেতনায়, মননে-মস্তিষ্কে থাকা- সাধারণ


সম্পাদক মইনুল ইসলামকে সাধারণ সভায় বহিষ্কার করতে হবে। মইনুল ইসলামের দোষ, সে কেন ভবন ক্রয় করলো? গ্রাম্য প্রবাদ-মইনুল ইসলাম এলো তিনে শুক্কুরে ১৫ দিন, সে কীভাবে ভাবে ভবন করলো। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৩৮ বছর। ৩৮ বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে ভবন কেনা যাচ্ছে না। বারবার ভবনের জন্য ফান্ড রেইজিং করা হয়, কিন্তু ভবন হয় না। যারাই ক্ষমতায় আসেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করে তথাকথিত গিরিঙ্গিবাজ মুরব্বি। তাদের কথায় চললে সবকিছু ঠিক, আর না চললে বিপদ। এবারের সাধারণ সভায়ও তাই হয়েছে। কোনো কোনো মুরব্বি সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে থাকা

কর্মকর্তাদের বাসায় গিয়েছেন, হাতে পায়ে ধরেছেন। বলেছেন, ভাই ইজ্জত বাঁচাও। উনাদের ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে জালালাবাদের ইজ্জত নিলামে তুলে দেওয়া হলো। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় আর্মস সিকিউরিটি দিয়ে যেভাবে চেক করা হলো, তাতে মনে হলো সাধারণ সভায় সন্ত্রাসী ঢুকতে এসেছে। এখানেই শেষ নয়, যারা ভবনের পক্ষে তাদের চিহ্নিত করে ঢুকতে দেওয়া হলো না। সিকিউরিটি অসভ্য আচরণে বিব্রত হয়েছেন অনেকেই। ঢুকতে গিয়েও ঢোকেননি। তাদের বক্তব্য আমাদের অর্থ দিয়ে সিকিউরিটি এনে আমাদের অপমান করা হচ্ছে? নিজের অর্থ দিয়ে সদস্য হয়ে আমাদের অপদস্ত করলো সভাপতি বদরুল হোসেন খান এবং তার গিরিঙ্গিবাজ মুরব্বি এবং অনুসারীরা। অনেকেই এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। ক্ষোভে ফেটে

পড়েছেন, বলেছেন-সবার মনে রাখা উচিত এক মাঘে শীত যায় না। তারা বলেন, আমরা যদি চাইতাম, তাহলে সাধারণ সভা পন্ড করে দিতে পারতাম। বদরুল হোসেন খানদের টার্গেট ছিল মইনুল ইসলামের অনুসারিদের ঢুকতে না দেওয়া, যারা ঢুকেছেন তাদের সিকিউরিটি দিয়ে বের করে বা বের করে পরিস্থিতি তৈরি করে মানস কামনা পূর্ণ করা। সেই মানস কামনা হচ্ছে, মইনুল ইসলামকে বহিষ্কার করা। অনেকেই বলেছেন, বহিষ্কারের মূল কারণ হচ্ছে প্রতিহিংসা। ৩৮ বছর নেতৃত্ব দিয়েছি ভবন করতে পারিনি, হঠাৎ করে এসে মইনুল ইসলাম ভবন করে ক্রেডিট নিবেন তাতো হয় না! যেই চিন্তা সেই কাজ।


মইনুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হলো। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ কয়েক শত জালালাবাদবাসী জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো সভাপতি বদরুল হোসেন খানকে। সাধারণ সম্পাদক বেরিয়ে যাওয়ার পর বদরুল হোসেন খানের অনুসারীদের উপস্থিতিতে মইনুল ইসলামের পাশাপাশি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে অর্থ নিয়ে আইনিব্যবস্থা এবং বাড়ির ওপর লিন বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার সন্ধ্যায় উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে সন্ধ্যা ৬টার স্থলে সাড়ে ৭টার দিকে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের হলে প্রবেশমুখে কড়া সিকিউরিটির মাধ্যমে দেহ তল্লাশি করে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এরই মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান শেফাজ সভাস্থলের ভিতরে প্রবেশ করলে তাকে সভাপতি বদরুল হোসেন খানের নির্দেশে বের করে দেওয়া এবং সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী সিকিউরিটি কর্তৃক প্রবেশমুখে দেহ তল্লাশির ঘটনায় জালালাবাদবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুধু সৈয়দ শওকত আলীকে নয়, প্রতিটি জালালাবাসীকে তল্লাশি করা হয়। এ নিয়ে দেখা দেয় উত্তেজনা। এদিকে সাধারণ সভা শুরুর প্রাক্কালে অ্যাসোসিয়েশনের ইসি কর্তৃক অগঠনতান্ত্রিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করতে চাইলে সভাপতি বদরুল হোসেন ও তার পরিষদ বাধা দিলে চরম হট্টগোল আর বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পাল্টাপাল্টি বাগ্বিতণ্ডা, হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, চেয়ার নিয়ে মারার চেষ্টা হলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেন। এই অচলাবস্থা চলে প্রায় ১৫/২০ মিনিটের মতো। এক পর্যায়ে মইনুল ইসলাম বের হয়ে গেলে তার কয়েক শত অনুসারি বেরিয়ে যান। তারা বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ করতে থাকেন। বিক্ষুব্ধ হয়ে তারা বদরুল হোসেন খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। তারা সেখানে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত অবস্থান করেন। পরে সেখান থেকে এস্টোরিয়াস্থ জালালাবাদ ভবনে যান এবং সভা করেন।

পরে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে সাধারণ সভার কার্যক্রম শুরু হয় এবং সভা পরিচালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম। সভায় সংগঠনের সবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কওছারুজ্জামান কয়েস, ছদরুন নূর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে-জুনেদ খান, মিসবাহ আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন, আহমেদ জিল্লু ও আতাউর রহমান সেলিম।

সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কর্মকর্তা জামিল আনসারী। এরপর সহসাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের প্রস্তাবনায় সদ্য প্রয়াত সংগঠনের সাবেক সভাপতি জন উদ্দিন স্মরণে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সময় সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির সবেক সভাপতি কামাল আহমেদসহ পরলোগকমনকারী অ্যাসোসিয়েশনের কয়েক কর্মকর্তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে-সহসাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম এবং কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ আলিম উদ্দিন। উভয়ের রিপোর্টে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এরপর রিপোর্ট দুটি নিয়ে আলোচনার সময় বিভিন্ন ইস্যু ও বক্তব্যে একাধিকবার উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও আবার তা প্রশমিত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মুস্তফা কামাল, মাসুদুল হক সানু, মকবুল রহিম চুনুই, গৌউছ খান, আব্দুর নূর বড় ভূইয়া, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, মিয়া মোহাম্মদ আফজাল, শেখ আতিকুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মওলানা রশীদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান মিজান, জামিল আনসারী, সাইকুল ইসলাম, জামাল হোসেন প্রমুখ।

মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাহিষ্কারের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর তিনি ঘোষণা দেন যে এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৫ জুন থেকে কার্যকর হবে।

বদরুল হোসেন খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

এদিকে কুইন্স প্যালেসের ভিতরে যখন সাধারণ সভা চলছিল তখন মিলনায়তনের বাইরে ‘বদরুল-হাকিম’ আহূত সাধারণ সভাকে অবৈধ সভা উল্লেখ প্রতিবাদী জালালাবাদবাসী বদরুল হোসেন খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং আগামী ১৮ জুন রোববার সন্ধ্যায় উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে বিশেষ সাধারণ সভার ঘোষণা দেন। এই সাধারণ সভার প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করেন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউল গণি আসাদ, আজিজুর রহমান সাবু, আব্দুল হাসিম হাসনু, সৈয়দ জুবায়ের আলী, দরুদ মিয়া রনেল, এম এ করিম, বেলাল উদ্দিন, কয়েস আহমেদ, সাহাবুদ্দিন, সুব্রত বিশ্বাস, বিলাল চৌধুরী, ইফজাল চৌধুরী, পংকি মিয়া, মইনুজ্জামান চৌধুরী, সাজু মিয়া, ফজলু মিয়া, হুমায়ুন আহমেদ, মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী, সৈয়দ মামুন, মোহাম্মদ কামরুন, দেওয়ান সাহেদ চৌধুরী, সাহাবুদ্দিন, ফজলুর রহমান প্রমুখ। এই সময় কয়েক শত মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন বদরুল হোসেন খান ও তার অনুসারিদের।

শেয়ার করুন