২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:১০:৫৪ অপরাহ্ন


সরকার কম্পমান- খন্দকার মোশাররফ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
সরকার কম্পমান- খন্দকার মোশাররফ


বিরোধী আন্দোলনে ‘সরকার কম্পমান’ বলে দাবি করেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘ এখন সরকার বেসমাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকমের কথা বলে। এদেশের মন্ত্রীরা একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। একজনের বলেন, আরেকজনে বলে এটা উনার ব্যক্তিগত মত।সংসদীয় পদ্ধতিতে মন্ত্রিসভায় একজন মন্ত্রী যা বলেন, এটা সরকারের কথা। মন্ত্রীরা আবোল-তাবোল বলছেন। কেউ একরকম বলছেন, কেউ আরেকরকম বলছেন। কেনো বলছেন? আসলে বাংলাদেশে জনগনের আন্দোলনের মুখে এই সরকার কিন্তু বিচলিত, আজকে তারা ভয়ে ভীতি এবং কম্পমান- এগুলো কিন্তু প্রকাশ বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তাদের কথা-বার্তায় মধেই।”

 

বৃহস্পতিবার জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে’ প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ এখানে-সেখানে হাত পেতে বেড়াচ্ছেন, ঋণ ছাড়া সরকার চলছেন না, ডলারের অভাবে আমাদের আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারছে না। বিদ্যুতের লোডশেডিং যেটা প্রধানমন্ত্রী পাঠিয়েছিলেন মিউজিয়ামে সেই লোডশেডিং আজকে বিপর্যস্ত মানুষ।”

 

‘‘ কেনো? আমাদের অর্থনীতির দুরাবস্থার কারণে এই বিদ্যুত উতপাদনের জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। তারপরে কিভাবে একটা দেশের গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী এবং চাপাবাজির প্রধানমন্ত্রী না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে বলে দাবি করতে পারেন? এটা থেকে বুঝতে পারেন নানা কারণে আজকে তাদের কি অবস্থা।”

 

দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ এটা সবাই জানে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা কেমন। মূল্যস্ফীতি, ঋণ সংকট, ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, রপ্তানি আয় কমে গেছে, আমাদের রেমিটেন্স কমে গেছে, রিজার্ভ সংকট… এগুলো বাস্তব অবস্থা।”

 

‘‘ তারপরে আমাদের দেশের গায়ের জোরের প্রধানমন্ত্রী জেনেভায় গিয়ে বলেন আমাদের দেশের অর্থনীতি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানের আছে। ধিক্কার। এভাবে চাপাবাজি করে বেশি দিন কোনো সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। বাংলাদেশের অর্থনীতি আমরা যেমন জানি, সারা বিশ্বও জানে।”

 

বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘‘ এই সরকারকে হঠাতে হবে আর এই সরকার থাকলে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচনও হবে না। বিএনপি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, বাংলাদেশের মানুষও বিশ্বাস করে অতীতে যেমন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না।”

 

‘‘ আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারের কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। যতই চেষ্টা করুক কোনো লাভ হবে না। অনেক চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক শক্তিকে বুঝানোর জন্য বুঝাতে পারে নাই। বাংলাদেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সেজন্য আমাদেরকে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে এই সরকারকে হঠানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।”  

 

ঢাকার সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে ’১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

 

১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয় ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

 

‘এ (আওয়ামী লীগ) যাবে কবে?’

 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আজকে মানুষের কাছে প্রশ্ন এ যাবে কবে? কিভাবে যাবে? যাবে তো। আমাদের সবার মধ্যে রাজনীতি আমরা যারা করছি আন্দোলনে মাঠে আছি … সবার একটাই কথা এ যাবে কবে? একটা কথা তো ঠিক মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে, পদ্মা-তিস্তা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আমরাও দেখতে দেখতে প্রায় ১৫ বছর পার করেছি। আর ডিসেম্বরের মধ্যে, জানুয়ারি প্রথম দিকে মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। হাতে কত দিন আছে এই সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই করবার জন্যে। এখন সামনে ঈদ, ঈদের আগে তো কিছু করতে পারবেন না। তবে এটাই সত্যি ঈদের পরে সমগ্র জাতি জানবাজি লড়াই করতে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য।”

 

‘এজন্য সমস্ত মানুষ বিএনপি‘র ওপর তাঁকিয়ে আছে’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘ কারণ সিদ্ধান্ত, সঠিক আন্দোলন, সঠিক কর্মসূচিরই ওপর নির্ভর করবে আমরা জিতবো কি জিতবো না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আন্দোলনের রক্তে-ঘামে বিজয় অর্জন করতে হবে।”

 

প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে প্রসঙ্গটি তুলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ মানুষের এখন একটাই দাবি এই সরকার কত দ্রুত বিদায় হবে। শ্লোগানের ভাষা হয়ে গেছে একদফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি। এখানে মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব কথা বলেছেন কবে যাবি?”

 

‘‘ তাহলে একটা কথা ঠিক যে, তারা যে যাচ্ছে এটা সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাদের মনেও কিন্তু এটা ইতিমধ্যে .... এটা আলোচনা হচ্ছে তারা যে যাচ্ছে। প্রশ্ন টা হচ্ছে কবে যাবে?”

 

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ আজকের দিনটা শুধু গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন না, সমগ্র জাতির জন্য কালো দিন। এটা কেবলমাত্র সংবাদপত্রের স্বধীনতা হরণ করবার অনুষ্ঠান ছিলো না, অনুষ্ঠান ছিলো সমস্ত মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা এবং প্রতিষ্ঠা করা বাকশাল।বাকশাল মানে এক দল, এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কনস্ট্রিটিউশন বদলে ফেলো বলা হলো বঙ্গবন্ধু হবে দেশের আজীবন প্রেসিডেন্ট।”

 

‘‘ বুঝে দেখেন একজন মানুষ আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকবেন, তার হাতে সর্বময় ক্ষমতা….। তাহলে গণতন্ত্রের কোনো সুযোগ আছে? নাই। এই আইন এই সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী কে করলেন পার্লামেন্টে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কার নেতৃত্বে করা হলো? আমরা সবাই পূজা করছি, পূজার ফুল দিচ্ছি।”

 

মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও সদস্য কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন