২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৩৩:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


টক অব দ্যা পলিটিক্স
সেলফিতে স্বপ্ন, মোমেনে ভঙ্গ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
সেলফিতে স্বপ্ন, মোমেনে ভঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে সেলফিতে প্রধানমন্ত্রী ও পুতুল


অর্থনীতিতে পিছিয়ে থেকেও ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দুর্দান্ত উপস্থাপনা জি-২০ সম্মেলনে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সফলভাবে উপস্থাপনে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশকে। বিশেষ করে বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ‘কনফারেন্স ডিপ্লোমেসি’র যেটুকু করা প্রয়োজন তার পুরাটাই নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্যে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সংহতি শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগেরও আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শুধু এ সম্মেলনই নয়, এর বাইরেও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা ও মিলনমেলায় অংশ নেন তিনি বিভিন্ন স্থানে। প্রতিটা পর্বেই তিনি শক্তিশালী অর্থনীতি তথা, প্রভাবশালী দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, বৈঠকও করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও। স্বাগতিক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি সম্মেলনের আগের দিন দিল্লি পৌঁছেই। সেখানে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, যা মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়াও শেখ হাসিনার বড়প্রাপ্তি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কুশল বিনিময়। সেলফি তুলতেও দেখা গেছে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মাকে নিয়ে জো বাইডেনকে। 

করোনা মহামারি থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ ও নানা বৈশ্বিক জটিলতার কারণে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে অনেক দুর্বল কাঠামোর অর্থনীতির দেশ। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান ‘এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়ন’, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ এবং নারীর সমান অধিকার।

জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রমের অনেক কিছু জানা না গেলেও ছবিতে কিছু কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কুশল বিনিময়।

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক হয়েছে আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ জানান, আর্জেন্টিনার ফুটবলকে সমর্থন জানানোর কারণে তার দেশের লোকের মন জয় করেছে বাংলাদেশিরা।

এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়ুলের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে শেখ হাসিনার। 

সেলফি স্বপ্নভঙ্গ, সেলফিতে স্বপ্ন 

তবে জি-২০ সম্মেলনে সবচেয়ে আলোচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেলফি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ঋষি সুনাকের সঙ্গে তোলা ছবি। 

ঋষি সুনাকের সঙ্গে অবশ্য সেলফি নয়। একটি ছবিতে দেখা গেছে যে, সোফায় হেলান দিয়ে বসা শেখ হাসিনার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কথা বলছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। দুইয়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে সেটা ছবি প্রমাণ কওে, একই সঙ্গে একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদের সঙ্গে সুনাকের নমনীয়তা, ভদ্রতা দৃষ্টি কেড়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঠিক অমনটা নয়। প্রেসিডেন্টকে বেশ উৎফুল্লই মনে হয়েছে সেলফি তুলতে। যদিও দীর্ঘকায় হওয়ায় জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলতে যাওয়া যে কারো ক্যামেরাটা নিজেই শট করেন। সে ধারাবাহিকতা শেখ হাসিনার সঙ্গেও। এখানে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কন্য সায়মা ওয়াজেদকে বিশেষ ভূমিকায় দেখা গেছে। সায়মার সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলতে দেখা যায় বাইডেনকে। পরে এ তিনজন একসঙ্গে দাঁড়ালে সেখানেও ছবি তোলার পোজ দেন তারা। অন্য এক ছবিতে দেখা গেছে, বাইডেন শেখ হাসিনার সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। তবে এই সেলফি নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, (যা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে) আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আমি তাকে বলেছি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করতে চান। তিনি বলেছেন, কোনো অসুবিধা নেই। সেই সুযোগ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গেলে কূটনৈতিক জিয়াউদ্দিন ছবি তোলার চেষ্টা করেন। এই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই ফোনটি নিয়ে সেলফি তুলে দেন, যা ছিল নেহায়েত ভদ্রতা। তাকে প্রমাণ হয়, সেলফি নিয়ে স্বপ্ন, আবার সেলফি নিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ।

সম্মেলনের পরই দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। পরে বাংলাদেশে সফরে আসা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা প্রধান ও ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান শেখ হাসিনা। দুই দিনের সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসেন দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শেষ করে। 

ওবায়দুল কাদের 

এদিকে দিল্লিতে যখন জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফিতে শেখ হাসিনা। তখন সেটা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১০ সেপ্টেম্বর রোববার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যুবলীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে যাওয়ার লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেছে বিএনপির।’ ভারতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তোলা সেলফি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দিল্লির এক সেলফিতেই বিএনপির রাতের ঘুম হারাম, চোখমুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা ভেঙে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, বিএনপির লাফালাফি বন্ধ হয়ে গেছে। দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেছে, আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ছিল তারা। একটা সেলফি দেখেই চোখমুখ শুকিয়ে গেছে তাদের। রাতের ঘুম শেষ হয়ে গেল। এখন কে নিষেধাজ্ঞা দেবে? ওসব ভয় পায় না আওয়ামী লীগ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর 

সাবেক অর্থমন্ত্রী বিএনপির প্রয়াত নেতা অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ১০ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব নাকি বলেছেন, ফখরুল সাহেব এখন কী বলবেন। আমি বলি, আমার পরামর্শটা নেবেন। এই ছবিটা (জো বাইডেনের তোলা সেলফি) বাঁধিয়ে গলায় দিয়ে ঘুরে বেড়ান। ওটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে। এটা দিয়ে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, বাইডেন এখন আমার সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, ‘এই জাতির দুর্ভাগ্য কোথায় জানেন? বেসিক জায়গায় আমরা কেউ যাই না; আমরা সেলফির মতো ইস্যুতে যাই!’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অথচ আপনার এই প্রধানমন্ত্রী কয়েক দিন আগে কী বললেন? তিনি বললেন, আমেরিকা এখন বলছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নাকি তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিচ্ছে না, সেজন্য আমেরিকা নাকি তাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। তাহলে এখন কি আমরা বুঝবো, আপনি সেন্ট মার্টিন দ্বীপটা দিয়ে দিয়েছেন?’

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘কয়দিন আগে আবার উনি (প্রধানমন্ত্রী) আরেকটা কথা বলেছেন, এই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকা বেস করতে চায় এবং গোটা এই এলাকাতে সেই প্রভুত্ব করবে, দেশগুলো দখল করবে, আক্রমণ করবে এভাবে কথা বলেছেন।’ 

সর্বশেষ

শুধু রাজনীতিবিদই নয়, সেলফি নিয়ে আলোচনা সাধারনণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও। 

বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ বিষয়টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ঝড়। যেখানে বিএনপি ও সমমনারা বোঝাতে চেয়েছেন-এমন সেলফি, করমর্দন কেউ চাইলে বাইডেন তার সঙ্গেই করেন। যেমনটা একবার করমর্দন করেছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও, এমন ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা একজন প্রভাশালী বিশ্বনেতা প্রমাণে জো বাইডেনের নিজ থেকে সেলফি তোলা প্রকাশ করে দেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান বিদেশি শক্তির কাছে নত নয়, সেটা বোঝানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সমার্থিতদের। সাধারণ মানুষ বিষয়টা দারুণভাবে উপভোগ করে গেছেন।

শেয়ার করুন