২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৯:০২ পূর্বাহ্ন


এস আলমের মুদ্রা পাচার প্রথম ও শেষ নয়, আরো অনেকের নাম আসছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
এস আলমের মুদ্রা পাচার প্রথম ও শেষ নয়, আরো অনেকের নাম আসছে


বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট কিছু মানুষ এবং গোষ্ঠী কোটি কোটি টাকা অবাধ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। প্রবাসে গড়ে তুলেছে বিশাল সাম্রাজ্য। এস আলম গ্রুপের মুদ্রা পাচার অনুসন্ধান বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের একটি আদেশে এখন এটি দিনের আলোর মতোই স্বচ্ছ। দীর্ঘদিন থেকেই কানাঘুষা ছিল গ্রুপটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক এবং ব্যবসায় অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার। একই ধরনের বৈধ অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে অর্থপাচার বিষয়ে কানাঘুষা আছে, আরো কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। কিন্তু কয়েকটি এই ধরনের গোষ্ঠী আবার বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র এবং টেলিভশন মালিকানার অংশীদার হওয়ার কারণে এবং শাসকগোষ্ঠী ঘনিষ্ঠ থাকায় তাদের বিষয়ে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে না বা মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করছে না। 

কত টাকা, কীভাবে, কোন দেশে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপ পাচার করেছে সেটি আদালতে প্রমাণ হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার শকুন দৃষ্টি এড়িয়ে কীভাবে বাংলাদেশিরা বিদেশে অর্থপাচার করে সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে। সিংগাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ইউএইতে কারা অবৈধ উপায়ে অর্থপাচার করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এখন অনেকটাই অসম্ভব হয়ে গেছে। অবৈধ এই গোষ্ঠী এখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। এই যে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব এতোটা আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে, তার অন্যতম মূল কারণ অন্যান্য দেশসহ পশ্চিমাবিশ্বের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের মুদ্রাপাচার এবং সম্পত্তি অর্জনের নির্ভরযোগ্য তথ্যাবলি।

এখন এস আলম গ্রপের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, অচিরেই হয়তো অন্য ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অর্থপাচারের কাহিনি প্রকাশিত হবে। দুনিয়ার অনেক দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি বিভিন্ন দেশে বৈধ পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করে সম্পদশালী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষ স্বল্পসময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট করে পাচার করা শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অবাধ  দুর্নীতি ছাড়া অসম্ভব।

বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে বিগত দুই দশকে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, দেশব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি সর্বত্র দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীদের একটি অবৈধ মাফিয়া সিন্ডিকেট আইন-আদালতের ফাঁকফোকরে বিপুল পরিমাণ কালো অর্থের মালিক হয়েছে, শেয়ার মার্কেট লুট করেছে, অবাধে অর্থপাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া জাতীয় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। এটা আর অজানা নেই যে সিংগাপুর, আমেরিকা, ইউএইতে কাদের ব্যবসা, সম্পদ এখন বিশ্বের ধনী দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। এদের অবাধ লুটপাটের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অস্থির, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা নিদারুণ কষ্টের। প্রবাসে সাধারণ কর্মীরা সকাল-সন্ধ্যা কঠোর পরিশ্রম করে রেমিট্যান্স পাঠায়। দেশে শ্রমিকশ্রেণি সামান্য মজুরির বিনিময়ে রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করে।  আর একশ্রেণির চাটার দল লুণ্ঠন করে মুদ্রাপাচার করে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন। শুধু তাই নয়, সচেতন মহলের সবাই এদের ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি সামাজিকভাবে পরিত্যক্ত করা উচিত বলেও তারা মনে করেন।

মনে আছে, কিছুদিন আগে দুদকের এক সাহসী কর্মকর্তা বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকায় কর্মরত থাকা সময়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরের অবাধ দুর্নীতির বেশকিছু নির্ভরযোগ্য কাহিনি উন্মোচন করে আলোড়ন তুলেছিল। দুদকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের দুর্নীতিপরায়ণ আমলাদের কারণে সেই সাহসী কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বহাল তবিয়তে সক্রিয় আছে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা। বর্তমানে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ শাখা-প্রশাখা মেলে এতো বিস্তৃত যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেও দুর্নীতির মূল উৎপাটন অত্যন্ত দুরূহ। শেষ ভরসা আদালত।  অচিরে কিছু মহাদুর্নীতিবাজদের বিচার না হলে, আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয়তায় এদের নাম প্রকাশিত হলে অনেকে বিব্রত হবে। কারণ ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলের সে তৎপরতা সবার নজরে এসেছে। তদন্ত করে গেছেন মার্কিন প্রতিনিধি। জানান দিয়ে গেছেন কঠিন কিছু বাক্যের বিনিময়ে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। বাংলাদেশ থেকে পাচার করে নেওয়াদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ তাদের। তারা কারোই নাম বলেনি। তবে ওই তালিকাটা একেবারে কম নয়। ফলে বাস্তবেই সেটা প্রকাশ হলে লজ্জা ও ঘৃণা ছড়াবে মানুষ। ফলে এস আলমের মতো আরো কিছু মহাদুর্নীতিবাজ চক্রের দুর্নীতি সরকার চাইলেই চিহ্নিত করে আইনের আশ্রয় নিতে পারে, তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

শেয়ার করুন