৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১১:২০:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


শান্তি সমাবেশ নিয়ে আ.লীগে মহা অশান্তি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
শান্তি সমাবেশ নিয়ে আ.লীগে মহা অশান্তি


বিএনপি’র আন্দোলন কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারি দলে মহা অশান্তি বিরাজ করছে। সময়মত শান্তি সমাবেশে আসে না যেমন দলের নেতাকর্মীরা, তেমনি আসলেও দলের সমাবেশে উপস্থিত হয়ে লঙ্কাকান্ড বাধায়। আর একারণে  নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। 

গত বছর ডিসেম্বরে বিএনপি রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দেয়। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি।  সারা দেশে লোডশেডিংসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ও দলীয় কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির ৫ নেতা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হয় বিএনপির আন্দোলন, সভা সমাবেশ। সে বছরে জুনে বিএনপির চলমান আন্দোলন আরও গতি পায়। ঢাকার ১৬টি সমাবেশের ১৩টিই মোটামুটি শান্তি পূর্ণভাবে শেষ হলে তারপরে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের তোড়জোর চলে। কিন্তু এনিয়ে সরকারি দলে দেখা দেয় তুমুল শঙ্কা ভয়। গণমাধ্যমে ধারণা দেয়া হয় যেন বিএনপি সেই ১০ ডিসেম্বরে সরকার পতন ঘটিয়ে ফেলবে। শুরু হয় সরকারের সর্তক অবস্থান।  বিশেষ করে রাজধানীতে বিএনপি যেকোনো বড়ো সমাবেশের ডাক দিলেই শান্তি সমাবেশের ডাক দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দুর্নাম বাড়ছে শান্তি সমাবেশ নিয়ে

ক্ষমতাসীনদের এমন শান্তি সমাবেশ নিয়ে দেশে বিদেশ নানান ধরনের সমালোচনা পোহাতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। ঢাকায় বিএনপি’র বেশ কয়েকটি কর্মসূচির বিপরীতে নেয়া আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ থেকে ইট পাটকেল থেকে নিয়ে শুরু করে নানাভাবে হামলার অভিযোগ শোনা যায়। এমনো অভিযোগ উঠে যে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও সরকারি দলের সাথে মিশে শান্তি মিছিলের নামে বিএনপি কর্মসূচিতে হামলা চালায়। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে সারা দেশে বিএনপি ও সমমনাদের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচির প্রথম দিনের পদযাত্রায় লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলকর্মী নিহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, শান্তি মিছিল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়িসহ কয়েকটি জেলায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধা, হামলা, গুলি ও টিয়ার শেলের আঘাতে শতাধিক আহত হয়েছে। এতে করে দেশে বিদেশে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যায়। 

এবার শুধু শান্তি নয় উন্নয়ন শোভাযাত্রা

’সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির এ ঘোষণার পরপরই পাল্টা ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শেখ হাসিনাই তাতে নেতৃত্ব দিবেন। আর এরপর থেকে বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে তার বিপরীতে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে ১৮ ও ১৯ জুলাই শান্তিও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। বলা হয় শান্তি মিছিলের পাশাপাশি এটি হবে উন্নয়ন শোভা যাত্রা। বলা হয়ে থাকে শান্তি মিছিলে বিভিন্ন ধরনের অশান্তির কারণে নাম পাল্টিয়ে বলা হচ্ছে এগুলো উন্নয়নের শোভা যাত্রা। তারপরেও জেএসডি সভাপতি আ স আব্দুর রব আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ নিয়ে তীর্ষক মন্তব্য করেছেন। বিরোধী দলের  ডাকা কর্মসূচি দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনি বলেন, ‘২৭ জুলাই বিরোধী দলগুলো মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। তা দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা শান্তি সমাবেশ আহ্বান করে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। কেউ কেউ এমন শান্তি সমাবেশকে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নেয়া শান্তি কমিটির কর্মকান্ডের সাথেও তুলনা করেন। একারণেই এখন শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি উন্নয়ন শোভাযাত্রা নাম দিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে একদিকে বিএনপিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করা যাবে অন্যদিকে সরকারের নেয়া উন্নয়ণ কর্মকান্ড রাজনৈতিকভাবেই তুলে ধরা হবে। 

শান্তি সমাবেশ নিয়ে ক্ষোভ দলের অভ্যন্তরে

এদিকে শান্তি সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগেও এনিয়ে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকিট শান্তি সমাবেশে দলের অভ্যন্তরে গন্ডগোল প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে। সম্প্রতি রাজধানী বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের শুরতে দুই পক্ষের মারামারি ও নেতাকর্মীদেরকে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করতে দেখা গেছে। বুধবার (১২ জুলাই) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয়াকে কেন্দ্র করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সমর্থকদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এসব নিয়ে পরে দলের হাই কমান্ড বেশ বিব্রতবোধ করেন। তাছাড়া শান্তি সমাবেশ যথা সময়ে আওয়ামী লীগ ডাক দিলেও যে যার মতো আসে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা মনে করেন, দলের মধ্যে হাই ব্রীড ঢুকে গেছে। এরা বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, ব্যবসা বাণিজ্যে এলাকায় এলাকায় নিজেদের মধ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে আছে। কিন্তু এরা এখন আওয়ামী লীগের অস্থিত্বের লড়াইয়ে মোটেই দলের ডাকে আসছেন না। এখন শান্তি মিছিল বা উন্নয়ণ শোভাযাত্রা মিছিলে যোগ দিচ্ছে না। ভবিষ্যতে দু:সময় এলে এরা কই থাকবে সে-প্রশ্নটিও ঘুরপাক খাচ্ছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে। তবে দলের একটি বড়ো অংশ মনে করেন যে, ক্ষমতায় থাকায় অবস্থায় সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখনই যারা পিছুটান দিচ্ছে তাদের চেনা যাবে শান্তি মিছিল বা শোভাযাত্রা অংশ নেয়া না নেয়ার মধ্য দিয়ে। তাদের ব্যাপারে দল এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে ত্যাগি নেতারা মনে করেন।

শেয়ার করুন