২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৩৭:৩৫ পূর্বাহ্ন


একের পর এক আগুন
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র
জাডিক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৬-২০২২
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র সিলেটে পারাবাত ট্রেনে আগুন/ফাইল ছবি


বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ থেকে অস্বস্তিকর একটা অবস্থা শুরু হলেই বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তি বা তৃতীয়পক্ষ সুযোগ নিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে এ চিত্র বহু মঞ্চাস্থ হতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক বিভাজন তথা, সুস্থ সংস্কৃতির অভাবে তৃতীয়পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে। বর্তমানে এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে কি-না সেটা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে গত কিছুদিন ধরেই পদ্মা বহুমুখী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন নিয়ে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল অকারণ বাহাস করছে। অতীব দুঃখের বিষয় এ নিয়ে দু’দলেই শিষ্টাচারের বাদ-বালাই নেই। দেশের অতি সাধারণ জনগণ এগুলো পছন্দ করেন না।  

এরই মাঝে সীতাকুণ্ড বিএম আইসিটি টারমিনালে রাসায়নিক বিস্ফোরণ থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, শিল্পকারখানায় (চিপস ফ্যাক্টরি) আগুন, পারাবাত আন্তঃনগর ট্রেনে আগুনের লেলিহান শিখা ৩টি বগি পুড়ে অঙ্গার করে দিয়েছে। তার কিছু পূর্বে নতুনবাজার এলাকার কোকা-কোলা নামক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন লেগে এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে পুড়ে যায়। এরপর রাজশাহী থেকে খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি আন্তঃনগর ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন রেলকর্মীরা। সর্বশেষ যোগ হয়েছে সেই চট্টগ্রামের আরেক ঘটনা। এবারো কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড। গত ১৩ জুন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি ডিপোতে রাখা কনটেইনারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন রাত পৌনে নয়টার দিকে পতেঙ্গা ভারটেক্স কনটেইনার ডিপোতে এ ঘটনা ঘটে। এতে ডিপোর শ্রমিক ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ডিপোতে রাখা একটি তুলাভর্তি কনটেইনারে ধোঁয়া দেখে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সোয়া নয়টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। 

আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও এগুলো কোনো অশুভ মহলের অন্তর্ঘাত তৎপরতা হতেও পারে। হঠাৎ করে এতোগুলো ঘটনা স্বল্পসময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া কাকতলীয় বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ‘ঘরপোড়া গরু ঈশান কোণে মেঘ দেখে ভয় পায়।’ বাংলাদেশে কেন সন্ত্রাস হয়, কাদের পরিকল্পনায় সন্ত্রাস হয়, কাদের প্ররোচতায় দেশের একশ্রেণির মানুষ তৃতীয়পক্ষের সাজানো ফাঁদে পা দেয়। সেটি নিয়ে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বিশদ অনুসন্ধান করতে পারে। এটা এখন খুবই জরুরি।  

কেন হয়েছিল পিলখানা বিডিআর হত্যাকাণ্ড? কারা নেপথ্যে ছিল- হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর লঙ্কাকাণ্ডে? কেন হয়েছিল ২০১৩-১৪ লজ্জাজনক অগ্নিসন্ত্রাস? কারা করেছিল দেশব্যাপী একযোগে বিস্ফোরণ সন্ত্রাস? এগুলোর কি প্রকৃত বিচার হয়েছে? উদ্ধার করা গেছে কি সঠিক ক্লু। নেপথ্যের কারিগরদের কি মুখোশ খোলা গেছে? 

এগুলোর কি সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি বলে আমি মনে করি? বাংলাদেশ অস্থিতিশীল কার সুবিধা এটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন। আমি মনে করি না যে- অগ্নিসন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত তৎপরতার সাথে কোনো দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল জড়িত আছে। প্রশ্ন করতে পারেন, দেশে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল কতটি? দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ আছে, সেটি বোদ্ধা মহলের কাছে সুস্পষ্ট। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রতিটা দেশই তার যেখানে স্বার্থ জড়িত সেখানে প্রধান্য বিস্তারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিগত দিনে এমন বহু নজির প্রকাশ্যেই দেখা গেছে। সেদিকে আর যাচ্ছি না।  

আমি বলছি না, সম্প্রতি সংঘটিত সব দুর্ঘটনা অন্তর্ঘাত। তবে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঘটনাগুলোর সংগঠন সময় বিবেচনায় যদি কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে, তাহলে যথেষ্ট যুক্তি আছে। স্বীকার করি, বাংলাদেশের কোনো স্থাপনা বা কার্যক্রমেই আন্তর্জাতিক মানের অকুপেশন, হেলথ, সেফটি কার্যক্রম অনুসরণ করা হয় না। কারিগরি এবং বাস্তব নিরাপত্তা ভীষণভাবে অনুপস্থিত। দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাবে কেউ দায়িত্ব পালন কওে না। জবাবদিহিতা নেই কোথাও। এককথায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো অরক্ষিত। এমন অবস্থায় যে কোনো সুপ্রশিক্ষিত শক্তির পক্ষে বাংলাদেশে অন্তর্ঘাত তৎপরতা চালানো খুব একটা কষ্টসাধ্য, এটা মনে হয়না।

আসলেই বিষয়টি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষের টনক নড়া উচিত। ঘটনাগুলোকে নিছক নগর রাজনীতির হাতিয়ার বানানো হলে কারোই স্বার্থসিদ্ধি হবেনা। দুর্নীতির কারণে দল, প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। 

সুযোগ বুঝে ওরা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার অধীনে থাকা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান করে ব্যাপক এবং নিবিড় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। সেই সঙ্গে সরকারকে বাহুল্য পরিহার করে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে মনোযোগী হতে হবে।

কিছু বিরোধীদল সরকারের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে নানা কথা বলবে। রাজনীতিটা এমনই। ক্ষমতায় যারা থাকবে তাদের প্রতিপক্ষরা সবসময়ই বাঁকা চোখে দেখবে সবকিছু, এটাই সরকার বিরোধী নীতি। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে সহনশীল হতে হবে।  আগামী নির্বাচনে বিরোধীদলগুলো অবশ্যই অংশ নিবে। না হলে বিরোধী রাজনীতি গতি হারাবে, অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। দেশেও প্রকৃত রাজনীতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।  

রাজপথে সংঘাত, অকারণ রাজনৈতিক বাহাস অব্যাহত থাকলে তৃতীয়পক্ষ সুযোগ নিবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। লাভ হবে সেসব দেশের, সেই শক্তিগুলোর- যারা বাংলাদেশের ওপর প্রভুত্ব করতে চায়। আমি দেশপ্রেমিক জনগণকে সোচ্চার হয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিরোধ করতে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানাবো।


শেয়ার করুন