২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৩৯:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


হিরো আলমের ঘটনায় আসলে দায় কার?
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
হিরো আলমের ঘটনায় আসলে দায় কার? আক্রমণের শিকার হিরো আলম


গুরুত্বহীন ও নিরুত্তাপ অথচ কনস্টিটিউশন অনুযায়ী অপরিহার্য ঢাকা-১৭ সংসদ নির্বাচনের শেষদিকে, ওই নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলমের ওপর দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণ এখন বাংলাদেশ ছাপিয়ে জাতিসংঘ, এমনকি কূটনৈতিক মহলের আকর্ষণের বিষয়। মূলত যারা আক্রমণ করেছিলেন, তাদের অনেকের গলায় শোভা পাচ্ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার কার্ড। দেশে যখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কার অধীনে হবে, সেটা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জনের মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। ঠিক সে মুহূর্তে ঘটলো এমন ঘটনা। সরকার সংবিধানের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার করছে। ওই কথা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলের, ঠিক তখন ঢাকার অভিজাত এলাকার একটি কেন্দ্রে নির্বাচনে আইন রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে দূরত্বে কারা, কী উদ্দেশ্যে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি দ্রুত যথাযথ তদন্তে বের হওয়া উচিত।

এমনিতেই নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করায় সরকারি দলের সদ্য রাজনীতিতে যোগ দেওয়া শিক্ষাবিদ ডক্টর মোহাম্মদ আরাফাতের কোনো যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। নির্বাচন নিয়েও ভোটারদের মাঝে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। তবে কূটনৈতিক পাড়া, সেনানিবাসসহ অভিজাত এলাকা বিধায়, অনেকের দৃষ্টি ছিল নির্বাচন নিয়ে। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য ছিল অগ্নিপরীক্ষা। কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় ঘটনাটি ঘটলো, সেটি বিশদ তদন্তের অবকাশ রাখে। প্রধানমন্ত্রী, বিজয়ী প্রার্থীসহ সব মহল ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে, তদন্ত চলছে। তবে ঘটনা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, জাতিসংঘ ও কতিপয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের যৌথভাবে বিবৃতি প্রকাশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। বিশেষ করে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ওইসব বিদেশিরা যখন অনবরত চাপ দিয়ে আসছে-এমনি মুহূর্তে একটি উপনির্বাচনে এমন ঘটনা সত্যিই ওইসব বিদেশিদের কথা বলার সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে বৈকি এমন ঘটনা।  

নির্বাচনে হিরো আলমের জয়ের কোনো সম্ভাবনা ছিল না এটা বাস্তব সত্য। কারণ দেশের একটি অভিজাত এলাকা, একই সঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট এরিয়াও এর মধ্যে সেখানে হিরো আলমের মতো একজন প্রার্থী সংসদ সদস্য হবেন এটা অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয় মানতেই হবে। ফলে কেউ অমনটা আশাও করেনি সম্ভবত। ফলে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, নিছক একজন প্রার্থী। যেহেতু বিএনপিসহ বিরোধীরা নেই, তাই তার দিকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফোকাস ছিল এই যা। ভোটের দিন ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ অবধি ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বলেই বলা যায়। সংবাদমাধ্যম চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যাচ্ছিল একের পর এক। হিরো আলম নিজের সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিদর্শনের পর বনানীর একটি কেন্দ্রে এসে শেষ বেলায় আক্রমণের স্বীকার হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখে মনে হয়েছে, পুলিশ আন্তরিকভাবে চাইলে বিষয়টা এড়ানো যেতো। কিন্তু কেন সেটা হয়নি এ নিয়ে রাজ্যের প্রশ্ন।

আপাতদৃষ্টিতে দোষীদের সরকারি দলের অ্যাকটিভিস্ট মনে হলেও সন্দেহ, সরকারি দল বা বিচক্ষণ আরাফাত এই ঘটনার সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট ছিলেন কি না। তাছাড়া আরাফাত যেখানে জয় নিশ্চিত দেখছেন, সেখানে আরাফাত বা সমর্থকরা এ কর্ম করে নির্বাচনটা কলুষিত হোক এটা চাইতেই পারেন না। কিন্তু ঘটনা তো ঠিকই ঘটলো। এখন এর দায় কার এ নিয়ে চলছে বিশদ আলোচনা। 

তবে এ ঘটনার মাধ্যমে হিরো আলম উপাখ্যানের আন্তর্জাতিককরণ হয়েছে। বলার আর অপেক্ষা রাখে না, যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সামান্য এক উপনির্বাচনে এমন ঘটনা সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। 

এছাড়া ১০-১১ শতাংশ ভোট প্রদানেও ভোট নিয়ে সাধারণ জনগণের অনাগ্রহ নিদারুণভাবে ফুটে উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকারি দলের প্রার্থী জিতেছেন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় এ এলাকায় কী আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোটের কেন্দ্রে আসাটাকে অযৌক্তিক, নিরর্থক মনে করেছিলেন? কেন তারা আসেননি ভোট দিতে এটাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অভিজাত ভোটার ছাড়াও বেশ কিছু বস্তি এলাকার খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ ছিল। সরকারি দলের ভোট ব্যাংকের আংশিক ভোটার ভোট দিলেও ২০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা। হয়তো মানুষ ভেবেছে মাত্র কয়েক মাসের জন্য নির্বাচন, সরকারি প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে বহুল আলোচিত হিরো আলম নিয়ে আগ্রহ ছিল। তার যা অর্জন করার ছিল তার থেকেও অনেক বেশি অর্জিত হয়েছে দুর্ঘটনার জন্য। 

কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে যেভাবে বিদেশি মহল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটি কূটনৈতিক আদর্শ অনুযায়ী যথাযথ কি না ভেবে দেখা  প্রয়োজন। এটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো দেশের কূটনীতিকরা এমনভাবে খবরদারি করা  নজিরবিহীন। আমি এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া যথার্থ বলে মনে করি। তবে একই সঙ্গে এটাও মনে করি এ ঘটনা কী প্রমাণ করে না যে, এখানে প্রশাসনের উদাসীনতা কাজ করেছিল? তাদের যথার্থ তৎপরতা থাকলে এমন ঘটনা ঘটার অবকাশ হতো না। 

এখন দাবি হিরো আলম ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য এবং দ্রুত আইনি সমাধান। কেননা যে নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমনি মুহূর্তে খোদ রাজধানী ঢাকায় এবং নির্বাচন কমিশনের মূল কার্যালয় থেকে খানিকটা দূরে এমন ঘটনা নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতাও এখানে নিদারুণভাবে ফুটে উঠেছে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন