০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৩৪:২৬ অপরাহ্ন


পেনশন ব্যবস্থা গতানুগতিক ইন্সুরেন্স স্কিমের মতো - বিএসপিএএন
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৮-২০২৩
পেনশন ব্যবস্থা গতানুগতিক ইন্সুরেন্স স্কিমের মতো - বিএসপিএএন


সর্বজনীন পেনশন স্কিম ২০২৩ এর সীমাবদ্ধতা এবং সুপারিশমালা নিয়ে এর সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রোটেকশন অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক (বিএসপিএএন)। গত  বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে অনুষ্টিত    বিএসপিএএন সর্বজনীন পেনশন স্কিম ২০২৩ এর  সীমাবদ্ধতা  এবং সুপারিশমালা  নিয়ে সংবাদক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বিএসপিএএন কো অর্ডিনেটর সংবাদ সম্মেলন আসাদ উদ্দিনে সঞ্চালনায় বিএসপিএএন’র সদস্য সচিব ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রিপন চৌধুরী সীমাবদ্ধতা  এবং সুপারিশমালা নিয়ে বক্তব্য দেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন নাজরিন আক্তার দীনা, সদস্য, বিএসপিএএন স্টিয়ারিং কমিটি, পুলক রঞ্জন ধর, সম্পাদক, বিএপটিইউসি এবং গন্যমান্য সাংবাদিকগণ। 


রিপন চৌধুরী পেনশন স্কিমের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে কোনো অবদান ছাড়া চাকুরী শেষে পেনশন পান সেখানে বেসরকারি চাকুরীজীবী, শ্রমিক বা অন্যান্য নাগরিকগণ কেনো চাঁদার বিনিময়ে পেনশন পাবেন? তিনি বলেন, পেনশন ব্যবস্থা অনেকটা গতানুগতিক ইন্সুরেন্স স্কিমের মতো মনে হচ্ছে। একজন চাঁদা দিলে, টাকা জমা রাখলে তার আলোকে তার জমা করা টাকাটা মুনাফাসহ ফেরত দেয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার একজন নাগরিককে অধিকার হিসেবে কর্মহীন হওয়ার পর সেবাদানের স্বীকৃতি হিসেবে তার ভরণ পোষণের জন্য অবদান রাখবে।


সেটা যতদিন পূরণ না হবে ততদিন পর্যন্ত এটাকে পেনশন বলা যায় না। স্কিমে অংশগ্রহণ করতে হলে পূর্বের সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। যেখানে পেনশন পাবে ৬০ বছর পরে সেখানে বিদ্যমান সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে এবং পেনশনের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে। এদেশের জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ শ্রমজীবী। পেনশন আইনে তাদের জন্য বিশেষ বিধান থাকা উচিত ছিলো, কিন্ত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের গভর্নিং বোর্ডে (পরিচালনা পর্ষদ) সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সংগঠন এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্ব রয়েঝে।


কিন্ত শ্রমিক সংগঠন এবং শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি নেই। সর্বজনীন পেনশন আইন অনুসারে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের সরকারী কর্মচারী ব্যতিত সকল নাগরিক কমপক্ষে ১০ বছর ধারাবাহিক ভাবে নির্ধারীত হারে প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ৬০ বছর অতিক্রমের পরে পেনশন পাওয়ার অধিকারী হবেন। অথচ দেশের ৯০ শতাংশের বেশী শ্রমজীবী মানুষের ধারাবাহিক ভাবে চাকরির সুযোগ না থাকা নিয়মিত আয়ের সুযোগ থাকে না, স্বল্প মজুরির কারণে তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন ব্যায় নির্বাহ করায় কষ্টসাধ্য, তেমন কোনো সঞ্চয় থাকেনা, তাদের পক্ষে ১০ বছর যাবৎ নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হবে দু:সাধ্য। বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরে বেশি বয়সী নাগরিকগণও স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন, মূল আইনে না থাকায় এবং এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।  টানা ৩ মাস চাদা দিতে ব্যর্থ হলে পেনশন স্কিম স্থগিত হবে। এক্ষেত্রে প্রথম মাস বাদে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য চাঁদার ১ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে স্কিম সচল করতে পারবে। এখানে জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি।


পরিচালনা পর্ষদের সভায় য কোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। কাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে তা স্পষ্ট নয় এবং এর জন্য মাপকাঠি কী হবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বিধি ৮ (২) অনুযায়ী চাঁদাদাতা ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে উক্ত স্কিম স্থগিত হবে এবং ৭ বছর পরেও যদি চাঁদা দাতা ফিরে না আসে তবে পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার বলে গণ্য করা হবে। এখানে এই ৭ বছরে ভুক্তভোগী পরিবার কোনো সাহায্য পাবে কিনা সেটার কোনো নির্দেশনা নেই।  বিধি ৮ (৩) অনুযায়ী পেনশনার তার বয়স (৭৫) বছর হবার পুর্বে নিখোঁজ হলে তার নিখোঁজ হবার ৭ বছর পরে তাহা নমিনি পেনশন এর অর্থ বুঝে পাবে। এখানে ৭ বছর দীর্ঘ সময় লেগেছে।

আর এজন্য বিএসপিএএনের পক্ষ থেকে সুপারিশমালা করা হয়েছে। এতে বলা হয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে হলে আগের সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এই শর্ত বাতিল করা উচিত। পরিচালনা পর্ষদে সুশীল সমাজ এবং বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনসমূহের একজন প্রতিনিধিকে অন্তভূর্ক্ত করলে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের সংজ্ঞায় মাসিক আয় ৫ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছে। এটা বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করা উচিত।


শ্রমজীবী মানুষের জন্য টানা ১০ বছর চাঁদা প্রদানের বিষয়টি শিথিল করা উচিত। সরকারি বেসরকারি সকল চাকুরিজীবির জন্য পেনশনের ক্ষেত্রে সাম্য নিশ্চিত করা উচিত। সর্বজনীন করতে হলে সরকারের অবদানের অংশ বাড়ানো উচিত।  সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থপনা আইনের গভর্নিং বোর্ডে (পরিচালনা পর্ষদ) শ্রমিক সংগঠন এবং শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা উচিত। বিএসপিএন থেকে একজন এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহের একজন প্রতিনিধি পরিচালনা পর্ষদে অন্তভূক্তির দাবি জানাই। পেনশনের স্কিমের মেয়াদ ৫০ বছর বয়স থেকে বাড়িয়ে ৬৪ বছর করা উচিত। 


শেয়ার করুন