২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৩৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য পরিবেশ অনুকূল নয়
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য পরিবেশ অনুকূল নয় বিভাগীয় কর্মশালায় মঞ্চে নেতৃবৃন্দ


বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অংশগ্রহণমূলক তথা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। কেননা, ক্ষমতাসীন দল চায় বর্তমান সংবিধানের আওতায় অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অপরদিকে বিএনপিসহ আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর এই জন্য কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্ধারণ করতে হবে। এই সরকার দলীয়, বহুদলীয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক না কি জাতীয় সরকার হবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহই ঠিক করবেন। নির্বাচনকালে অংশীজনদের ভূমিকা

একটি নির্বাচনে অংশীজনদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশীজনদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারিবৃন্দ, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক, গণমাধ্যম, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম ও ভোটাররা রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কোন অংশীজন কি কি ধরনের ভূমিকা পালন করবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্ধারণ করতে হবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে বিভাগীয় কর্মশালায় এ আশঙ্কার বিষয়টি উঠে আসে।  দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে পরিচালিত ‘ভোটার অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড অ্যাকটিভ সিটিজেনারি’ প্রকল্পের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে বিভাগীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএ অডিটরিয়ামে উক্ত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজন-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন-এর নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক  সোহরাব হাসান, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) স্বপন কুমার সাহা, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর মিপস প্রকল্পের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জনাব শরিফুল হক। 

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৪৭ সালেও আমরা একবার স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেনি এবং শোষণ ও বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ঠ করে রেখেছিল। এই শোষণ-বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ছয় দফার প্রথম দফাই ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদ গঠন করা। এরপর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অর্থাৎ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারিনি। নব্বইয়ের দশকে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্ত বর্তমানে সেই ব্যবস্থা আর নেই। তবে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সরকার যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আন্তরিক ও সহিষ্ণু হয়, তাহলে তার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আগে আমাদের পরিবার ও সমাজে পরমত সহিষ্ণুতা ছিল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। একটা সমঝোতার পরিবেশ ছিল। এখনও বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে সমঝোতা আছে। কিন্তু সমঝোতা নেই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আমি মনে করি, কমনসেন্স ও কতগুলো সাধারণ মূল্যবোধ না থাকলে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমি মনে করি, নাগরিকরা সচেতন ও সোচ্চার হলে এবং সক্রিয় নাগরিকের সংখ্যা বাড়লে দেশে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির পথ সুগম হবে।’

সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমরা নাগরিকরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু পাঁচ বছর যদি দেশে সুশাসন থাকতো, রাষ্ট্র পরিচালনায় যদি সব দলের সম-অংশগ্রহণ থাকতো, তাহলে নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো সমস্যা তৈরি হতো না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহাবস্থান নেই, সহিষ্ণুতা নেই, ক্ষমতাসীন দলই সর্বক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তাই নির্বাচনে বিজয়ী দলকে এই অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল মত ও দলের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং বিরোধীদের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চাই যেখানে রাষ্ট্র কোনো বিশেষ দলের হবে না, রাষ্ট্র হবে সকল নাগরিকের।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই। এজন্য পরিবার থেকেই গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে, প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্রে কিছু দুর্বলতা থাকলেও গণতন্ত্র থাকলে একটা জবাবদিহিতা থাকে, জনগণ ক্ষমতায়িত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্তঅ থাকলে সকল মতের প্রতিফলন ঘটে, ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। এজন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) স্বপন কুমার সাহা বলেন, ‘প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন উপলক্ষে সংঘাত দেখা দেয় এবং বিদেশিরা আমাদের এখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চালায়। আমরা মনে করি, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এ থেকে উত্তরণ ঘটানো দরকার।’ 

মূল প্রবন্ধ (প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ) উপস্থাপন করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪-এর মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা চাই এই নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিন্ত বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতা অংশগ্রহণমূলক তথা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। কেননা, ক্ষমতাসীন দল চায় বর্তমান সংবিধানের আওতায় অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অপরদিকে বিএনপি-সহ আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন।

এ নিয়ে রাজপথে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে, যা কারোই কাম্য নয়।’ দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘একটি অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও  পারস্পরিক সমঝোতা। রাজনৈতিক দলসমূহকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমঝোতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এবং সমঝোতাসূত্র নির্ধারণ করতে হবে। এই সমঝোতা স্মারকটি ‘জাতীয় সনদ’ নামে অভিহিত হতে পারে। এই নাগরিক সনদে যা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

নির্বাচনকালীন সরকার

কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্ধারণ করতে হবে। এই সরকার দলীয়, বহুদলীয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক না কি জাতীয় সরকার হবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহই ঠিক করবেন; দুই. নির্বাচনকালে অংশীজনদের ভূমিকা: একটি নির্বাচনে অংশীজনদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশীজনদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনী দায়েত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থক, গণমাধ্যম, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম ও ভোটাররা রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কোন অংশীজন কি কি ধরনের ভূমিকা পালন করবে, তা রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্ধারণ করতে হবে। দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা একটি জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহ সমঝোতায় আসুক এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হোক। একইসাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক, আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্রগঠন তথা রাজনীতিতে পারস্পরিক সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নবযাত্রা সূচনা হোক।’

শেয়ার করুন