৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:২৯:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


ভার্চ্যুয়াল সভায় নেতৃবৃন্দ
গ্রেটা থুনবার্গ বললেন বিশ্বে ক্ষমতাধর যারা তারাই ধ্বংস করছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
গ্রেটা থুনবার্গ বললেন বিশ্বে ক্ষমতাধর যারা তারাই ধ্বংস করছে ’বাংলাদেশ ইয়ুথ কপ ২০২২’ শীর্ষক ভার্চুয়াাল প্রি-কপ সম্মেলন


আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং যুব আইকন গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, “এই বিশ্বে ক্ষমতাধর যারা তারাই বিশ্বকে ধ্বংস করছে। বৈশ্বিক স্তরে জলবায়ু আলোচনা এবং তরুণদের কণ্ঠস্বরকে উৎসাহিত করার জন্য একশনএইড বাংলাদেশ এবং ব্রাইটার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী ’বাংলাদেশ ইয়ুথ কপ ২০২২’ শীর্ষক ভার্চুয়াাল প্রি-কপ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

আসন্ন কপ সম্মেলনে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করার আহ্বান জানিয়ে গ্রেটা থুনবার্গ আরো বলেন, গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন সীমিত। তারা উদ্যোগী হলে কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা অবিলম্বে তাদের নির্গমন কমিয়ে দিত। কিন্তু তারা উদ্যোগী নন বরং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলি মন্থর গতিতে বাস্তবায়ন করছে শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সুবিধা, ব্যবসা এবং অতিরিক্ত মুনাফার জন্য।’’

গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, “আমরা যদি আজকের মতো চলতে থাকি, তাহলে কপ-২৭ সম্মেলন তাদের জন্য বিশ্বকে দূষিত করার আরেকটি সুযোগ হবে। আমরা এটি আরো একবার ঘটতে দিতে পারি না", তিনি যুক্ত করেন।

সম্মেলনে ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “এই বাংলাদেশ ইয়ুথ কপ নিশ্চই জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান খুঁজবে। বাংলাদেশের তরুণরা সমগ্র বিশ্বের কথা ভাবছে, এটি আনন্দের। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সংকট দেখছি। কিন্তু বাস্তবে আমরা এখনো এর কোনো টেকসই সমাধান খুঁজে পাইনি। জলবায়ু পরিবর্তন হলো তরুণদের একটি এজেন্ডা যার সমাধান তরুণদের দ্বারা এবং তরুণদের জন্যই হবে। তরুণদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত সময় এসেছে। তরুণরা জলবায়ু সমস্যা সমাধানের ফ্রন্ট লাইনার হলেও প্রায়শই নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তাদের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয় না। তবে আমরা তরুণদের কণ্ঠস্বর এবং তাদের সুপারিশগুলিকে কপ সম্মেলনে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি এবং তাদের সাথে ক্রমান্বয়ে সম্পৃক্ত হচ্ছি'' 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এর ইমেরিটাস অধ্যাপক ডক্টর আইনুন নিশাত বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন আজকের সমস্যা নয়; আগামীকালের সমস্যা নয়; পরশুর নয়। ৩০ বছর পরে হয়তো আমরা এখানে থাকব না, তাই এটি আপনারই সমস্যা। সঠিক দিক ও পরিধিতে কাজ করার জন্য তরুণদের সমস্যাটি বুঝতে হবে। বহুব্যবহার, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্ব্যবহার এই তিনটি বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে নিঃসরণ হ্রাস এবং প্রশমনে উপকৃত হতে পারে। তরুণরা টেকসই উন্নয়ন এবং জলবায়ু ন্যায় বিচারের মধ্যে যোগসূত্র বোঝে। তারা টেকসই সমাধানের জন্য উদ্ভাবক হিসাবে অগ্রগণ্য হয়ে উঠেছে।

এই প্রি-কপ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণরা ৬ দফা দাবি পেশ করেন। তারা বিশ্বনেতাদের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়রর দাবি জানায়। দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে - গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা, জীবাশ্ম পোড়ানো বন্ধ করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান, উন্নত দেশগুলির বাসিন্দাদের জলবায়ু রক্ষার দায়িত্ব প্রদান, জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করাসহ অভিযোজনের জন্য প্রযক্তিগত সহায়তা।

সম্মেলনে তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জান্নাতুল মাওয়া বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়েছে যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নারীরা। নারীর জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে নারী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে,  এই দুটি বিষয় পারষ্পারিক সম্পর্কযুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত। গত কপ ২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের নিয়ে বিশেষ আলাপ ও তাদের অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। আগামী সম্মেলনে এই বিষটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।    

বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে জাতিসংঘের নতুন আবাসিক সমন্বয়কারী জিন লুইস বলেন, “ আমরা যখন কথা বলছি তখনও জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। প্রশমন এবং খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রচুর পরিকল্পনা এবং জায়গা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তরুণদের কণ্ঠস্বর যেন প্রতিফলিত ও সমন্বিত হয় । এখন আলোচনার চেয়ে পদক্ষেপ জরুরি। 

প্রফেসর সালিমুল হক, আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক বলেন, ‘‘কপ-২৭ সম্মেলন থেকে বেশি আশা করা ঠিক হবে না। বিশ্বের নেতারা সম্মেলনে একত্রিত হন, কিছু বিষয়ে আলোচনা হয় কিন্তু কিছু ছোট উদ্যোগ ছাড়া বড় কোন পদক্ষেপ নেন না। সুতরাং, শুধুমাত্র কপে  অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গতকালের জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা আজকের বা আগামীকালের জন্য একরকম নয়। আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লস এন্ড ড্যামেজ যুগে প্রবেশ করেছি। 

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রোগ্রাম পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার বলেন, সঠিক তথ্য ও বিশ্লেষণের অভাব আমাদের জলবায়ু নীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলে। আমাদের এই শূন্যতা পূরণ করতে হবে। পুরো বাজেট প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে ব্যর্থ। তাই নেতৃত্বের প্রশ্নে তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।”

উদ্বোধনী অধিবেশনে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি বলেন, “যদিও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছি, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের স্বার্থ অভিন্ন। 

একশনএইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “বৈরী আবহাওয়া এবং আকস্মিক জলবায়ু পরিবর্তন তরুণদের ঝুঁকিতে ফেলেছে; তাই, তরুণরা বুঝতে চায় কী ঘটছে, কীভাবে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে পারে এবং কীভাবে তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের উদ্বেগগুলি কপ-২৭ সম্মেলনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশে ইয়ুথ কপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতীয় পর্যায়েরর নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে ।

শেয়ার করুন