২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:০৬:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


দেশকে ফজলুল হক মিলন
সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৩
সরকার ও নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে না ফজলুল হক মিলন


ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন কোনো দায় দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে না। কারণ তাদের দেশ ও জাতীর প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কারণ এই ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিজেরা নিজেরা মিলে একটা পিকনিকের মতো সরকার গঠন করে নিয়েছে। তাদের সাথে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো ধরনের মানুষের সমর্থন নেই। সরকার বিএনপি’র ভয়ে একটা ভীতিকর অবস্থায় আছে।আমেরিকার থেকে প্রতাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ফজলুল হক মিলন এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: সামনে দেশে একটা জাতীয় নির্বাচন। এর আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৫টি সিটিতে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে আপনারা সরকারের অধীনে নির্বাচন অংশ নিতে আগ্রহী না।  কিন্তু নির্বাচন কমিশন বলছে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তারা জাতির কাছে একটি ভালো নির্বাচনের আয়োজন করে দেখিয়ে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। কিন্ত এতো সব আশ্বাসের পরও আপনারাও এই নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ভবিষ্যত আসলে কোন দিকে যাচ্ছে। 

ফজলুল হক মিলন: দেশের ভবিষ্যতের ব্যাপারে বলার আগে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে কিছু বলে নেই। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? কে বলছে? সরকার ও নির্বাচন কমিশন? এইতো? 

দেশ: হাঁ। এই ব্যাপারেই আপনাদের ..

ফজলুল হক মিলন:  শেনেন বহু বছর যাবত এই ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কোনো কথা বা আশ^াসের প্রতিফলিত হয়েছে? জাতি দেখেছে? (সাংবাদিককে লক্ষ্য করে পাল্টা প্রাশ্ন)

দেশ: .....নিরবতা...

ফজলুল হক মিলন : বিগত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কোনো কথা বা আশ্বাসের প্রতিফলিত হয়েছে?  সম্পূর্ণ উল্টা হয়েছে। আসলে তাদের কথা বার্তায় কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। আর এই ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন কোনো দায় দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে না। কারণ তারা দেশের ও জাতীর প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কারণ এই ক্ষমতাসীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন নিজেরা নিজেরা মিলে একটা পিকনিকের মতো সরকার গঠন করে নিয়েছে। তাদের সাথে জনগনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো ধরনের মানুষের সমর্থন নেই। এদের কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। কোনো দল মানুষ .. আপনারা সাংবাদিকরাসহ সকলেই জানেন এ সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। অতএব তারা কি বললো না বলল সেটা বড়ো কথা না। একটা পরীক্ষিত মিথ্যা অসত্যের উপর দাঁড়িয়ে এ সরকার বারবার তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করেছে, বড়খেলাপ করেছে জাতির সাথে। গণতন্ত্র ধবংস করে দিযেছে। তাদের গায়ে গণতন্ত্রের লেবাস পর্যন্ত নেই। কোনো ধরনের আস্থা নেই তাদের প্রতি। তাই তারা কি বললো না বললো তাতে আমাদের কিছু যায় আছে না। এ সরকার বিদায় নেয়ার পরে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যম যদি একটা নির্বাচন হয় তবেই জনগণ তাদের মনের মতো মানুষকে ভোট দিতে পারবে। তাহলে দেশের ও জনগণের স্বার্থে একটা সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। দেশের উন্নয়ন ও শান্তির স্বার্থে। সে সরকার পরিচালিত হবে।  আমরা দেশে সেধরনের নির্বাচন চাচ্ছি।  তাই তারা কি বললো না বললো..তা আরা শুধু বিশ্বাস করি না-এটা কেবল সত্য না এদেশের পাশাপাশি বিশে^র কোনো মানুষ বিশ্বাস করে না। সঙ্গত কারণে দেশটাকে তারা একটি শ্রেণীভুক্ত করে ফেলেছে। দেশের জনগণ একদিকে আর তারা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা একদিকে। দেশের গণতন্ত্র সার্বভৌমত্ব একদিকে যেমন ধ্বংস করেছে অন্যদিকে জনগণের নিরপত্তাও ধ্বংস করেছে তারা। অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ধ্বংস করেছে তারা। এখনো গোয়াতুর্মি জিদ ধরে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। দেশকে একটি অনিশ্চয়তা আর অরাজকতার দিকে ঠেলে দেয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। সেদিকেই দেশকে তারাই নিয়ে যাচ্ছে। 

দেশ: আপনারাসহ প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দল মিলে আপনাদের মতে দেশে একটি সুষ্ঠু বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কিন্ত আপনাদের এই আন্দোলন কি সরকারকে কোনো প্রভাবিত করেছে। অন্যভাবে বললে বলতে হয় সরকার কি আপনাদের আন্দোলন বা দাবিকে তোয়াক্কা করে?

ফজলুল হক মিলন: তোয়াক্কা করে না এটা তাদের স্বভাবগত চরিত্র। আর ভয় পাচ্ছে কি-না তাতো আপনারা নিজেই জানেন। জনগণ একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে তখন পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করে, শান্তিপূর্ণ আবস্থানর বিপরীতে অবস্থান নেয়, আগের দিন মানুষকে মিথ্যা মামলায়  গ্রেফতার করে আবার যে মানুষ মরে গেছে তার বিরুদ্ধেও মামলা দেয়। তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় জড়িত করে। আাবার আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মুক্তি মিললেও জেল গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। এমনও দেখা গেছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে কোনো নেতাকর্মী দুইজন বা পাঁচজন একত্র হলেও তাদেরকে গ্রেফতার করে মামলা দেয়। তাই সরকার ভয় যে পেয়েছে-এটাতো সত্য। সরকার বিএনপি’র ভয়ে একটা ভীতিকর অবস্থায় আছে। এই ভয়ের কারণে তাদের অপকর্মের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। 

দেশ: আপনারা কিভাবে ভাবেন যে সরকার আপনাদের কর্মসূচি বা হুঙ্কারে ভীত হয়ে আছে। আপনােেদর সমাবেশে তো বিএনপি সমর্থিতরাই আছে। সর্বস্তরের জনগণকে কি  দেখেছেন আপনাদের সমাবেশে উপস্থিত হতে? তাহলে না হয় বলা যেতো সরকার ভয় পেয়েছে..কি বলেন আপনি? আপনাদের সমাবেশেতে কেবল বিএনপি’র নেতাকর্মীরাই থাকে। 

ফজলুল হক মিলন: বিএনপি’র ব্যানারে সমাবেশ করি আমরা। সেহেতু সেখানে বিএনপি’র নেতাকর্মীরাই থাকবে। কিন্তু শোনেন বিএনপি’র সমাবেশে কেবল বিএনপিরই না সর্বস্তরের জনগণই উপস্থিত হয়। সেধরনের তথ্য দিয়েতো আপনারা সাংবাদিকরাই রিপোর্ট করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমেই আপনারাই ছবিসহ নিউজ করেছেন যে এক লোক কলার ভেলায় দিয়ে নদী পার হয়ে বিএনপি’র সভা সমাবেশে এসেছে। চিড়া-মুড়ি নিয়ে বিশ ত্রিশ মাইল হেঁটে এসে কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে। সমাবেশে যোগ দিতে মাঠে ঘুমিয়ে থাকে তার তো বিএনপিতে প্রাথমিক সদস্য পদও নেই। আপনি খুঁজে দেখেন এমন অনেক লোক বিএনপি’র সভা সমাবেশে আসে যাদের কোনো পদ নেই। তাদেরও বিএনপি’র সদস্যপদ নেই।  তাই ও লোককেতো আমরা ভাড়া করে সমাবেশে আনিনি। ফোন করেও আনা হয়নি। শত প্রতিকূল অবস্থাতেও নারী পুরুষ চিড়া মুড়ি নিয়ে এসব সমাবেশে অংশ নিয়েছে। ‘সমাবেশে আগেই রাতে এসে উপস্থিত হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় আমরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছি তা শুধু আমাদের একারই না। দলীয় কোনো দাবি না। এটা সর্বস্তরের জনগণেরই প্রাণের দাবি। এই দাবি জনগণের দাবি। এই জন্যই এতে তারা যোগ দেয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। জনগণ বুঝতে পেরেছে যে আমাদের আন্দোলনের সাথে তাদের দাবির সম্পৃক্ততা আছে। আমরা যে মেহনতি মানুষের জন্য লড়াই করছি। তাদের স্বার্থেই আন্দোলন করছি। জনগণও বুঝে মেহনতি মানুষের দাবি নিয়েই বিএনপি আন্দোলন করছে। এর উদাহরণ হচ্ছে শত শত বাধা হয়রানিও পরও লাখ লাখ মানুষ বিএনপি’র যেকোনো সমাবেশে বা ডাকা কর্মসূচি যোগ দিতে এসেছে। 

দেশ: আমি ব্যক্তিগতভাবেও দেখেছি আপনিও দেখেছেন কিভাবে দেশে ৯০’এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জনগণ ঝাপিয়ে পড়েছিল। সেদিন আপনিও একিইভাবে স্বৈরাচারের লাঠি গুলি টিয়ারগ্যাস উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছিলেন। এখন জনগণকে তো তেমনভাবে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। আপনারাও কি সেধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছেন। 

ফজলুল হক মিলন: শোনেন একটি ফ্যাসিবাদি সরকার আগ্রাসনের সর্ব্বোচ পর্যায়ে যায় তখন এই ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন বাক তৈরি করে । আপনি ঠিকই বলেছেন আমি এগারবার জেল খেটেছি। মাকে হারিয়েছি। এবং শত শত পরিবার আজকে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে স্বজনহারা। গুম হয়ে গিয়েছে হত্যা করা হয়েছে। আছে জেলখানায় বন্দি। এমন লাগাতার নির্যাতনের পরেও মানুষ সভা সমাবেশে যোগ দিয়েছে। এই যে গত শনিবারের পল্টনের সমাবেশে দেখেন কিভাবে জনগণ যোগ দিয়েছে। কাউেকে ফোন দিতে হয়নি। অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষ বিএনপি’র সমাবেশে ঠিকই উপস্থিত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় ঘোষণা দেয়াও হয়নি। শত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষ এগিয়ে আসছে ভোট গণতন্ত্রের সংগ্রামে যোগ দিতে। তারা যেভাবে মিছিল মিটিংএ হামলা চালায়, গুম করে, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়া হামলা করে এমন কি টং দোকানও বন্ধ করে দেয়া এই ফ্যাসিস্ট সরকার। এতে কিছুর পরও মানুষ ত্যাগ স্বীকার করে অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে সরকারকে উৎখাত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে একটি কল্যানমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের যে ডাক এবং এর পাশাপাশি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্ত করার যে অভিপ্রায় ও তার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির যে পথ তা তৈরিতে আমাদের যে প্রচেষ্টা তা অব্যাহত আছে, এবং থাকবে। আর এজন্য আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি।

শেয়ার করুন