০১ মে ২০১২, বুধবার, ০২:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


প্রেক্ষাপট দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন
বিতর্ক বাড়ছে ইভিএম নিয়ে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৫-২০২২
বিতর্ক বাড়ছে ইভিএম নিয়ে


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনহবে ২০২৩ এর শেষ অথবা ২০২৪ এর একেবারেই সূচনায়। অর্থাৎ এখনও দেড় বছরের বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে দেশে চলমান অনেক ক্রাইসিস। নির্বাচন কার অধীনে হবে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্বের পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশগুলো। যাদের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা অনেক। অথচ দেশে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সখ্যতা নেই এক যুগের উপরে। এক টেবিলে বসে সমাঝোতার কোনো লক্ষণই নেই। অথচ একটা সমঝোতা করা ক্ষমতাসীনদের উপর অনিবার্য ইস্যু হয়ে আছে। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃংখলা বাহিনীর একটা সংস্থার উপর মার্কিন স্যাঙ্কশন। এরবাইরেও অনেক কিছু ভাসছে বাতাসে। উপমহাদেশের রাজনীতিটাই এখন টালমাটাল। পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তন মুহূর্তে। বিনাযুদ্ধে,বিনা রক্তপাতে। শ্রীলঙ্কার ঘটনাগুলো আলোড়ন তুলছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করেও রেহাই নেই। মন্ত্রীদের দূরাবস্থার চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। সব মিলিয়ে একটা ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতি সর্বত্র।

এমনি একটি মুহূর্তে, দেড় বছরের বেশি সময় পর যে নির্বাচনটা হবে সেটা কোন পদ্ধতিতে হবে সরাসরি ব্যালট পেপারে সিল নাকি ইভিএম এ। এ নিয়ে এখন চরম বিতর্ক বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এক সভায় বলেছেন, আগামী নির্বাচন ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিষ্টেমে হবে) হবে। কারণ দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। সবকিছুতেই এর ছোয়া থাকা উচিৎ। এ ছাড়াও এটা একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। যদিও বিরোধী দল বলছে এ সিস্টেম বিশ্বে বাতিল হয়ে গেছে। এর উপর মানুষের আস্থা নেই। এর মাধ্যমে কারচুপি হয়। ডিজিটাল কারচুপি। অর্থাৎ এ সিস্টেমটাতে যে নিয়ন্ত্রণ করবে তার ইচ্ছার উপরই ভোট হবে। কে কোথায় ভোট দিল সেটা মুখ্য না। এমন অনেক কথা। 

নতুন নির্বাচন কমিশনও এ পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। তাছাড়া দেশে যে পরিমাণ ইভিএম মেশিন রয়েছে, তাতে ১৩০ আসনে ভোট সম্পাদন  সম্ভব। ৩০০ আসনে ভোট অনুষ্ঠানের ক্যাপাসিটি নেই। এমন অনেক কথা। 

আসলে কী হচ্ছে? সত্যি সত্যিই কী  ইভিএমে ভোট। যদি হয়ও সেটা তো সব দলের ইচ্ছা অনুসারে। তাছাড়া এটা নিয়ে এত আগে হৈ চৈ’রই বা কী আছে। কেন এটা নিয়ে বিতর্ক ওঠা। এমনিতেই অনেক ইস্যু বিদ্যমান। ভোজ্য তেল নিয়ে তোলপাড়। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রেক্ষাপটে জ্বালানী তেল,গ্যাসের দাম বৃদ্ধিরও খড়গ ঝুলছে। মানুষ অস্থির। নিত্যপণ্যের উর্দ্ধমূল্যে মানুষ দিশেহারা। সে মুহূর্তে ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে কেন এমন বিতর্ক, বোধগম্য না। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,‘ ইভিএম তো দূরে থাক, আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আগে তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে তার পর অন্য কথা।’ 

এ ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আকাশে ঘনঘটা। সরকার আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপির হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছে। প্রথমবার বিনা ভোটে, দ্বিতীয়বার রাতের ভোটে আর এবার ইভিএমে। এতে ভোট যাতেই দেন ভানুমতির খেলায় ভোট গিয়ে নৌকাতে পড়বে।’

গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা ও মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

এ অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘ভোটচুরি, গুম, হত্যা আর কত অপরাধের কথা বলতে হবে? আপনারা সামনে বা পেছনের দরজা না, জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকেছেন। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে এই সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করতে হবে।’ 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছেন তাদের অপরাধ কী? বিদেশে বাঙালিদের লাশ পড়ে থাকে, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় কী করে? চলে যেতে বলছি কেন? ১৩ বছর ধরে বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছেন। এবার মেহেরবানি করে নামেন। এই সরকারের অধীনে কেউ নির্বাচনে যাবে না। যারা এর অধীনে নির্বাচন করবে তারা জাতীয় বেইমান।’

এদিকে ইসি সূত্র থেকে জানা গেছে, এক দিনে ৩০০ সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট করার মতো সক্ষমতা এখন পর্যন্ত ইসির নেই। বর্তমানে ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম দিয়ে ১০০ থেকে ১১০ আসনে ভোট করা সম্ভব। তবে এই ইভিএম সব আসনে ব্যবহৃত হলে একাধিক দিনে ভোট আয়োজন করতে হবে।

ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ৩০০ আসনে একসঙ্গে ইভিএমে ভোট করতে হলে আরও প্রায় ৩ লাখ ইভিএম প্রয়োজন হবে। তাঁরা মনে করছেন, যথাসময়ে সিদ্ধান্ত হলে সারা দেশে আগামী নির্বাচন ইভিএমে করা সম্ভব হবে। 

স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যম ইসির সূত্র থেকে জানিয়েছে,  ২০১৮ সাল থেকে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক একটি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের অধীনে দেড় লাখ ইভিএম সংগ্রহ করেছে ইসি। আগামী বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা আছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। একই খরচ বিবেচনায় নিলে তিন লাখ নতুন ইভিএম সংগ্রহ করতে ইসিকে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করতে হবে। অবশ্য নতুন ইভিএম কেনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসি কোনো আলোচনা করেনি। 

সংবাদ মাধ্যমটি আরো জানায়, যদিও নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে ভোটারদের, বিশেষত বয়স্ক ভোটারদের প্রযুক্তিভীতি, দক্ষ জনবলের অভাব, কিছু ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলা ও যান্ত্রিক ত্রুটি। আবার সংসদ ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে কাগজের ব্যালটের তুলনায় ইভিএমে ভোট পড়ার হারও কম দেখা গেছে।


শেয়ার করুন