০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৬:১৮ অপরাহ্ন


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আ.লীগ


নির্বাচন হিসাবে প্রমাণ করতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য দলটি দেশের ভেতরে যেমন বিভিন্ন ধরনের কৌশল নিয়েছে। তেমনি নির্বাচন আয়োজনের আগে এবং পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব করা হচ্ছে দেশে-বিদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হাত থেকে রক্ষা পেতে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

সর্বশেষ তথ্যমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা) ৩০০ সংসদীয় আসনে দলীয় প্রতীকে একই সংখ্যক প্রার্থী দিয়েছে। দুই দলই ২৯৮ জন করে প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে ২৯ দল থেকে ১ হাজার ৯৬৫ জন ও স্বতন্ত্র ৭৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে মোট ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্যদের কারও কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বাছাইয়ে সারা দেশে যত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মনোনয়ন বাছাইয়ের পর বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ জন। অন্যদিকে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ বাতিল হওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল আবেদন শুরু করেছেন। গত ৫ ডেসেম্বর মঙ্গলবার ৪২ জন প্রার্থী আপিল আবেদন জমা দিয়েছেন। ঘোষিত তফসিল মতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি। 

সমঝোতা হচ্ছে গোপনে গোপনে..

যেভাবেই হোক না কেনো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতেই হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এখন ঘনিষ্ঠ মিত্র জাতীয় পার্টি। এছাড়াও রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেধীন ১৪। এই জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের শরিকদের কারো সাথে এখন প্রকাশে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার মাধ্যমেই ভোট করার সিদ্ধান্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার রাতে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে বৈঠকের একটি সুত্র জানায়, কোন কোন আসনে ছাড় দেবে ক্ষমতাসীন দল, সে ব্যাপারে জানানো হয়নি। তবে পরের দিন ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবারে এই ব্যাপারে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি গণমাধ্যমে জানান, আসন ভাগাভাগি নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে দুই-এক দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হবে। তবে এক্ষেত্রে একটি প্রশ্নবোধক রেখে দেয়া হয়েছে। তা হলো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ১৪ দলের শরিকদের জনপ্রিয়দের মূল্যায়ন করা হবে। নির্বাচনে জেতার মতো প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সমঝোতার ব্যাপারে কোনো বৈঠক বা আলোচনার খবর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শোনা যায়নি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায় যে, আওয়ামী লীতের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক কিংবা জাতীয় পার্টির সাথে কোনো ধরনের সমঝোতার বিষয়টি ক্ষমতাসীনরা কৌশলেই প্রকাশ্যে বা জনসমক্ষে আনেত চায় না। ক্ষমতাসীনরা মনে করে, এমনিতেই দেশে বিদেশে বাংলাদেশের এই দ্বাদশ নির্বাচনের ব্যাপারে কঠোর দৃষ্টি রয়েছে। নির্বাচনে আগেই এই ধরনের সমঝোতা বা আলাপ-আলোচনা চলে এলে আবারো যে একতরফা বা পাতানো বা সাজানো নির্বাচন হয়েছে বলে ধরে নেয়া হতে পারে। আর একারণে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনাদের বাদ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি যেনো প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে তীক্ষè নজর ক্ষমতাসীনদের। একারণে ডাকঢোল পিটিয়ে এবারে আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে সমঝোতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। দেখানো হচ্ছে নির্বাচন হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক। 

ভোটার আনার কথা বলে পরে অস্বীকারের নেপথ্যে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রমাণে আরেক কৌশল হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার উপস্থিত করানো। এর পাশাপাশি বিএনপি’র অংশগ্রহণ ছাড়াই যে নির্বাচনে পুরো দেশে উৎসবের আমেজ হচ্ছে তা প্রমাণ করা। আর এধরনের কর্মকাণ্ড সূচারুভাবে সম্পন্ন করতে প্রার্থীসহ তৃণমূলে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দেওয়া হয়েছে দিকনির্দেশনা। নির্দেশ দেয়া হচ্ছে সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রমাণ করতে হবে। আর এভাবে ভোটার এনে নির্বাচনকে দেশে বিদেশে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণের খবর গণমাধ্যমে চলে আসলে বিব্রতর অবস্থায় পড়বে ক্ষমতাসীনরা। তাই সুর পাল্টান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিএনপি হরতাল, অবরোধ, আগুন সন্ত্রাস করে জনগণকে নির্বাচনবিমুখ করতে পারেনি। জনগণ পুরোপুরি নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছেন। এ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হবে। দাবি করেছেন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ। 

আন্তর্জাতিক মহল ম্যানেজে প্রাণান্তকর চেষ্টা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে এবং হবে এমনটা প্রমাণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী বিভিন্ন ধরনের লবি ম্যানেজ করে চলেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি হচ্ছে দিল্লিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এমন ৯০টি দেশের মিশনপ্রধানদের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করার ঘটনাটি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করে আসেন। পরেরদিন ২৫ নভেম্বর শনিবার এ বিষয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশে নিযুক্ত অনাবাসী মিশনের প্রধানদের (প্রায় ৯০টি মিশন) ব্রিফ করেন। ব্রিফিং সেশনে বিপুলসংখ্যক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। যদিও বলা হয় যে পররাষ্ট্র সচিব কূটনীতিকদের বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে নির্বাচনে আগে ও পরে পশ্চিমারা বিশেষ করে আমেরিকাসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেভাবে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে নির্বাচন প্রশ্নে চেপে ধরেছে তার থেকে মুক্তি পেতেই এমন ব্রিফিংটি দিল্লিতে করা হয়েছে তা স্পষ্ট। এর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দেশের সাথে একটি প্রতিবেশি দেশের বিভিন্ন ধরনের সহায়তায় আন্তর্জাতিকমহলের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছে, রাখছে সর্তক দৃষ্টি। লক্ষ্য একটাই তা হলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা। 

দেশের ভেতরেও বসে নেই সরকারের কৌশল

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন খেলাফতে রাব্বানী বাংলাদেশ এবং নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের নেতারা। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন তারা। খেলাফতে রাব্বানীর নেতৃত্ব দেন মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী বাংলাদেশ এবং নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন আনওয়ারুল হক।

থেমে নেই ইসি..

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সব্বোপরি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসাবে প্রমাণ করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি)ও বসে নেই। তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। বলা হয়েছে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসিরা বর্তমান কর্মস্থলে ৬ মাসের বেশি সময় আছেন, তাদের অন্য জেলায় বা অন্য কোনো থানায় বদলির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। দেশের ৬৪ জেলায় ৬০০টির বেশি থানা আছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে ইসি এসব থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়। যদিও নির্বাচন কমিশন (ইসি)’র এসব পদক্ষেপকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বন্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার করুণায় পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে অটোপাস এবং ২০১৮ সালে নিশিরাতের ভোট ডাকাতির পর এবার ভাঁওতাবাজির নামে সিলেকশন করা হচ্ছে। জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে ৭ জানুয়ারি ভোটের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা হবে। রিজভি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইলেকশনের দিন রাতে পাঠ করা হবে গণভবনের তালিকা। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলির ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুখরোচক খবর বেরোয়। এতে বলা হয় খোদ ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ১৩ থানার ওসি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঘুরেফিরে ডিএমপিরই বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশ্ন শেষ রক্ষা কি হবে?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সব্বোপরি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসাবে প্রমাণ করতে হেন কাজ নেই যে করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসাবে প্রমাণ করতে কি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সফল হবে? প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে? কারণ যেখানে খোদ পশ্চিমারা এতো কিছুর পরও তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপি ২ ডিসেম্বর শনিবার বৈঠক করেছে । বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে নজরুল ইসলাম খানসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল ইইউয়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয় সে-ই বৈঠকে বিএনপি নেতারা ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছে যে ‘গায়েবি’ মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং সারা দেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন, গভীর রাত পর্যন্ত আদালতের কাজ চালু রেখে বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ শত শত নেতাকর্মীর ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সেইসঙ্গে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না তারা। এমন খবরটি বড়ই উদ্বেগজনক যে কোনো বিচারেই। কেননা ওই ব্রিফিংয়েই জাতিংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফানি ডুজারিক বলেন, না আমাদের সেরকম কিছু নেই। জাতিসংঘ এ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট-বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে আমরা এটা করিও না। তিনি ইঙ্গিত দেন বলেন, আমরা মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদন দেখেছি। যদিও আন্তর্জাতিক চাপ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ নিয়ে আমরা কোনো চাপই অনুভব করি না। এটা গৌণ। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, সংঘাত মুক্ত নির্বাচন করা। তারপরেও দেখা গেছে, যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ঢাকায় অবস্থানরত ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদ উল আলম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে কেউ বক্তব্য দেননি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে শ্রম ইস্যুতে নীতি জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। ওই নীতি ঘোষণার দিনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস অধিকার নিয়ে কাজ করা নেত্রী কল্পনা আক্তারের জেল-জুলুমের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হতে পারে-এমন আশঙ্কা করে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এরই মধ্যে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বৈঠকটি সেকারণেই হয়েছে বলে মনে করেন। তবে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের শ্রম অধিকার নিয়ে এতটা উচ্চকণ্ঠ হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। আবার দেশের ভেতরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবি’র মন্তব্যও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ফেলেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার মতো পরিবেশ এবারও দেখা যাচ্ছে না বলে দেশের ভেতর থেকেই আগে ভাগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা এবারও হচ্ছে না। হয়তো নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে ক্ষমতায় কারা থাকবেন, সেটিও নির্ধারিত হবে। তবে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে না। তাদের মধ্যে আস্থা ফিরবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, নির্বাচনে আগে এমন স্টেইটমেন্ট মারাত্মক উদ্বেগজনক। নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণে দেশের ভেতর থেকেই হোঁচট বলা চলে। অন্যদিকে আছে দেশে ধাবমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের খড়গ। কেননা গণমাধ্যমের খবরেই বলা হয় যে রিজার্ভ বাড়াতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেও ফল মিলেনি। এমনকি রিজার্ভ বাড়াতে বেসরকারি ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। আবার বাধ্য হয়ে সরকারি আমদানির দায় মেটাতে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে রিজার্ভে টান পড়ছে। এরমধ্যে সর্বশেষ খবরটি হলো সারা দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তারা নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনের পরের পরিবেশও দেখবেন। আর এসব কারণেই এবারে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সব্বোপরি একটি অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিনই হবে-এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। তাদের মতে, নানান ধরনের কূট- কৌশলের আশ্রয় নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সর্বোপরি অংশগ্রহণমূলক হিসাবে প্রমাণ সহজ হবে না। কারণ আন্তর্জাতিক মহল ভালোভাবে বাংলাদেশে কি হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে সে খবর রাখে। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যতোই কূট-কৌশল নেয়া হউক না কেনো তা আদৌ ধোপে টিকবে কি-না সে-ই প্রশ্ন রাজনৈতিক মাঠে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন