২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:১৭:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাজনীতির মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
রাজনীতির মাঠে নামছেন খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া


সরকারের বিরুদ্ধে একদফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি পুরো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন, থাকবেন জনগণের কাতারে। সরকারের সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে তিনি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ারও আহবান জানাবেন জনগণকে। এমন আভাস মিলেছে দলের প্রভাবশালি সূত্র থেকে।  

বিএনপি সারা দেশে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে দলটি একা আন্দোলন করে গেলেও কার্যত মাঠে আরো অনেক রাজনৈতিক দল বিএনপি’র সাথে এখন যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে ডান-বামসহ উদার গণতান্ত্রিক দলগুলি এককাতারে আছে। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি এবং এটা চলমান রয়েছে। আর এধরনের কর্মসূচি নিয়েই সাথে যোগ দিয়েছে বলা যায় মাঠের সবকটি বিরোধী দল। যারা একেবারে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলির সাথে একসাথে বৈঠক বা আলাপ আলোচনা করে কর্মসূচি না দিলেও তারাও ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবিতেই মাঠেই রয়েছে।

সাত দলীয় জোটের ব্যানারে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ বর্তমানে বিএনপি’র সাথে আন্দোলনের মাঠে। জোটভুক্ত দলগুলো হচ্ছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গণফোরামের একাংশ গণফোরাম বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু এবং অ্যডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও বিএনপি’র সাথে আন্দোলনে যুগপৎভাবে। বিএনপি’র ১০ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে একই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১২ শরিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে নতুন জোট করেছে তারা বিএনপি’র সাথে বলা যায় যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে। 

এতে আছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ছাড়াও রয়েছে কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল। ’জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ নামে যে ১১টি দল নিয়ে নতুন জোট গঠিত হয়েছে তারাও বিএনপি’র সাথে আছে। এ জোটের শরিকরা হলো ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাগপা (খন্দকার লুৎফুর), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্প ধারা (নুরুল আমিন), সাম্যবাদী দল, গণদল, ন্যাপ-ভাসানী, ইসলামী ঐক্যজোট, পিপলস লীগ ও বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনতা পার্টি। 

অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ সরকারকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সংসদ ভেঙে দিতে যেমন দাবি জানিয়ে আসছে তার পাশাপাশি একের পর এক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। যার লক্ষ্য হচ্ছে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে দুঃশাসন হটানো, ব্যবস্থ বদলানো, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু এবং পাচারের টাকা ও খেলাপী ঋণ উদ্ধারসহ এর সাথে জড়িতদের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দোষীদের শাস্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশে সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি হস্তক্ষেপ এর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বদরুদ্দিন ওমর ও ফায়জুল হাকিমের নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলও মোটামুটি একই লক্ষ্য নিয়ে তাদের মতো করে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন খালেদা কিভাবে মাঠে নামছেন...

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত দেশের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের মুক্তি পান। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে দন্ড স্থগিত করে এই মুক্তি দেওয়া হয় বলে বলা হয়েছে। এরপর খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের আবেদনে এই মেয়াদ বাড়ানোয় এখনো তিনি কারাগারের বাইরে আছেন। খালেদা জিয়া দলের চেয়ারপার্সন হলেও দন্ডের পর দেশের বাইরে অবস্থানরত তার বড় ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বলা চলে তারেক রহমান এখন বিএনপির সব কিছুই দেখছেন এবং দল তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তবে তারেক রহমান একদিকে যেমন দন্ডপ্রাপ্ত তেমনি তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন এবিষয়টিও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ফ্যাক্টর। সেদিক থেকে খালেদা জিয়ার প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন। এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন বা রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা একেকজন একেক রকম বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন সরকারের পক্ষ থেকেই এব্যপারে কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে। তবে কলকাঠি নাড়ানো হউক আর না হোক বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন এবং রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন কিনা এনিয়ে সরকারের বক্তব্য দেশের অনেকের কাছে যেমন পছন্দ আবার অনেকের কাছে গ্রহণীয় হচ্ছে না। তেমনি পশ্চিমা বিশ্বরাও এনিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলে শক্তভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথ পরিস্কারের ব্যাপারে সরকারের একেবারে শীর্ষ মহলে আলোচনাও করেছে, তুলেছে গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিষয়টি। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একজন বিরোধী দলীয় প্রবীন রাজনীতিবিদ হয়ে কিভাবে কি কারণে বন্দী আছেন বা তার চলাচলে কি ধরনের বাধা আছে সেব্যাপারে বিদেশীরা সরকারের পক্ষ থেকে তার খুটিনাটি অবগত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জোড়ালো কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে বিদেশী বিশেষ করে পশ্চিমাদের নানান ধরনে বোঝানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বিএনপি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের মত মৌলবাদি দল নিয়ে অতীতে আগুন সন্ত্রাস করেছে। পশ্চিমাদের বোঝানো হয়েছে, বিশেষ করে গত মাসে বাংলাদেশে আসা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলেকে-ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন তুলে ধরেন বিএনপি কিভাবে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে নিয়ে সহিংসতা করেছে। যদিও বিএনপি এসবের বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছে বিভিন্ন কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে। বিএনপি পশ্চিমাদের এবারে বিশেষভাবে আশ্বস্থ করেছে তারা দেশে অংহিস আন্দোলন করে যাচ্ছে। এর পাশাপশি তারা এ-ও আশ্বস্থ করেছে যে বিএনপি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের মতো মৌলবাদি দল নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে না। বরং সরকার সারা দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএননপিসহ সব দলের নেয়া কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি ডেকেই যাচ্ছে। পশ্চিমাদের বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সরকার তার দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি প্রশাসনকে নামিয়েছে বিএনপি’র কর্মসূচি প্রতিরোধের জন্য শান্তি সমাবেশের কথা বলে। বিএনপি সাফ বলে দিয়েছে বিএনপি অংহিস আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। 

বিদেশীরা সন্তুষ্ট তাই খালেদার পথ পরিষ্কার..

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগরে বিরুদ্ধে বিএনপি’র পাল্টা জবাবে পশ্চিমারা সন্তুষ্টু হয়েছে বলে শোনা গেছে। তারাই এখন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচন বা রাজনীতিতে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ দিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। একারণে বিএনপি’র ভেতরে এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে কিভাবে কখন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রথমে রাজনীতির ময়দানে হাজির করা যায়। আপাতত খালেদা জিয়া কোন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তা-ও আলোচিত হয়েছে। জানা গেছে, রাজনৈতিক সমাবেশ বা মাঠ কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া প্রথম পর্যায়ে স্বশরীরে থাকবেন না। ভার্চ্যুয়ালি সম্পৃক্ত হবেন। আবার এ-ও হতে পারে খালেদা জিয়ার রের্কডকৃত বক্তব্য শুনিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের আরো উজ্জিবিত করা হবে। আবার এটাও জানা গেছে, বড়ো কোনো সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারেন। আবার এমনও হতে  পারে বিএনপি’র নেতৃত্বে আন্দোলনরত দলগুলি একমঞ্চে উঠলে সেমসয় খালেদা স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারেন, দেবেন জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা। আরেকটি সূত্র জানায়, এর আগেও খালেদা জিয়া স্বশরীরে আন্দালনে শরিক হতে পারেন। জানা গেছে, বিএনপি’র ডাকে সামনের দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকার বেশি বাধা বা সহিংসতা বা কঠোর হলে দলটি খালেদা জিয়াকে সরাসরি নিয়েই মাঠে নেমে পড়তে পারেন।

শেয়ার করুন