৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:৫২:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


অসহায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২২
অসহায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন


বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটনে গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দায়িত্ব পালনকালে বহুবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন কিন্তু কোনোবারই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের সুযোগ পাননি। এবার দু’দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরকে কেন্দ্র করে বৈঠকের সুযোগ হয়েছে। যে কারণে এই বৈঠকের প্রতি সবার আগ্রহ ছিলো বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের পটভ‚মিতে এ আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে স্যাঙ্কশন নিয়ে। 

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব, র‌্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে হয়তো ইতিবাচক আশ্বাস মিলবে এমন ধারণা পোষণ করা হয়েছিল বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে। তার ওপর নিয়োগ করা হয়েছেস ল’ ফার্ম। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন বলেছেন, প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটা প্রক্রিয়াগত বিষয় এবং র‌্যাবের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েছে। সোজা কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন স্যাঙ্কশন প্রত্যাহার করা হবে না। উল্টো বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছে- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য। আনুষ্ঠানিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণী। কেননা যখন তিনি রাষ্ট্রহীন, গৃহহীন ও বেকার ছিলেন, তখন দেশটি তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ড. মোমেনের কৃতজ্ঞতাবোধ থাকতে পারে। কারণ এই দেশ তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে, থাকতে দিয়েছে। সে তো অনেক আগের কথা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি রাষ্ট্রহীন ছিলেন এমন বেফাঁস মন্তব্য কেন করলেন? তিনি কেন বাংলাদেশকে ছোট করলেন, লজ্জিত করলেন? বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে অপমান করলেন। কোন পাপের গ্লানি তিনি মুছতে গেলেন? একটি স্বাধীন- সার্বভৌম রাষ্ট্রের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন কথা মুখ থেকে বের হলো কীভাবে? তিনি কী ভুলে গেলেন তিনি একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী? মার্কিন নাগরিক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার আনুগত্য বা কৃতজ্ঞতা থাকতেই পারে, তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার কী রাষ্ট্রের প্রতি কোনো অনুগত্য নেই? রাষ্ট্রহীন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্ত্রিত্বে থাকার আর কোনো অধিকার নেই। দলের অন্যদের শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অযোগ্যদের ধরিয়ে নিয়ে কারচুপির নির্বাচন করিয়ে বিদেশি নাগরিককে এমপি এবং মন্ত্রী বানিয়েছেন। সময় এসেছে রাষ্ট্রহীনকে আবারো রাষ্ট্রহীন করে দেয়ার।

বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনে ২০১৬ সালে কিছু সংশোধনী যুক্ত করার আগ পর্যন্ত জন্মসূত্রে নাগরিক- এমন কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে- এমন কোনো নজিরও নেই। এমনকি আমাদের সুপ্রিম কোর্ট গোলাম আযমের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা যাবে না বলে রায় দিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরি করার পর কোনো একসময়ে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তার সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন দেশান্তরি হয়েছিলেন।

আরো চমকপ্রদ খবর হলো বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। ড. মোমেনের মুখে যেন উল্টো সুর। দুই বছর আগে তিনিই বলেছিলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি ক‚টনীতিকরা ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ (আচরণবিধি) মেনে চলতে না পারলে, তারা নিজ দেশে চলে যাক। ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ না মানলে চলে যান। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কিছু বিদেশি ক‚টনীতিক ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বাসভবনে একটি বৈঠক করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হলে তিনি ক‚টনীতিকদের এই পরামর্শ দেন। গত বছরেও তিনি বলেন, বিদেশি লোকগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে, এটা একটা তাজ্জবের জায়গা। আর আপনারা মিডিয়াও এসবের কাভারেজ দেন। ওই সব লোক এখানে এসে মাতব্বরি করবে কেন। আমাদের তো তাদের পাবলিসিটি দেয়া বন্ধ করা উচিত। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের তদবির অথবা মধ্যস্থতা কোনটা চাইছেন তিনি, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। বিএনপির সঙ্গে সরাসরি নিজেরা আলাপ না করে ভিনদেশি একটি শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা কতটা যৌক্তিক- প্রশ্ন দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে নিশ্চয়ই তোলা যায়। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে নিয়ে যাওয়ার দায় যেহেতু সরকারের, সেহেতু গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও সরকারের হওয়া উচিত।


শেয়ার করুন