০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৬:১২ অপরাহ্ন


গভীর সংকটে বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
গভীর সংকটে বাংলাদেশ


নানা কারণে বাংলাদেশ কিন্তু গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কতাসংকেত দিলেও কেউ গায়ে মাখেনি। রাজনৈতিক মহলে শুধু ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আর ক্ষমতায় যাওয়ার মরণপণ চেষ্টা। কেউ কিন্তু দেশের সর্বনাশ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের তহবিল, কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন ও ব্যাপক লুটপাটে শূন্য হয়ে গেছে। অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে সবাই জানে। বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন-অরাজকতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত করবে। আসন্ন শুষ্ক মৌসুম, রোজা এবং গরমের সময় তীব্র জ্বালানি সংকট এবং অর্থ সংকটের আশঙ্কা করছে বোদ্ধামহল। কীভাবে সামাল দেবে নতুন সরকার? আছে কি কোনো জাদুমন্ত্র? 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি পত্রপত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে লুটপাটের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সরকারের দুই মন্ত্রী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বোদ্ধা মহল জানেন, পাচার হয়ে যাওয়া মোট অর্থ এবং সম্পদের একটি সামান্য অংশই উঠে এসেছে সিপিডির প্রতিবেদনে। এটা অবশ্যই সবার মনে রাখা উচিত, দেশটা কিন্তু শুধুমাত্র একটি দল, গোষ্ঠী বা বিশেষ মহলের না। ১৭ কোটি মানুষের সবারই এ দেশ। এখানে বিভাজন উচিত নয়। জাতীয় স্বার্থে সবার এক হওয়া উচিত। 

বিরাজমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট দুর্ভিক্ষে রূপ নিলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারপ্রধানও মার্চে সম্ভব্য এক দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়েছেন। সরকারের শুভাকাক্সক্ষী সুধীজন অনেক আগে থেকেই ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছে। কিন্তু শুনেও না শোনার ভান করে আসছেন তারা। ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার মার্কেট লুটেরাদের বিস্তারিত খবর নিঃসন্দেহে সরকারপ্রধানের কাছে আছে। ফলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন করে ক্ষমতায় এলে ওই চক্রকে নিষ্ক্রিয় করার কি পদক্ষেপ তিনি নেবেন? বাংলাদেশকে প্রথম যে চাপের মুখে পড়তে হবে, সেটা বৈদেশিক ঋণের সুদ প্রদান। অতি শিগ্্গিরই বিপুল বিদেশি ঋণ সুদসহ পরিশোধের চক্রে পড়তে হবে। ২০১৯ মেলবোর্নে সফরকরা বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেছিলেন, বাংলাদেশের নাকি ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু সেই কথা বলে না।

জ্বালানি সংকটের কথা বিবেচনা করলেই সংকটের সরূপ বোঝা যাবে। ২৮০০০+মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৩০০০-১৪০০০ মেগাওয়াট গড় বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে বিপিডিবি। গ্যাস সরবরাহ সংকটে ৪৫০০-৫০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে থাকছে। সঞ্চালন, বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট কাটবে না। ডলার সংকট, টাকার অভাবে আইপিপিগুলোর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। কয়লা, তরল জ্বালানি কেনার অর্থ সংকট, আইওসিগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে। বিপিডিবি এবং পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলো একে ওপরের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে বিপিডিবি, পেট্রোবাংলা। নিশ্চিত নির্বাচনের পরে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বাড়ানো হবে। আইএফসি ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নেওয়ার সময় সার এবং বিদ্যুৎ থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নিজেদের মাটির নিচে কয়লা ও গ্যাস। এগুলো উত্তোলন এবং ব্যবহার না করে প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ, তরল জ্বালানি এবং বিদেশ থেকে কয়লা, এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনায় যে গলদ সেটি কখন বুঝবে বাংলাদেশ? জানা গেছে, বিদেশ থেকে পাইপলাইনে আর এলএনজি আমদানির পাঁয়তারা চলছে। 

বর্তমান বাস্তবতায় বিরোধীদলগুলো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না এটা নিশ্চিত। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট এবং জ্বালানি সংকট সরকারকে বড় ঝাঁকুনি দেবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন ক্ষমতাসীন দলের পাশে লুটেরা বাহিনীদের কেউ পাশে থাকবে বলে মনে হয় না। তখনকার যুদ্ধটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাসীন দল ও দলীয় প্রধান সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নিয়ে অর্থনৈতিক যুদ্ধ করবেন এটাই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন