২৭ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০৫:৪৫:১৮ পূর্বাহ্ন


মোদীর স্বপ্নের আকাশে কালোমেঘ
ভারত শাসন করবে কে বিজেপি জোট না কংগ্রেস জোট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
ভারত শাসন করবে কে বিজেপি জোট না কংগ্রেস জোট


ভারতের ক্ষমতার মসনদে বসবে কে? এ নিয়ে ভারতজুড়ে টেনশন। আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে বর্হিবিশ্বেরও অনেকে। বাংলাদেশও স্বাভাবিকভাবে ওই কাতারে। কারন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের একটা প্রভাব ইতিমধ্যে স্পষ্ট। এ পর্যবেক্ষনেই আগ্রহ বাংলাদেশের। তবে বিজেপি ক্ষমতা কন্টিনিউ করবে নাকি কংগ্রেস জোট সরকার গঠন করে দিল্লির মসনদে বসবে এ আলোচনাই সর্বত্র। এবং এ বিষয়টি আজই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।


এদিকে বিজেপির জন্য হতাশার কথা হলো-  ৪০০’র বেশি আসন পাওয়ার স্লোগান দেওয়া বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জোট এবার লোকসভা নির্বাচনে তিনশর লক্ষ্যই ছুঁতে পারেনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বুথফেরৎ জরিপের পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে ২৯৬ আসনে আটকে গেছে দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা এনডিএ জোট। এককভাবে বিজেপি পেয়েছে ২৪০ সিট। ফলে সরকার গঠনে জোটের শরীকদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বিজেপিকে। অন্যদিকে কংগ্রেস আশাতীত ফল লাভ করেছে। এককভাবে ৯৯ সিট পেয়েছে এ দল। কিন্তু এরবাইরেও অর্থাৎ কংগ্রেসের ন্যায় বিরোধী পক্ষে থাকা জোটের বিভিন্ন দলের সিট প্রাপ্তির সংখ্যা ২০৪।


মুল আলোচনা এখানেই। ২৭২ সিটে যেতে এখন বিজেপির উপর বিরোধীরা যদি আস্থা রাখে, দেনদরবারের আস্থা লাভ করে তাহলে আবারও সরকার গঠন করবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি। কিন্তু বিপরীত চিত্রও দেখা যেতে পারে। কংগ্রেসকেও আলোচনায় রাখতে হচ্ছে। কারন কংগ্রেস যদি বিরোধীদের নিয়ে একটি জোট সরকার গঠনের অঙ্গীকার করে এবং কে কি পাবে সেটা দিয়ে যদি খুশী করতে পারে, তাহলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সরকার গঠন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।


দলটি গতকালই ঘোষনা করেছে, তাদের সমমনা ও বিগত সরকার বিরোধী দল এমনকি এবার নির্বাচনে বিজেপি জোটে যারা ছিলেন তাদের নিয়েও আলোচনায় বসবেন। আর সেটা যদি সত্যিই সফলভাবে বৈঠক হয়, কংগ্রেস যদি ব্যাপক ছাড় দেয় তাহলে পাশা উল্টে গেলে কিছুই করার থাকবে না মোদির। এ জন্যই দুশ্চিন্তার কালো মেঘ মোদির বিজেপির আকাশেও ভর করেছে। তবে আজ বুধবারের মধ্যেই এ বিষয় অনেকটাই স্পস্ট হয়ে যাবার কথা।


তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ফলাফলকে মোদির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেটা সে ক্ষমতা কন্টিনিউ করুক আর না করুক।
নির্বাচনে এনডিএর এমন বিপর্যয়ের নানা কারণ থাকলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর যুক্তিনির্ভর প্রচারণার কারণে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিজেপির। তবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মোদি নিজেকে বিজয়ী দাবি করে বলেন, এটা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বিজয়। মানুষ টানা তৃতীয়বারের মতো এনডিএর ওপর আস্থা প্রকাশ করেছে। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।


সরকার গঠনে কত আসন দরকার

ভারতের কেন্দ্রে সরকার গড়তে প্রয়োজন ২৭২ আসন। ৫৪৩ আসনের মধ্যে ওই আসন প্রয়োজন। এনডিএ সেই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২৩১ আসন। অন্যরা জয় পেয়েছে ১৬টিতে। বিজেপি এককভাবে জিতেছে ২৪৩ আসনে। কংগ্রেস পেয়েছে ৯৯টি। এ দুই দলের বাইরে অন্য দলগুলো জিতেছে ২০৩ আসনে। নির্বাচনে ৪৪ দশমিক ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে এনডিএ জোট। ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোট গেছে বাকি দলগুলোর ঝুলিতে। উত্থানের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসকে লোকসভায় আনুষ্ঠানিক বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখা যাবে; অর্থাৎ লোকসভায় আবার বিরোধী দলীয় নেতার পদ ফিরছে।

নির্বাচনে বিজেপির অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এমনকি অযোধ্যার মতো লোকসভা আসনে বিজেপি হারের মুখ দেখেছে। সেখানে সমাজবাদী পার্টির নেতা স্বদেশ প্রদেশ জয়ী হয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি ভোটের আগে তড়িঘড়ি করে অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনের প্রচারণায় বিজেপি রামমন্দির সামনে আনতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের ‘বেকারত্ব’, ‘মূল্যস্ফীতি’র মতো ইস্যুর কাছে তা পেরে ওঠেনি। কার্যত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট যে সহজ জয় প্রত্যাশা করেছিল, তা তারা পায়নি।
২০১৯ সালে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। মাত্র ৫২টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি আসন। এবার কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের আসন বেড়েছে।


নির্বাচনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা। দুইবার ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল দেশটির বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে ঘুরে সমাবেশ করেন। এ সময় তিনি মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করেন।


তবে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি কোনো আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেননি। দলটির মূল প্রচারকের ভূমিকায় ভারতজুড়ে সভা-সমাবেশ করে বেড়িয়েছেন। তীব্র তাপদাহের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল শুরু হওয়া ভারতের সাত দফা নির্বাচন শেষ হয় গত ১ জুন। ওই দিন সন্ধ্যায় ভারতের গণমাধ্যমগুলো একযোগে বুথফেরত জরিপ প্রকাশ করে। এসব জরিপের কোনো কোনোটিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে চার শতাধিক আসনও দেওয়া হয়।


প্রায় প্রতিটির পূর্বাভাসে বলা হয়, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সাড়ে তিনশর বেশি আসন পেতে যাচ্ছে। প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোটকৌশলী ভবিষ্যদ্বাণী করেন, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট সাড়ে তিনশর বেশি আসন পাবে। নির্বাচনের ফলাফল এসব পূর্বাভাস ও ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি বিজেপি ক্রমে অজনপ্রিয় হওয়ারও আভাস দিয়েছে।

ভোটের সাফলতা প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘জনগণ মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে শাস্তি দিয়েছে। এ দেশের মানুষের প্রতি আমার আস্থা সব সময় ছিল। ভারতের জনগণ চায় না নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ দেশ শাসন করুন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, নির্বাচনে ফলাফল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য ‘নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয়।’ একই সুরে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এটা সত্য। তবে এ ফল বিজেপির জন্য নৈতিক পরাজয়। মোদির উচিত পদত্যাগ করা। আর এটাই এ নির্বাচনের মূল বার্তা।
ফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মোদি ও তাঁর দল ‘ঔদ্ধত্য’র কারণে হেরেছে। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে প্রধানমন্ত্রী মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। তিনি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। তাঁর উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা।’ মমতা বলেন, অনেক নির্মমতা, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়, ঔদ্ধত্যু সবকিছুর পর ইন্ডিয়া জোট জিতেছে, মোদি হেরেছেন। তারা অযোধ্যার মতো আসনেও হেরেছেন।

শেয়ার করুন