০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৩:৩৮ অপরাহ্ন


ইভিএমের বারোটা বাজালো নৌকাপ্রার্থীর বক্তব্যে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২২
ইভিএমের বারোটা বাজালো নৌকাপ্রার্থীর বক্তব্যে


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। আর এতে নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে আশাবাদী ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। গত মাসে  গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রথমে না পরে ইভিএমের পক্ষে ইসির তোড়জোড়

আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)-প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর পর দেশে বিভিন্ন অঙ্গন থেকেই শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের বক্তৃতা বিবৃতি। বিভিন্ন গণমাধ্যম্যে এনিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় জাতীয় সংসদের সকল আসনে ইভিএম-এ (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণের সক্ষমতা নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ইসির কাছে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম-এ ভোট গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে বলে একটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।  এছাড়া বলা হয় যে এ মুহূর্তে নতুন করে ইভিএম কেনার তহবিলও নেই ইসির হাতে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম রয়েছে বলে খবরে জানা যায়। যা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ আসনে ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে।

যা বললো বিএনপি 

বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো ভোটে ইভিএমের ব্যবহারের বিরোধিতা করে রাজনীতির মাঠ গরম করে ফেলে। দলটির পক্ষ থেকে একে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছে।  তাদের মতে, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব। তারা মনে করেন যে যেখানেই ভোট দেয়া হোক না কেনো নির্দিষ্ট প্রতীকেই ভোট পড়বে। এখানে ভোট গ্রহণের ম্যানুয়েল কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম কারসাজিতে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম (স্বতন্ত্র প্রার্থী) হেরেছেন। তাই তারা ইভিএম পদ্ধতির বিরুদ্ধেই অবস্থান।  অন্যদিকে এদিকে প্রযুক্তির প্রসারের অংশ হিসেবে ইসি ইভিএম ব্যবহারের ওপর জোর দিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়েছে।

ইসির দৌড়ঝাঁপ ইভিএমের পক্ষে

এদিকে ইভিএমে নিয়ে কারসাজি হতে পারে, হতে পারে ডিজিটাল কারচুপি-যখন এমন বক্তব্যের ছড়াছড়ি তখন সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। এসময় ইভিএম মেশিনের বিস্তারিত তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। বলা হয় শিক্ষক-গবেষকরাও এর খুঁটিনাটি দেখে নেন। এরপরই সাংবাদিকদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং এ কায়কোবাদ। এসময় রাজনৈতিক দলগুলোকে এ মেশিনের ওপর ভরসা করতে বলেন ড. জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, মেশিনের ভেতরে আইসিগুলো যেভাবে বসানো আছে তাতে সেখানে ভেতরে ঢুকে ম্যানিপুলেট করা ভার্চুয়ালি অসম্ভব।

 যারা ইভিএমের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের অনুরোধ করবো যে সমস্যাগুলো লিখে আমাদের জানান। অন্যদিকে ইভিএমের বিষয়ে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদ বলেন, এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজ করে তৈরি করা হয়েছে যে, কেউ চাইলেই সেখানে কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না।তবে তিনি আরো বলেন, এটা ঠিক যে কোনো মেশিনকেই শতভাগ বিশ্বাস করা যায় না।

কিন্ত এখানে মেশিন পর্যায়ে আর কোনো কাজ নেই। ফলে ম্যানিপুলেশনেরও সুযোগ নেই। অন্যদিকে ফুরফুরা মেজাজে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এ মেশিন ম্যানিপুলেশনের সুযোগ নেই। অবশ্য কারো মতামতকেই উপেক্ষা করা হচ্ছে না জানিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

সব উল্টে দিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী

এদিকে ইভিএমে ভোট নিয়ে যখন ইতিবাচক প্রচারে নেমেছে ইসিসহ সরকারের বিভিন্ন নেতানেত্রীরা, ঠিক তখনই এক বক্তব্যেই সব মাটি করে দিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুল। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ইভিএম না হলে রাতেই সব ভোট নিয়ে ফেলতেন। তিনি এটা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন।আবার তিনি এটা বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে বাটন টিপতে না পারলে টিপে দেয়ার জন্য নিজের লোক রাখবেন। এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যদিও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকা প্রতীকের এ চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বক্তব্যের ঘটনা যাচাই করতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।

শেষ কথা

নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বক্তব্যের ঘটনা যতই যাচাই করতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যতই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হোক না কেন রাজনৈতিক অঙ্গনে যা ঘটার তা ঘটে গেছে।  ইভিএমে কারসাজি হবে না বলে এখন যতই প্রচার করা হোক না বিরোধীদলকে তা সহজে বোঝানো যাবে না। কারণ এর আগেও খোদ সরকারের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘ইভিএম ভালো।

কিন্ত যারা ইভিএম পরিচালনা করবেন তারা নিরপেক্ষ নন। তাই ইভিএমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর  ইভিএমের বোতাম টেপার লোক মোতায়েন করার বক্তব্য এখন সে আশঙ্কাই সত্য করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী এক বক্তব্য ইভিএমের বারোটা বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরে ইভিএমের ব্যাপারে জনগণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সরকার কতটা ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করতে পারবেন না দেখা বিষয়।


শেয়ার করুন