২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:১৭:১৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ক্রিকেটে প্রয়োজন নতুন পথচলা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
ক্রিকেটে প্রয়োজন নতুন পথচলা বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট টিম


ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৮ উইকেটে পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ২০২৩ মিশন শেষ হয়েছে। ৯ ম্যাচের ৭টিতে পরাজয়ের মাধ্যমে চরম হতাশা জনকভাবে শেষ হলো বহুল প্রত্যাশিত বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের বিশ্বকাপ মিশন। বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ মিশন ঘিরে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর অনেক স্বপ্ন প্রত্যাশা ছিল। স্বপ্নটা বিসিবিই দেখিয়েছিল। বিশ্রামের নামে রিল্যাক্স থাকতে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে হোমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও অনেকটা ক্যাজুয়াল ক্রিকেট খেলে হেরেছিল। কিন্তু কী লাভ হলো এসবে।

বেশ কিছুদিন থেকেই সাদা বলের ওডিআই ক্রিকেটে ভালো খেলতে থাকা বাংলাদেশ নিয়ে উঁচু আশা থাকার সংগত কারণ ছিল এবার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ দলে ছিল বিশ্বমানের কয়েক জন খেলোয়াড় এবং সঙ্গে বেশ কয়েকজন উঁচু মানের উদীয়মান ক্রিকেটার। সোনালি প্রজন্মের মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, তামিম, সাকিবের জন্য এবার ছিল শেষ বিশ্বকাপ। আর বিশ্বকাপ যেহেতু প্রতিবেশী দেশ ভারতে তাই সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হতে ভুল ছিল না। কিন্তু বিশ্বকাপ প্রমাণ করলো স্বপ্ন আর বাস্তবতার বিস্তর ব্যাবধান। তা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের ব্যর্থ অভিযানে। প্রথম খেলায় আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রত্যাশিত দাপুটে জয়ের পর ক্রমান্বয়ে ছয়টি খেলায় বিপুল ব্যবধানে হেরে পয়েন্ট তালিকার প্রায় তলানিতে অবস্থান করছিল।

সৌভাগ্য বাংলাদেশের ৮ম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় বাংলাদেশের শেষ রক্ষা হয়। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাটিং পজিশন টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ৩০৬ রান করে, ব্যাটিং প্যারাডাইসে, যা হোক ভালো সূচনা করেছিল বাংলাদেশ এ ম্যাচে। কিন্তু সহজ উইকেটে তুখোড় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের রুখে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। মিচেল মার্শ (১৭৭*) এবং স্টিভ স্মিথের (৬৩*) খুনে ব্যাটিং বাংলাদেশকে প্লাবিত করে ৮ উইকেটে পরাজিত করে। হতাশ, বিপর্যস্ত হয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। তবু স্বস্তি, ৮ম স্থানে শেষ করে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস খেলতে পারবে বাংলাদেশ।

কেন এমন হলো, কেন এমন হয়? বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কেন বাংলাদেশ ব্যর্থ হলো? নানা জনে নানা কথা বলছেন। বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেই মোটা দাগে ব্যর্থতার কারণগুলো লিখছি।

প্রথম কারণ হলো, বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে ইতিপূর্বে দায়িত্বহীনের মতো বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে যাওয়া বিতর্কিত হাতুরাসিংহকে হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান। হাতুরা এসেই পঞ্চ পাণ্ডবের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এবং তামিমকে দল থেকে ছেটে ফেলার সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বুনে অধিনায়ক তামিমের জন্য অস্বস্তিকর করে তোলা হয় দলে অবস্থান। মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রামের নামে ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। এমনকি দলের ব্যাটিং প্রাণভোমরা মুশফিককে চির অভ্যস্ত ৪ নম্বর ব্যাটিং পজিশন থেকে নিচে নামিয়ে ৬ নম্বরে খেলানো হয়। অন্যান্য সব দল এসব পরীক্ষানিরীক্ষা বা কাটাছেঁড়া বিশ্বকাপের ১ বছর আগে থেকে স্কোয়াড নির্বাচন মোটামুটি স্থির করে ফেললেও বাংলাদেশ সবার শেষে নানা বিতর্কের পর বিতর্কিত স্কোয়াড ঘোষণা করে। আর বাংলাদেশ পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিশ্বকাপের মূল আসরে। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার আগেই অনেকটা বাধ্য করা হয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোয়। সম্পূর্ণ ভুল পরিকল্পনায় পাঁচ জন পেসার, দুই জন সাধারণ মানের স্পিনার, দুই জন আনকোরা নবীন ব্যাটসম্যান এবং দুই জন অল রাউন্ডার নিয়ে নতুন অধিনায়কের অধীনে দল ঘোষণা করা হয়। দলে কোনো বিকল্প ব্যাটসম্যান না রাখা ছিল বিরাট ভুল। অদূরদর্শী এই ভুল পরিকল্পনার জন্য হেড কোচ হাতুরার পাশাপাশি নির্বাচকম-লী এবং বিসিবি প্রধান দায়ী। তার অদূরদর্শিতার কারণে বিসিবিতে এমন কিছু লোকের ঠাঁই মিলেছে, যাদের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটে তথা, ক্লাব পর্যায়েও অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে রয়েছে বৈরিতা। দল নির্বাচনেও তাদের প্রভাব স্পষ্ট হয়। এতে করে স্কোয়াড নির্বাচন ভুল হওয়ায়, প্রতিপক্ষ বা উইকেটগুলো বিষয়ে আগাম ধারণা না থাকায় বাংলাদেশের অধিকাংশ ম্যাচে ভরাডুবি ঘটে।

এরপর আসুন প্রতি ম্যাচে একাদশ নির্বাচন। প্রতিটা ম্যাচেই ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। শান্ত ৩ নম্বর পজিশনে থিতু হলেও ওকে নিয়মিত সেখানে না খেলানোয় খেই হারিয়ে ফেলে শান্ত। তরুণ তৌহিদ হৃদয়ের প্রিয় পজিশনে না খেলিয়ে নানা পজিশনে খেলানো হয়। মেধাবী মেহেদী মিরাজকে ১ থেকে ৮ সব পজিশনে খেলানো হয়। সবচেয়ে বিস্ময় জাগানো হয় দলের সেরা ব্যাটসম্যান প্রমাণিত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ৭ এমনকি ৮ নম্বর পজিশনে খেলানো, যা নিয়ে অনেক ধারাভাষ্যকারদেরও বিভিন্ন মন্তব্য শুনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের অদূরদর্শিতা বলে প্রতীয়মাণ হয়েছে। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলে এগুলো কোনো সুবিধাবাদী মহলের স্পট ফিক্সিং সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং। এসব জটিল সব কাজ কারবারে শেষ ম্যাচ ছাড়া কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী, ব্যাটিং করতে পারেনি। অধিনায়ক হিসেবে সাকিব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেনি। আচরণে এবং নানা বক্তব্যে সাকিব দলকে হতাশ এবং বিব্রত করে। সেনাদলকে যুদ্ধে রেখেই টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগেই টুর্নামেন্টের মাঝে এবং শেষ ম্যাচের আগে দেশে ফিরে অধিনায়ক। কেন ফিরলেন, তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই। তবে ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন নিছক নিজস্ব কিছু কাজে তিনি দেশে ফিরেছিলেন। যদিও অজুহাত দেখিয়েছেন ব্যাটিং অনুশীলন তার এক প্রিয় কোচের অধীন। কিন্তু সেটাই যদি হয় কলকাতায় ছিল পরের ম্যাচ। ওই প্রিয় ব্যক্তিত্বকে কলকাতায় নিয়ে যেয়ে তার অধীনে প্র্যাকটিস করা তেমন অসম্ভব ছিল না কিছু। একজন ব্যাটসম্যান নিজের ব্যাটে আস্থা ফেরাতে এমন অনেক কিছুই করেন। টিম ম্যানেজমেন্ট অধিনায়ককে দায়বদ্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় পারফরম্যান্স ক্রিকেটের বিশাল ক্ষতি করেছে, ক্রিকেট এবং বাংলাদেশের বৃহৎ স্বার্থে অবিলম্বে হেড কোচ, অধিকাংশ কোচিং স্টাফ, নির্বাচকম-লীদের অপসারণ এবং সভাপতি সহ-পরিচালক স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন। বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকলে বিসিবির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানো উচিত, যা কিছু ঘটেছে সেটি থেকে এটিও অনুমান করা ভুল হবে না একটি অশুভ মহল ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহনন করিয়েছে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে। স্কোয়াড কোনোভাবেই বিশ্বকাপের মতো বৈষয়িক আসরে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সময়ের দাবি, যথাযথ উপায়ে আইসিসির সঙ্গে পরামর্শ করে বিসিবির খোল নলচে পাল্টে ফেলার।

শেয়ার করুন