২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ৬:০৭:৪০ পূর্বাহ্ন


দেশকে বাপ্পী চৌধুরী
সবাইকে বলতে চাই আমি পালিয়ে যাইনি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
সবাইকে বলতে চাই আমি পালিয়ে যাইনি বাপ্পী চৌধুরী


অভিনয়জীবনের ১৩ বছর পেরিয়ে এসেছেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। একসময় মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার জুটি ছিল সুপারহিট, সেই জুটি আবারও দেখা দিয়েছে ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে। দীর্ঘ বিরতি, গুজব, ব্যক্তিগত শোক এবং সিনেমা থেকে সাময়িক দূরে থাকা সবকিছু নিয়েই তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। জানিয়েছেন নতুন পরিকল্পনার কথাও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: আপনার অভিনয় জীবন তো পর্দার বাইরে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। ব্যক্তিজীবনের এই ওঠানামা কি পেশাগত সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করেছে?

বাপ্পি: হ্যাঁ, অনেকটাই। আমি এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের ব্যক্তিজীবনের প্রভাব পেশাগত জীবনে নিতে দেই, এটা আমি অস্বীকার করি না। বিশেষ করে, মায়ের মৃত্যুর পর একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সেটা শুধু আমার পরিবারে নয়, আমার শিল্পীসত্ত্বাতেও। সে সময় একদমই কাজ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না। নিজের ভেতরের লড়াইটা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে আরও পরিপক্ব করে তোলে। এখন আমি আগের চেয়ে আরও বেশি চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিই।

প্রশ্ন: বর্তমান প্রজন্মের নতুন নায়ক-নায়িকাদের কাজ সম্পর্কে আপনার কী মতামত?

বাপ্পি: নতুনদের মধ্যে অনেকেই ভালো করছে। তাদের মধ্যে ট্যালেন্ট আছে, আগ্রহ আছে, তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে স্টারডম পেতে সময় লাগে না, কিন্তু টিকে থাকতে হলে ভালো কাজ করতে হয়, দর্শকের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। আমি চাই নতুনরা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো করুক। কারণ ওরাই তো ভবিষ্যৎ। তবে একটা কথা বলতে চাই, সিনিয়রদের প্রতি সম্মান ও শেখার আগ্রহ থাকা খুব দরকার। কারণ অভিজ্ঞতা থেকেই শিল্পী পরিপূর্ণ হয়।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১০ বছর পরে মাহিয়া মাহির সঙ্গে দেখা হলো। কী কথা হলো তার সঙ্গে?

বাপ্পি: ‘ভালোবাসার রঙ’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আমাদের একসঙ্গে অভিষেক হয়। এরপর একসঙ্গে অনেক কাজ হয়েছে। আমাদের জুটিকে এই প্রজন্মের সেরা জুটি বলা হয়। সেই আমাদের এত দিন পর দেখা হলো। আমাদের জুটির এই যে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, এটা দর্শকের জন্য যেমন কষ্টের, আমাদের জন্যও তাই। আরও সিনেমায় আমাদের একসঙ্গে পেলে ভক্তদের হয়তো ভালো লাগত। তাই মাহির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রথমে অনেক রাগ হচ্ছিল। সেই রাগ নিয়েই কথা শুরু করলাম। কথা বলে বুঝতে পারলাম, আমাদের দুজনেরই দোষ ছিল। সব রাগ পড়ে গেল। কিছুটা আবেগতাড়িতও হয়ে পড়েছিলাম। মনে হলো, আমাদের বন্ডিংটা সেই আগের মতোই আছে। গল্প করা, একে অপরের প্রতি কেয়ারিং, ফিলিংস- সব একই রকম আছে। ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের অনেক বছর পরে দেখা হয়েছে।

প্রশ্ন: একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন অথচ ১০ বছর দেখা হয়নি। কারণটা কী ছিল?

বাপ্পি: এটার কারণ এখন না খোঁজাই ভালো। আমাদের দুজনের ভুল-বোঝাবুঝির কারণেই দেখা হয়নি, একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। মাহির কথা বলতে পারব না, তবে আমি গিলটি ফিল করি। কারণ, একটু ম্যানেজ করে আমরা কাজ করতেই পারতাম। তবে এত বছর দেখা না হওয়াটা ভীষণ অদ্ভুত। আমাদের সিনেমায় আড্ডাটা খুব কম হয়। নাটকের মানুষেরা যেমন প্রায়ই গেট টুগেদার করেন, একসঙ্গে আড্ডা দেন; আমাদের সিনেমার মানুষের এমনটা হয়ে ওঠে না। সে কারণেই দূরত্ব তৈরি হয়, ভুল-বোঝাবুঝি হয়। এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, একই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পরেও প্রায় ১০ বছর পর আমাদের দেখা হলো।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেছেন আপনি আর দেশে ফিরবেন না। সেখানেই স্থায়ী হবেন...

বাপ্পি: আমি নিজেও এমন খবর দেখেছি, যেখানে লেখা বাপ্পী পালিয়ে গেছেন, আর ফিরবেন না দেশে। সত্যিটা হলো, বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা করিনি। আমি এমনিতেই একটু হোমসিক। পরিবার আমাকে সব সময় টানে। সবাইকে বলতে চাই, আমি পালিয়ে যাইনি। যাঁরা লিখছেন বাপ্পীর কাজ নেই তাই দেশ ছেড়ে চলে গেছে, তাঁদের বলতে চাই, সিনেমার কাজ ছাড়াও বাপ্পী চলতে পারে।

প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্য কী ছিল?

বাপ্পি: ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলাম। কয়েকজন বায়ারের সঙ্গে মিটিং ছিল। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সে একটা সামিটে অংশ নিয়েছি। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নতুন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কথা হলো। অনেক বছর বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছিল না, এই সুযোগে একটু বেড়ানোও হলো।

প্রশ্ন: অনেক দিন হলো আপনার নতুন সিনেমা নেই। কেউ কেউ বলছেন, বাপ্পীর দিন শেষ। আপনি কী বলেন?

বাপ্পি: মনে রাখার মতো কতটা কাজ করতে পেরেছি সেটা তো সময়ই বলে দেবে। তবে অনেক দিন সিনেমা না করলেও এত মানুষ আমাকে মনে রেখেছেন, সে জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এত দিন কাজ না করার মূল কারণ আমার মায়ের মৃত্যু। তাঁর চলে যাওয়ার পর সিনেমায় মন বসাতে পারছিলাম না। তাই একটা ব্রেক নিয়েছিলাম। আমি চাইলে অবশ্যই কাজ করতে পারব। আমি অনেক ব্যবসাসফল সিনেমা দিয়েছি। এখন তো স্টার হওয়া সহজ, ফেসবুকেই তারকা হয়ে যাচ্ছে অনেকে। আমি ফেসবুক তারকা নই, প্রেক্ষাগৃহের তারকা। সারা দেশের মানুষ যখন হলে সিনেমা দেখত, তখন আমার নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। আর এখন মানুষ নিজেকে প্রমাণ করে ফেসবুকে। দুটি দুই জিনিস। অনেকে না জেনে নানা কথা ছড়াচ্ছেন, এটা ঠিক না। একজন তারকা তৈরি হওয়া অনেক কঠিন। তাঁদের বাঁচিয়ে রাখা উচিত। গুজব না ছড়িয়ে বরং তাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, কীভাবে তাঁর মেধার সুব্যবহার করা যায়, সেই পরামর্শ দেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে ব্যবহার করতে পারেনি। কেন এমন মনে হলো আপনার?

বাপ্পি: শুধু আমাকে কেন? বেশির ভাগ শিল্পীকেই ব্যবহার করা যায়নি। অনেক অভিনেতা আছেন, যাঁরা যোগ্য হলেও তাঁদের নিয়ে কাজ হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে বাপ্পারাজ ভাইয়ের কথা বলি। তাঁর মতো অভিনেতা কেন সিনেমায় নেই? সিনেমায় তাঁর যখন দেওয়ার সময়, তখন তিনি দূরে আছেন। এর কারণ আমাদের ফিল্ম পলিটিকস। দেশের বাইরের সিনেমায় দেখেন, তাঁরা সিনিয়র শিল্পীদের কী দারুণভাবে ব্যবহার করছেন। অমিতাভ বচ্চনের কথাই ধরুন। তাঁর তো এই বয়সে অবসরে থাকার কথা, অথচ তাঁকে নিয়ে কী সুন্দর সুন্দর কাজ হচ্ছে। আমাদের আলমগীর সাহেব, মৌসুমী আপু, পূর্ণিমা আপুসহ অনেককে নিয়েই তো কাজ করা যায়। কিন্তু সেটা হচ্ছে কই?

প্রশ্ন: ৫ অক্টোবর চলচ্চিত্রে আপনার ১৩ বছর পূর্ণ হলো। এক যুগের এই যাত্রায় আপনি কতটা সন্তুষ্ট?

বাপ্পি: যা পেয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। একজন নায়ক হিসেবে এখন চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে চাই, ভালো মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই।

শেয়ার করুন