৩০ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:৪৮:১৬ পূর্বাহ্ন


কোবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান
প্রবাসীদের আমরা দেশে নিয়ে যেতে চাই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১০-২০২৫
প্রবাসীদের আমরা দেশে নিয়ে যেতে চাই ডা. শফিকুর রহমানকে ফুলেল অভ্যর্থনা


আল্লাহ আপনাদের বাংলাদেশে জন্ম দিয়েছে। সেখানে আপনারা বড় হয়েছে। হয়ত পরিবেশের কারণে দেশে যেতে চান না। আমরা আপনাদের দেশে নিয়ে যেতে চাই। আল্লাহ সুযোগ দিলে আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবো। মানবতার মুক্তির লড়াইয়ে আমরা আপরাদের সঙ্গে চাই। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন ধ্বংস। শিক্ষাব্যবস্থা এখন বোকাদের হাতে। শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করতে আপনাদের প্রয়োজন। আমরা মেধাবী প্রবাসীদের একটি অংশ বাংলাদেশে চাই। যাতে আমরা আগামী ৫ বছরের মধ্যে জাতিকে মুক্তি দিতে পারি, স্তস্তি দিতে পারি, সবাই যেন বাংলাদেশি বলে গর্ব করতে পারে। আপনারাই হবেন বাংলাদেশে ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের ক্ষমা করতে শিখিয়েছেন। আমরা সেই নবীর উম্মত হিসেবে ৫ আগস্টের পর আমরাও ক্ষমা করেছি। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। তবে নবী করিম (সা.) ১০ মানবতাবিরোধীকে ক্ষমা করেননি। আমরাও মানবতাবিরোধীদের ক্ষমা করবো না। হত্যার বিচার হত্যা। হত্যাকারীর বিচার হতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে মানবতাবিরোধীদের বিচার হবে। বর্তমান সরকারের আমলেই বিচার শুরু হয়েছে। আমরা দৃশ্যমান কয়েকটি রায় চাই। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা সেই বিচার চালিয়ে যাবে। তবে আমরা ন্যায় বিচার চাই। আমরা লালচোখকে ভয় পাবো না, ভয় পাবো একমাত্র আল্লাহকে। গত ২৬ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় এস্টারিয়ায় এক সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এ সব কথা বলেন।

‘কোয়ালিশ অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’ (কোবা)’র উদ্যোগে ‘এস্টোরিয়া ম্যানর’ এ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে প্রদত্ত ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আব্দুল আজিজ ভুইয়া এবং সঞ্চালনা করেন জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রস্থ সমন্বয়কারী ড. নাকিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. জুন্নুন চৌধুরী, মুফতি জামালউদ্দিন, মাওলানা আব্দুর রহমান খান, ড. শওকত আলী, ডা. বদরুল ইসলাম, ডা. খালেকুজ্জামান. ডা. জাকির হোসেন, হাফিজ জাকের আহমেদ, আবু আহমেদ নূরুজ্জামান প্রমুখ। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি আমেরিকায় আসার জন্য দুইবার ভিসা পাই। কিন্তু আসার মত পরিবেশ ছিল না। একবার আসার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমাকে ইস্তাম্বুল থেকে ফেরত পাঠনো হয়। ইস্তাম্বুল থেকে সৌদীতে গিয়ে ওমরাহ করে বাংলাদেশে ফেরত যাই। এবার অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় আপনাদের সঙ্গে দেখার সুযোগ হলো। তিনি বলেন, স্বৈরাচারি সরকার ছাত্রজনতার আন্দোলনে মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিল। প্রায় ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, ৩৪ হাজার মানুষকে আহত করা হয়। যার মধ্যে ৩৫০ জনতে মেরুদণ্ডহীন করে দেওয়া হয়। মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংঘটন করা হয়েছে হাজার হাজার ক্যামেরার চোখের সামনে, স্পষ্ট দিবালোকে মানুষের সামনে। এই জঘন্য ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন তারা কোন প্রজাতির মানুষ আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। আদৌ তাদের মধ্যে কোনো মানবিকগুণাবলি ছিল কি না তাও আল্লাহ ভালো জানেন। জামায়াতের আমির বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যারা আহত পঙ্গু তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু এই সংখ্যাটা এত বেশি একটা দলের জন্য বড় কিছু করা বড়ই কঠিন। কিন্তু আমরা তাদের ছেড়ে দেইনি। যেখানেই যার পক্ষ থেকে অনুরোধ এসেছে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে তাদের কাছে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ছুটে চলেছি-গিয়েছি, সান্ত¦না দিয়েছি, সাহস জুগিয়েছি। তাদের বলেছি, শহীদ হওয়ার বড় আকাক্সক্ষা ছিল আল্লাহ তো আমাকে নিলো না। আপনার পরিবারের একজনকে নিয়েছে, গোটা জাতি যুগ যুগ ধরে তাদের কলিজায় এবং হৃদয়ের চাদরে ঢেকে রাখবে ইনশাআল্লাহ। এক সন্তান হারিয়েছেন, ১৮ কোটি মানুষকে সন্তান হিসেবে পাশে পাবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেন, যে কাজটি সরকারের করার কথা ছিল সেটি আমরা করেছি। শহীদ পরিবার নিয়ে আমরা ১২ খণ্ডের স্মরণিকা করেছি।

তিনি আরো বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর আমরা মজলুম দল ছিলাম। আমাদের প্রথম শ্রেণির কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। পটপরিবর্তনের পর এটিএম আজহার সাহেবকে ফেরত পাই। আসলে আমরা একটি কঙ্কাল পেয়েছি। আরমানের মার সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলতেন আমি বুকে পাথর বেঁধে আছি। দুই মেয়ে দাদুকে বলতো আব্বু কোথায়। বাসায় ফোন এলে বলতো আব্বু কি ফোন করেছে? ব্রিগেডিয়ার আযমীর একই অবস্থা। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ১ আগস্ট তারা আমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয় আর আল্লাহ ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয়। এর কোনো কৃতিত্ব আমাদের না। সমস্ত কৃতিত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন ক্ষমতায় বসান, আবার যখন সীমা লঙ্ঘন করে দুনিয়াকে অস্থির করে তোলে, আল্লাহ সেই ক্ষমতা কেড়ে নেন। ইট ইজ আল্লাহ। হি ইজ অলমাইটি। আসুন আমরা শোকরিয়া আদায় করি আল্লাহ তায়ালার।

তিনি আরো বলেন, নিউইয়র্কের এই হলো হচ্ছে আমার প্রিয় বাংলাদেশ। আমি যে চেহারাগুলো দেখতে পাচ্ছি এই চেহারাগুলো যদি ডিটারমাইন্ড হয় এবং তারা ডিসিশন নেন যে ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের প্রিয় দেশকে কিছু দেব, তাহলে আল্লাহর মেহের বাণী আমরা পেয়ে যাবো। দেখেন, আমি আপনাদের কাছে টাকা-পয়সা চাচ্ছি না। জাতির জন্যে যা প্রয়োজন (টাকা-পয়সা) তা আপনারা এমনিতেই দিচ্ছেন। আপনাদের অসংখ্য শোকরিয়া, অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের এই রেমিট্যান্সটা দেন, আমাদের ভাঙাচোরা শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ঠিক করতে সাহায্য করুন। আমাদের ইকোনমির রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে উইপোকা-ছারপোকা ঢুকে পড়েছে, ওইগুলোকে তাড়ানোর জন্যে আমাদের সাহায্য করুন। ওগুলোর হাত থেকে আমাদের সমাজ-দেহটাকে সুস্থ করতে সাহায্য করুন। তিনি আরো বলেন, আমরা কখনো চিন্তা করিনি ৫ আগস্ট বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হবে, আসলে এটা আল্লাহ করে দিয়েছেন। আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে চাই। সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবো।

জামায়াতের নেতা বলেন, এই সরকার প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড দিচ্ছে। ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন। তাই যারা সৎভাবে দেশ চালাবে বলে মনে করবেন-তাদেরকে ভোট দিয়ে বাংলাদেশটাকে সুপথে পরিচালিত করার সুযোগ দেবেন-এটাই আমার অনুরোধ। আমরা প্রবাসীদের এনআইডি দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছিলাম। আবার জুলাই আন্দোলনেও প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল। তাদের স্টপ রেমিট্যান্স বোমার মত কাজ করেছে। আপনারা যাদের ভাল মনে করেন জাতির আমনত তাদের হাতে তুলে দিবেন। আমাদের জন্য তিনটি কাজ করবেন। এক দোয়া, দুই পরামর্শ এবং তিন সমালোচনা।

জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের ব্যাপারে বদনাম দেওয়া হয় যে, যদি আমরা ক্ষমতায় যাই মহিলাদের তালা দিয়ে ঘরের ভেতরে আটকে রাখবো। অতো তালা কেনার পয়সা কোথায়? আমাদের মা-বোন নেই? সবার মা-বোন আছে। তারা কী শিক্ষাদীক্ষা করেনি? তারা কি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে না? আলহামদুলিল্লাহ সবাই করছেন? আসাদের প্রিয় নবী যুদ্ধের ময়দানে নারীদের নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা সেই তার অনুসারি। নারীদের মর্যাদা আমরা দেব। নারীরা গার্মেন্টসে কাজ করছে, আমরা কী বাধা দিচ্ছি? বরং নারীরা আমাদের সন্তান উপহার দিচ্ছেন, যারা কাজ করছেন তাদের ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৫ ঘণ্টার কাজ দেওয়া হবে। তাদের সময় কমিয়ে দেওয়া হবে, বেতন না।

ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, জনগণের পালস যারা বুঝতে পারে না, তারা কখনোই ক্ষমতায় বসতে পারেনি। আগামীতে আমরাও পারবো না যদি জনগণের পালস বুঝতে অক্ষম হই। জনগণের পালসকে সম্মান করতে হবে। আমরা সেই সম্মান দেওয়ার পক্ষে। আমাদের কয়েকটা প্রায়োরিটি আছে। এক নম্বর প্রায়োরিটি হচ্ছে আমরা আপনাদের দেশে নিয়ে যেতে চাই। আল্লাহ আপনাদের জন্ম দিয়েছিলে বাংলাদেশে। সেই মাটিতে অনেকে বড় হয়েছেন, লেখাপড়া করেছেন। পাঠশালার ইদ, পাথর, নুড়িবালি-রড-সিমেন্ট সবগুলোর সাক্ষী আপনারা এবং আপনাদের সাক্ষী ওগুলো।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি এবং আমার দল যে প্রতিজ্ঞা করেছিল এই মজলুম বাংলাদেশকে গড়তে হবে। ন্যায় এবং সত্যের পথে কেউ এগিয়ে আসুক আর না আসুক আমাদের এই মজলুম কাফেলা হিম্মত করে আল্লাহর ওপর ভরসা করে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমানকে কোবাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল অভিনন্দন জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মুনার শিল্পীরা ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন