জুলাই জাতীয় সনদ
গণভোটে দ্বিমত নেই কারোরই। বিরোধ, কখন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এ ভোট ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। এনসিসি বলেছে আপত্তি নেই। কিন্তু এ নিয়ে বিরোধ তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। এ ভোট নভেম্বরে অনুষ্ঠান করতেই হবে। এক রকম দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেও দাবি করেছিল। রীতিমত রাজপথ কাঁপিয়েছে। বিএনপির যুক্তি যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঐ দিন করলে সমস্যা নেই। অর্থের সাশ্রয়। তাছাড়া একটা গণভোট আয়োজন করেই আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের মত মেগা আয়োজনে হিমশিম খাবে নির্বাচন কমিশন। এমনও হতে পারে সময় ও প্রস্তুতির অজুহাত দেখিয়ে সম্ভব্য ফেব্রুয়ারির ভোট পেছানোর কথাও বলতে পারে। তাছাড়া গণভোট আগে করে বাড়তি ফায়দাও নেই।
বিষয়টা ফায়সালা হবে সংসদে। জামায়াতের দাবি জাতীয় ভোটের দিন হলে এ ভোটের আমেজ থাকবে না। বরং আগে অনুষ্ঠান করে ঐ অনুসারে জাতীয় ভোট।
দুই পক্ষের টানাটানি এমন পর্যায়ে যা এখন প্রধান উপদেষ্টার দরবারে।কথা হলো প্রধান উপদেষ্টা এ ভোট কবে দিবেন সেটা ঘোষণা দিবেন। ফলে গণভোটের সিদ্ধান্ত এখন প্রধান উপদেষ্টার দরবারে। কিন্তু উনি ও এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না। ঐক্যমত কমিশন বিষয়টি জমা দেয়ার আগে বিতর্কিত কাজ করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু ঐ কমিটির একজন। তাই বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট ফেলে দেয়ার যে অভিযোগ, সে জন্য বিএনপিকে কিছু বলতে পারছেন না। দায়টা তার আছে। সেটা সব জেনেশুনে তিনি গ্রহণকরবেন। সেটা করেননি। বিএনপি স্রেফ জানিয়েছে ঐক্যমত কমিশন রাজনীতি ও গণতন্ত্রে বিভাজন তৈরি করে রেখে গেছেন। এটা ঠিক হয়নি।
অপরদিকে জামায়াত বিএনপিকে বিভিন্ন কিছুতে প্রধান উপদেষ্টা সহায়তা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় কি করবেন প্রধান উপদেষ্টা। সভা ডেকেছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের। সভা শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, গণভোট কবে হবে এটা রাজনীতিবিদদের থেকে সিদ্ধান্ত আসলেই শ্রেয়। এটা যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলো বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে যেন জানায়। ব্যাস, বল আবার রাজনৈতিক দলের কোর্টে।
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এর রেজাল্ট কি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে যাচ্ছে। এখন কে ডাকবে বৈঠক। কে ঐ বৈঠকে আসবে না আসবে না এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া বিএনপি দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২৩৭ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করে নাম ঘোষণা দিয়েছে। এ তালিকা অলমোস্ট ফাইনাল। ইতিমধ্যে বিএনপির ভোট উৎসব শুরু হয়ে গেছে। এমনি মুহূর্তে বসে নেই অন্য দলও। জামায়াত অনেক আগেই এ কাজ শেষ করে রেখেছে। এনসিসিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ব্যস্ত কি করবেন না করবেন। কারো সাথে জোট করবেন না আলাদা। অনেক হিসেব নিকেশ।
ভোটের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। ফলে সময় নেই। এ মুহূর্তে গণভোট নিয়ে দেনদরবারের সুযোগ কই। তাছাড়া জামায়াত কিছুদিন পিআর পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে ধুয়া তুলে মাঠ গরমের চেষ্টা করে অনেকটা ক্ষ্যান্ত দিয়েছে।
ইতিমধ্যে এনসিসি জামায়াতের এ দাবি অনেকটা আসন ভাগের দেন দরবার বলে উল্লেখ করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচিত হলে গণভোট নির্বাচনের দিন হলেও সমস্যা নেই। ‘গণভোট নির্বাচনের আগে না পরে হবে, সেটা প্রধান সংকট নয়।’
ফলে এমন অবস্থায় গণভোট ইস্যু আপাতত ফ্রিজে বলেই মনে হচ্ছে। একটা জাতীয় ভোট আয়োজনে তিন হাজার কোটি টাকার মতো খরচ। কদিন আগেও আয়ের চেয়ে বহু বেশি ঋণ শোধ করতে হচ্ছে সরকারকে এমনটা জানিয়েছেন। ফলে এ মুহূর্তে আলাদা গণভোট করে অর্থ তসরুপের বিলাসিতা অযৌক্তিক মনে করা হচ্ছে।
ফলে বিএনপির দেয়া সেই জাতীয় নির্বাচনের দিন জাতীয় জুলাই সনদের গণভোট এবং ঐ প্রস্তাবে এনসিসিসহ অনেক রাজনৈতিক দলগুলোর যে সম্মতি সে দিকেই যাচ্ছে সরকার। ফলে জামায়াতের পিআর এর মতো নভেম্বরের গণভোট দাবিও অনাদায়ী বুঝি থেকে গেল!
সরকারও থেমে নেই
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিষয়টি রাজনীতিবিদদের কোর্টে ছাড়লেও শেষ একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। আর সেটা হলো শীর্ষ তিন দলকে বুঝানোর জন্য তিনজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ তিন উপদেষ্টা তিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্তে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। ওই সূত্র আরো দাবি করে তারা অনেকটাই সফল। এবং সেটা জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের ব্যাপারে ঐক্যমত হওয়ার স্বীকৃতি আদায় করা। দুই দল বিএনপি ও এনসিপি তো আগ থেকেই ওই তরিখে রাজি। বাস্তবতার নিরিখে জামায়াতও ওই সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে যাবে বলে সূত্র দাবি করে।
জামায়াতের আমিরের মুখে ঐক্যের কথা
৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেছেন জামায়াত ইসলামের আমির ড. শফিকুর রহমান। বিমান বন্দরে তিনি রাজরৈতিক মতভেদ এড়াতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকতে পারে, সেটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, তবে মতবিরোধ নয়।
জামায়াতের আমিরের এমন বক্তব্যে একটা ঐক্যের সম্মতি প্রকাশ পেয়েছে।
দলটি ওইদিন রাতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদেরও এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।