০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৩:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নীতি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়ার নীতি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্ট


যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গত ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিতর্কিত ‘মিটারিং’ নীতি নিয়ে নবম সার্কিট কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আইনগতভাবে সীমান্তে উপস্থিত হয়ে আশ্রয় চাওয়ার মৌলিক অধিকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। নতুন এই সিদ্ধান্তে কোনো প্রশাসন সীমান্তে শরণার্থীদের আশ্রয় সীমিত বা বাধাগ্রস্ত করার আরো বড় সুযোগ পেতে পারে। গত ১৭ নভেম্বর আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের সেই আপিল গ্রহণ করে, যেখানে তারা নবম সার্কিটের রায় বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, সীমান্ত কর্মকর্তাদের ‘মিটারিং’ নীতির মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পা রাখতে বাধা দিয়ে মেক্সিকোতে আটকে রাখা হতো। এই বাধা দেওয়া আইন বিরুদ্ধ ও অসাংবিধানিক। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই পুরো আশ্রয়ব্যবস্থাকে স্থগিত করেছিলেন, তবুও বিচার বিভাগ মামলাটি এগিয়ে নিতে চায়, কারণ তাদের দাবি হলো সীমান্ত সংকট মোকাবিলায় মিটারিং অতীতে ডেমোক্র‍্যাট ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি-উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

মিটারিং শব্দটি আসে সীমান্তে একটি অঘোষিত কোটা পদ্ধতি থেকে, যার মাধ্যমে সীমান্ত কর্মকর্তা জানিয়ে দিতেন যে আজ আর কাউকে নেওয়া হবে না। আশ্রয়প্রার্থীকে মেক্সিকোর দিকে ফেরত পাঠানো হতো এবং বলা হতো, শূন্যতা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই নীতি প্রথম চালু হয় বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়ে, যখন টিজুয়ানা সীমান্তে হঠাৎ বিপুলসংখ্যক হাইতির নাগরিক উপস্থিত হন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এটি বিস্তৃত হয়ে পুরো দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে কার্যকর হয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় আরো কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপের ফলে মিটারিং কার্যত শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নীতি বাতিল করেন।

২০২১ সালে ফেডারেল জজ সিনথিয়া বাশান্ট মিটারিং নীতি যুক্তরাষ্ট্রের আইনের লঙ্ঘন বলে রায় দিয়েছিলেন। আশ্রয় চাইতে সীমান্তে হাজির যে কোনো ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকার এবং প্রক্রিয়ার সুযোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সরকারের। নবম সার্কিট কোর্ট ২১ ভোটে এই রায় বহাল রাখে। তবে ২৯ জন আপিল বিচারকের মধ্যে ১২ জন চেয়েছিলেন মামলাটি পুনরায় শুনানি হোক। ১২ জন বিচারকের পুনরায় শুনানি এই চাওয়া সুপ্রিম কোর্টের কাছে মামলাটিকে আরো গুরুত্ব দেয়।

মামলার পক্ষে আইনজীবী ও সংগঠন আল অত্রো লাদো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন আইন কি সীমান্তে উপস্থিত শরণার্থীদের আশ্রয় চাওয়ার অধিকার দেয়? নবম সার্কিট সঠিকভাবেই বলেছে, মার্কিন আইন সরকারকে বাধ্য করে যে তারা সীমান্তে উপস্থিত আশ্রয়প্রার্থীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দাবিগুলো বিবেচনার সুযোগ দেবে। টার্নব্যাক নীতি ছিল আইন এড়ানোর একটি অবৈধ রণকৌশল, যাতে কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। তারা আরো উল্লেখ করে, এ নীতির কারণে নারী, শিশু ও পরিবারগুলো মেক্সিকোর সীমান্তে ভয়াবহ অনিরাপদ অবস্থায় আটকে পড়েছিল, যেখানে অপহরণ, যৌন সহিংসতা, সশস্ত্র হামলা এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল ক্রমাগত।

সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানি করবে আগামী বছরের শীতের শেষ ভাগে বা বসন্তের শুরুতে। যদিও বর্তমানে মিটারিং নীতি কার্যকর নেই, তবুও এই মামলার ফলাফল ভবিষ্যতে যে কোনো প্রশাসন সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালত যদি মিটারিংকে বৈধতা দেয়, তবে ভবিষ্যতের যে কোনো সরকার সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ আটকাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে নিতে পারবে। আর যদি নবম সার্কিটের রায় বহাল থাকে, তবে সীমান্তে উপস্থিত যে কোনো ব্যক্তির জন্যই আশ্রয় চাওয়ার অধিকার পুনরায় শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই মামলার রায় তাই শুধু একটি পুরোনো নীতি নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার নীতি, আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। মামলায় সহ-আইনজীবী হিসেবে রয়েছে-আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল, সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড রিফিউজি স্টাডিজ, সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ড এবং ইনস্টিটিউট ফর কনস্টিটিউশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড প্রোটেকশন।

শেয়ার করুন