১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৯:৩৭:৩২ অপরাহ্ন


ট্রাম্প প্রশাসনের গ্রেফতার অভিযানে যাত্রীদের তথ্য দিচ্ছে টিএসএ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের গ্রেফতার অভিযানে যাত্রীদের তথ্য দিচ্ছে টিএসএ ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও নির্বাসন অভিযান জোরদার করতে বিমানযাত্রীদের তথ্য ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ) নিয়মিতভাবে যাত্রী তালিকা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর কাছে পাঠাচ্ছে। আইস এসব তথ্য নিজেদের ডেটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করছে এবং পরবর্তীতে বিমানবন্দরে তাদের আটক করতে কর্মকর্তাদের পাঠাচ্ছে। আইস-এর একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার কর্ম এলাকায় এ কর্মসূচির আওতায় যাদের নাম শনাক্ত করা হয়েছিল, তাদের প্রায় ৭৫ শতাংশকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই তথ্য বিনিময় কর্মসূচি বাস্তবেই নির্বাসন প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করছে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসূচিটির আওতায় টিএসএ সপ্তাহে একাধিকবার যাত্রীদের তথ্য আইস-এর সঙ্গে শেয়ার করছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, টিএসএর তথ্যভান্ডারে থাকা যাত্রীদের নাম আইস-এর ডেটাবেসের সঙ্গে মিলে গেলে তাদের একটি বড় অংশকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই উদ্যোগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বাইডেন আমলের সেই নীতিমালা বাতিল করেছেন, যার আওতায় বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বিমানে ভ্রমণ করতে পারতেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে টিএসএ ও ডিএইচএস এ ধরনের চর্চা আর সহ্য করবে না। এখন অবৈধ অভিবাসীরা কেবল দেশ ত্যাগের উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ স্বেচ্ছা নির্বাসনের ক্ষেত্রেই বিমানে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।

এদিকে গত শরতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মী সামি হামদিকে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আইস-এর হেফাজতে রাখা হয়। যদিও এ ঘটনায় টিএসএ-এর তথ্য শেয়ারিং কর্মসূচি সরাসরি দায়ী কি না, তা স্পষ্ট নয়। হামদির পরিবার জানায়, কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাসন আদেশ ছাড়াই তিনি স্বেচ্ছায় লন্ডনে ফিরে যান। পরিবারের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে তাকে অমানবিক পরিবেশে আটক রাখা হয়েছিল। হামদি নিজেও দাবি করেছেন, তার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাসন অভিযানে শুধু টিএসএ নয়, বরং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তথ্য ব্যবহার করছে। হোয়াইট হাউস অভিবাসন কর্মকর্তাদের ওপর প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার জন অভিবাসী গ্রেফতারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে বলে জানা গেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে কর সংক্রান্ত তথ্য, সোশ্যাল সিকিউরিটি, ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স এবং এসএনএপি (স্ন্যাপ) খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির তথ্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলো যদি অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য হস্তান্তরে সহযোগিতা না করে, তাহলে এসএনএপি সুবিধা বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন ডেটাবেস ব্যবহার করে নির্বাসন কার্যক্রম জোরদার করার এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে গোপনীয়তা, নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

শেয়ার করুন