৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৬:১৪ অপরাহ্ন


কেমন হল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৪
কেমন হল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড


অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে সদ্য দ্বায়িত্ব পাওয়া প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বাধীন বিসিবি নির্বাচক মন্ডলী কাল মঙ্গলবার দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা আইসিসি টি ২০ বিশ্বকাপের্ জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যতই উন্মাদনা থাকুক না কেন সবাই জানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখনো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে নিচের সারির দল।

নিয়মিত পরাজয়ের ফাঁকে ফাঁকে কালে ভদ্রে জয় আসে দলটির। আইসিসি রাঙ্কিংয়ে কখনো ৮ম বা কখনো ৯ম অবস্থান দলটির । বিসিবি অপরিকল্পিতভাবে কিছু চেষ্টা করে কিভাবে উন্নতি ঘটানো যায়। কিন্তু বিসিবির পরিকল্পনা যে পথে হাটে সে পথ শেষ করে আরো দশ বছর পরের পথে হেটে বসে আছে অন্য দলসমুহ। ফলে ওইসব দলের সঙ্গে খেলতে নামলে বরাবরের মতই পার্থ্ক্যটা ফুটে উঠছে প্রতিনিয়তই। এভাবেই চলছে।

ফলে এমন এক দল নিয়ে প্রতিটা বিশ্বকাপের আগেই দেশটির প্রিন্ট ,ইলেকট্রনিক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় জল্পনা কল্পনা বিনোদন ছাড়া কিছুই না। সীমিত বিকল্প নিয়ে স্কোয়াড ঘোষণায় নির্বাচকদের অনেক কিছু বিবেচনার সুযোগ ছিল না। স্থানীয় ক্রিকেটের যে হাল চাল সেখানে বিশ্বমানের টি ২০ খেলোয়াড় হাতে গোনা দুই একজন। অন্যদের কোয়ালিটি বিপিএল জাতীয় খেলার অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে হিসেব নিকেষ সেটা ঠাহরই করতে পারছে না অণ্যরা।



স্কোয়াড : নাজমুল হোসেন শান্ত( অধিনায়ক) ,তাসকিন আহমেদ ( সহ অধিনায়ক) , লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার ,তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয় , মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, রিসাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান , শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান শাকিব এবং তানভীর হোসেন। রিজার্ভ : হাসান মাহমুদ, আফিফ হোসেন


তবু এ আসরে বাংলাদেশ দল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমেরিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি ২০ সিরিজ খেলে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের গ্রূপে আছে দক্ষিন আফ্রিকা ,শ্রীলংকা ,নেপাল এবং নেদারল্যান্ডস।

দল নির্বাচন নিয়ে প্রথমেই আসবে তাসকিন প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ বোলিং আক্রমনের প্রধান অস্ত্র তাসকিন কি ম্যাচ ফিট? টুর্নামেন্টের আগে কি পুরোপুরি ফিট হবার সম্ভাবনা আছে? ১০০% ফিটনেস নাই এমন কাউকে স্কোয়াডে রাখা এবং তাকে সহকারী অধিনায়ক করার ঝুঁকি নেয়া কতটা যুক্তি যুক্ত হলো সময়ই বলে দিবে। তবে দলের এমন একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়কে কেন প্রচন্ড দাবদাহের সময় ৫০ ওভারের স্থানীয় ক্রিকেট খেলানো হয়েছিল? মুস্তাফিজকেই যেখানে আইপিএল থেকে ফিরিয়ে আনা হলো সেখানে তাসকিনের ব্যাপারে কেন ক্রিকেট অপারেশন উদাসীন? আর তাসকিন যখন অনিশ্চিত তখন অভিজ্ঞ পেস বোলিং অল রাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে স্কোয়াড থেকে ছেটে ফেলা হয়ত সঠিক হল না। বেশ কিছুদিন বিরতির পর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দলে ফিরে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিলো। একটি বা দুটি দুটি ম্যাচ দেখে প্রমাণিত এখজন পরিণত খেলোয়াড়কে বাদ দেয়া আমার বিবেচনায় ঠিক হয় নি। তানজিম হাসান শাকিব থেকে সাইফুদ্দিন দলে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারতো।


এর পর আসি ব্যাটিং প্রসঙ্গে। সমস্যা সঙ্কট ওপেনিং পার্টনারশিপ , টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে । তামিম ইকবাল ধাঁধাঁ কেন মিটানো গেলো না? দেশ সেরা ওপেনার না থাকায় ওপেনিং পার্টনারশিপ কিছুতেই স্থিতু হচ্ছে না। লিটন দাস বরাবরের মত রান খড়ায়। আত্মবিশ্বাস শুন্যের কোথায়। সৌম্য এই আছে এই নেই। এরপরও এদের দলে রাখা কোন অর্থ কে জানে। তরুণ তানজিদ তামিম স্বল্প অভিজ্ঞ। পারভেজ ইমনকে স্কোয়াডে নিয়েও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে কেন যাচাই করা হলো না। এটা অপরিকল্পনার ফসল। লিটন ,সৌম্যর উপর যত বিনিয়োগ করেছে বিসিবি সেই তুলনায় অন্য বিকল্প খুঁজে পেতে কিছুই করে নি । অগত্যা তাই নির্বাচক মন্ডলী লিটন ,সৌম্য এবং তানজিদ তামিমের উপর ভরসা রেখেছে। আশা করি টপ অর্ডারে নাজমুল শান্ত , সাকিব আল হাসান এবং তাওহীদ হৃদয় ভালো করবে। মিডল অর্ডারে বর্ষীয়ান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখনো দলের ভরসার স্থল। সঙ্গে আছে জাকির আলী এবং রিশাদ হোসেন। আমি মেহেদী মেরাজ এবং সাইফুদ্দিন স্কোয়াডে থাকলে খুশি হতাম। হয়তো দলের কম্বিনেশন এবং কোচ-ক্যাপ্টেনের চাহিদাকে সম্মান জানিয়েছে নির্বাচক মন্ডলী। স্পিনার হিসাবে তানভীর কোন ভাবেই মেহেদী মিরাজ থেকে আগে বিবেচনার সুযোগ নাই।

মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই দলের সামর্থ সীমিত। নিয়মিত ১৫০ বা ১৬০ করতে পারে আগে ব্যাটিং করে. যদি সাকিব বা রিয়াদ বড় ইনিংস খেলে তাহলে হয়ত কোন ম্যাচে ১৮০ হতেও পারে, এখন কিন্তু টি ২০ ক্রিকেটে নিয়মিত ২৩০- ২৪০ রান হচ্ছে আবার সেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিচ্ছে পরে ব্যাটিং করা দল। নড়বড়ে টপ অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ কত দূর কি করবে নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ যদি প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারে সেটি হবে বিশাল অর্জন। আর তা করতে হলে বাংলাদেশকে শ্রীলংকা অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা একটি দলকে হারাতে হবে। যারা বিশ্ব ক্রিকেট অনুসরণ করেন তাঁরা জানেন কাজটি আদৌ সহজ না। যাহোক ভালো মন্দ মিলিয়ে বাংলাদেশের একটি স্কোয়াড যাচ্ছে বিশ্বকাপে। আশা থাকবে কিন্তু স্বপ্ন দেখবো না.

প্রতিবারই ক্রিকেটের বিশ্ব আসরের আগে শোনা যায় ভবিষ্যতের বিবেচনায় দল গঠন করা হয়। এই তার নমুনা? দীর্ঘ ১৫ ১৬ বছর ধরে বিসিবিতে একই সব কর্মকর্তা। ফলে ভবিষ্যৎ কবে বর্তমান হবে কেউ জানে না। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যন্য দল সঠিক পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উন্নয়ন চা গাছের বেড়ে ওঠার মত।

শেয়ার করুন