০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:১৯:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্টিত , সহজ গ্রুপে ব্রাজিল - যুক্তরাষ্ট্র ডি গ্রুপে স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া


জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসে জাতি
বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন থেকে উল্টোপথে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২২
বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন থেকে উল্টোপথে


৯ আগস্ট ১৯৭৫। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে মহান নেতার জ্বালানি দ্যূতিয়ালির কারণে বাংলাদেশ মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং মূল্যে ক্রয় করেছিলেন ৫ টি প্রধান আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র। তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা গ্যাস ক্ষেত্রগুলো সেই দিন থেকে এই যাবৎ ৪৭ বছর জাতির জ্বালানি নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। সেই মহান অর্জনের স্মরণে গত কয়েক বছর যাবৎ পালিত হয়ে আসছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস। এবারের দিনটি এসেছে এমন সময় যখন দেশ এবং জাতি বৈষয়িক জ্বালানি সংকট, ভ্রান্ত জ্বালানি নীতি আর কৌশলের কারণে কঠিন জ্বালানি সংকটে ভুগছে। তীব্র দাবদাহের সময় দেশব্যাপী চলছে অসহনীয় বিদ্যুৎ লোড শেডিং, সকল শ্রেণীর গ্রাহক ভুগছে তীব্র গ্যাস সংকটে।  বঙ্গবন্ধু জ্বালানি দর্শন বিচ্যুতি এই সংকটের প্রধান কারণ বলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক সবাই।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন অফুরন্ত জ্বালানি,খনিজ সম্পদ সম্ভবা প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা আর নিজস্ব জনবল দক্ষতা গড়ে তুলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তুলবেন। তাঁর জ্বালানি দর্শনের মূল কথা ছিল নিজস্ব জনবল দিয়ে মাটির নিচে লুকোনো সম্পদ তুলে শিল্পায়ন আর অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচনা করবেন। দেশের কনস্টিটিউশনে সংযুক্ত করলেন দেশের সম্পদের উপর জনগণের সার্বভৌমত্ব, সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশ গ্যাস তেল মিনারেল কর্পোরেশন ( বিওজিএমসি), পরবর্তীতে এটি ভেঙে করলেন বিওজিসি (এখন পেট্রোবাংলা), বাংলাদেশ মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (বিএমডিসি)। নিজের দুই বিশিষ্ট উপদেষ্টা খ্যাতিমান ভূতত্ত্ববিদকে পদায়ন করলেন দুই কর্পোরেশনের প্রধান করে। সূচনা হলো ব্যাপক কর্মযজ্ঞের। আজ ৪৭ বছর পরে বিএমডিসি বিলুপ্ত। পেট্রোবাংলা দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্পোরেশনে পরিণত, সম্পূর্ণভাবে আমলা নিয়ন্ত্রিত সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ভীষণ ভাবে লঙ্ঘিত।

বঙ্গবন্ধু ৯  আগস্ট ১৯৭৫  দেশে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি শেল বিবি থেকে ৫ টি গ্যাস কূপ কিনলেন জ্বালানি দ্যূতিয়ালির কল্যাণে। পরবর্তীতে কিছু নেতা আর সরকার বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাস কূপ তুলে দিয়েছেন বিদেশী কোম্পানির কাছে। বঙ্গবন্ধু বলতেন, সোনার বাংলা গর্তে হলে সোনার মানুষ চাই। ঠিক যেমন ভূমি পুত্রদের দিয়ে মালয়েশিয়ার বীর সন্তান মহাথির মোহাম্মদ গড়ে তুলেছেন পেট্রোনাস সেদেশের ভূমিপুত্রদের দিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন কাজে সাধারণ বিদেশী পরামর্শক নির্ভর। 

শতকরা শতভাগ দেশি জ্বালানি নির্ভরতা থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ। ভুল নীতির কারণে ৬৫ টিসিএফ সমতুল্য উন্নত মানের কয়লা সম্পদ রয়েছে মাটির নিচে, জলে স্থলে গ্যাস তেল সম্পদ আছে লুকিয়ে।  অথচ বিপুল চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুকে বাংলাদেশ এখন হাস  ফাঁস করছে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে। বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানির অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারে নি, বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের জ্বালানির অগ্নিমূল্যের চাপ বহন করতে অক্ষম।  তাই ২২০০০ + গ্রিড বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়েও বাংলাদেশ পারছে না ১৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। 

স্বল্প সময়ে উৎপাদন বন্টন মডেল ডকুমেন্ট তৈরি করে বঙ্গবন্ধু বঙ্গোপসাগরে ৬ আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিকে ৮ ব্লকে তেল অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বিশাল সাগরের সম্পদ আরোহণে পুরোপুরি নিষ্কৃয়।

জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি দর্শন থেকে উল্টোপথে চলছে। শতকরা শতভাগ দেশীয় জ্বালানি থেকে ছুতে চলছে ৯০% আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে। বর্তমান সংকট হয়তো সরকারকে ঘুম ভাঙানি গান দিয়ে জাগিয়ে তুলবে। নিজেদের জ্বালানিকে অগ্রাধিকার না দিলে কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে না।


শেয়ার করুন