০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:৫২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশে অল্প খরচে ক্যানসার শনাক্ত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
দেশে অল্প খরচে ক্যানসার শনাক্ত চারজন তরুণ ফারদিন মাহবুব, রাশেদুল ইসলাম, সৌহার্দ্য ব্যানার্জি আকাশ এবং সৈয়দ আব্দুল কাদির আল-নাহিয়ান


চার তরুণের গবেষণা


একটা ক্ষুদ্র এন্টেনার সাহায্যেই মাইক্রোওয়েভ ইমেজিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করা যাবে। খরচও হবে কম। বেঁচে যাবে সময়। এমন পদ্ধতি তৈরি করেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের একদল তরুণ গবেষক দল। সেই চারজন তরুণের নাম হলো ফারদিন মাহবুব, রাশেদুল ইসলাম, সৌহার্দ্য ব্যানার্জি আকাশ এবং সৈয়দ আব্দুল কাদির আল-নাহিয়ান। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ার প্রজেক্টে তারা একটি এন্টেনা ডিজাইন এবং ফেব্রিকেশন করে যেটি  কিনা শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্যানসার এবং টিউমার শনাক্তকরণে সক্ষম। 

এ ব্যাপারে ফারদিন মাহবুব জানায় দিন দিন ক্যন্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে বিশ্বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত্র হয়েছে এবং এর মধ্যে ৯.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। গবেষকদের মতে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্তকরণ করা গেলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু ক্যানসার শনাক্তকরণের যে পদ্ধতি গুলো রয়েছে তার মধ্যে এক্সরে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান অন্যতম। এ পদ্ধতিগুলো বেশ ব্যয়বহুল এবং এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে বার বার এক্সরে বা এমআরএই করার ফলে ক্ষতিকর নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের প্রভাবে ক্যানসার আক্রান্ত স্থানে ক্যানসার হবার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। আর এজন্য বর্তমানে ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য আবিষ্কৃত সবচেয়ে কার্যক্ষম এবং কম ক্ষতিকর পদ্ধতি হলো মাইক্রোওয়েভ ইমেজিং। 

ফারদিন মাহবুব বলেন, এন্টেনার সাহায্যে মাইক্রোওয়েভ  ইমেজিং এর মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছে। এবং তারা স্নাতক পর্যায়ে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের রেকর্ডও গড়েছে। তাদের প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ১৩ টি যার সবগুলোই আন্তর্জাতিক প্রকাশক সংস্থা আইইইই এবং স্প্রিনজার ( IEEE এবং SPRINGER)-এর মত  বিশ্বের বড় বড় কনফারেন্সে প্রকাশিত হয়েছে। স্নাতক শেষ পর্যায়ে এত সংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ বাংলাদেশে এটিই প্রথম। 

কীভাবে এটা কাজ করে?

গবেষক দলের ফারদিন মাহবুব ’দেশ’ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধিকে জানায়, এন্টেনাটি একটি ভেক্টর নেটওয়ার্ক এনালাইজার (ভিএনএ) মেশিনের সাথে সংযুক্ত করা থাকবে। আর এই ভিএনএ মেশিনের সাথে সংযুক্ত থাকবে একটি কম্পিউটার। এন্টেনাটি শরীরের  ক্যানসার আক্রান্ত স্থানে একটি নিদিষ্ট দূরুত্বে প্রতিস্থাপন করলে এটি মানবদেহের আক্রান্ত অংশ থেকে সংগ্রহকৃত  সিগন্যাল ভিএনএ মেশিনে প্রেরণ করবে এবং তখন ভিএনএ মেশিনের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারটিতে  এলগরিদমের মাধ্যমে আক্রান্ত  অংশের ইমেজ ভেসে উঠবে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যে, এ পদ্ধতিতে প্রাথমিক অবস্থাতেই ক্যানসার শনাক্ত করা যাবে এবং এই প্রক্রিয়ায় নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের ক্ষতিকর কোনো প্রভাব থাকবে না। এন্টেনাটি বানাতে সর্বমোট আড়াই হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এন্টেনাটিতে থাকবে একটি সাবস্ট্রেট ম্যাটেরিয়াল যার মূল্য ১৫০০ টাকা। তাছাড়া আরো থাকবে কপারের পেচ এবং কপারের গ্রাউন্ড পেন যার মূল্য ৫০০ টাকা। সাবস্ট্রেট মেটেরিয়াল, কপার পেচ এবং কপার গ্রাউন্ড পেনকে একত্রে সংযুক্ত করার জন্য থাকবে একটি ওয়েভগাইড পোর্ট যার মূল্য ১০০ টাকা। তবে ভিএনএ মেশিনটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এই পদ্ধতিটি পুরোপুরি সফল করার জন্য প্রয়োজন সরকার মহলের সার্বিক সহায়তা। 

ফারদিন মাহবুব বলেন, তাদের এই প্রোজেক্টটিতে সার্বিক সহায়তায় ছিলেন তিন জন শিক্ষক তারা হলেন রাজা রাশিদুল হাসান (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ইইই), ড. এম. তানসির আলী (সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ইইই), ড. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান (অ্যাসোসিয়েট ডিন, ইইই)। তাদের এই প্রজেক্টটি প্রথমে ডিনস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। পরে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল প্রজেক্ট অফ দ্যা ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং এর জন্য তারা এআইইউবির ২০তম সমাবর্তনে উপাচার্য অ্যাওয়ার্ড (গোল্ড মেডেল) অর্জন করে। বর্তমানে তারা বিভিন্ন এন্টেনার সাহায্যে কিভাবে শরীরের বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে।  তারা ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে এবং বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।  যার মধ্যে রয়েছে বেস্ট পেপার এবং বেস্ট প্রেজেন্টারের পুরস্কার। ইতিমধ্যে রাশেদুল ইসলাম দুইটি এবং ফারদিন মাহবুব তিনটি আলাদা গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য বেস্ট প্রেজেন্টার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং গবেষণায় অভাবনীয় অবদানের জন্য এআইইউবি নিজেদের ২০তম সমাবর্তনে ফারদিন মাহবুবকে ড. আনোয়ারুল আবেদীন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (গোল্ড মেডেল) প্রদান করে। ইতিমধ্যে ফারদিন মাহবুব ৫ টি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এবং একটি হাই ইম্প্যাক্ট জার্নালে রিভিউয়ার এবং টেকনিকেল প্রোগ্রাম কমিটি মেম্বার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে।

রিসার্চের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ফারদিন মাহবুব এবং রাশেদুল ইসলাম অনেক ভালো। ইতিমধ্যেই ফারদিন মাহবুব বিভিন্ন পদক অর্জন করেছেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে। তার সিজিপিএ ৩.৯৭ হবার কারণে তাকে Summa Cum Laude  [গোল্ড মেডেল] প্রদান করা হয়েছে যেটা একাডেমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সম্মাননা। পাশাপাশি, ফারদিন মাহবুব টানা ৪ বার অর্জন করেছে Deans List Honorable Mention Award  ভালো ফলাফলের জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি, ফারদিন মাহবুব নানা স্বেচ্ছাসেবক কাজেও পারদর্শী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যেমন IEEE AIUB Student Branch , HULT Prize,  ইত্যাদি। রাশেদুল ইসলামের সিজিপিএ ৩.৮৭ হবার কারণে তাকে Magna Cum Laude  [সিলভার মেডেল] প্রদান করা হয়েছে যেটা একাডেমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় সব্বোর্চ সম্মাননা। অন্যদিকে রাশেদুল টানা ৩ বার অর্জন করেছে Deans List Honorable Mention  অধিফ ভালো ফলাফলের জন্য।


শেয়ার করুন