০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:৪৮:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


রোজার মাহাত্ম্য
ড. এম. এম. আদেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৪-২০২২
রোজার মাহাত্ম্য


রমজানের রোজা অবশ্য করণীয় হওয়ার পূর্বে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনের ১০ই মুহররমের রোজা রাখতেন। তাঁর সাহাবিদের ওইদিন রোজা রাখতে বলতেন। ৬১৯ সালে হিজরতের তিন বছর পূর্বে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। নামাজে কিবলা পরিবর্তন করে জেরুজালেম থেকে ক্বাবার দিকে করা ও রমজানের অবশ্য করণীয় রোজা শুরু হয় হিজরতের দু’বছর পরে ৬২৪ সালে। নামাজ ও রোজা অবশ্য করণীয়ের মধ্যে মধ্যে পাঁচ বছরের ব্যবধান রয়েছে। রমজানের রোজা অবশ্য করণীয়ের পর মুহররমের আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হয়ে যায়।  ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ রোজা। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে পাঁচবার গোসল করলে যেমন পানি গায়ে ময়লা জমতে দিয়ে থাকে না, তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মুছে দিয়ে থাকেন। (উৎস: বুখারি, ৫০৫; মুসলিম ৬৬৭)। উল্লিখিত হাফেজের মতো ইমানদার হলে এই হাদিসের ফল আশা করা যায় না। 

মাস ধরে রোজা রাখার ফলে আমাদের মঙ্গলের অ্যাকাউন্ট নম্বরে অনেক কল্যাণ জমা হয়ে থাকে। রোজার কড়া শৃঙ্খলায় আমাদের ইমান মজবুত হয়ে থাকে। আমরা অনেক সংযমী হয়ে উঠি। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘প্রত্যেক নেক কার্যের ছওয়াব ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত প্রদান করিয়া থাকি। কিন্তু রোজা কেবল আমারই উদ্দেশ্যে রাখা হয় বলিয়া ইহার প্রতিদান আমি স্বয়ং দিব। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, যারা রিপুগুলিকে দমন করিয়ার খাঁটি পথে অটল থাকিবে, তাহাদিগকে অগণিত ছওয়াব প্রদান করা হবে’ (সুরা জুমার, ৩৯:১০)। যদিও প্রত্যেক ইবাদতই বিশ্বপালক আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে করা হয়, তথাপি রোজা বিশেষ করিয়া তাঁহার জন্য নির্ধারিত। যেমন সমগ্র বিশ্বজগৎ তাঁহার রাজ্য হলেও কাবা শরিফকে তাঁর ঘর বলা হয়, রোজা সম্বন্ধেও তদ্রæপ বুঝতে হবে। 

রাসুল্ল্লুাহ (সা.) বলেছেন যে, ছবর ইমানের অর্ধেক আর ছবরের অর্ধেক রোজা। তিনি আরো বলেছেন যে, রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, আর শ্বাস-প্রশ্বাস তসবিহ পাঠসদৃশ এবং প্রার্থনা নির্ঘাত কবুলযোগ্য। তিনি (সা.) আরো বলেন যে, রমজান মাস আসার সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতের দ্বার উন্মুক্ত ও দোজখের দ্বার  বন্ধ করে দেয়া হয়, শয়তানকে তার দলবলসহ বন্দি করা হয়। পাপীদের রমজান মাসেও পাপকর্ম দেখে মনে হয় যে, একমাত্র রোজাদার ব্যক্তির জন্য শয়তান গোষ্ঠী বন্দী থাকে। 

ইসলামের সব ইবাদতের মধ্যে রোজার ইবাদতটা সবচেয়ে দীর্ঘণ স্থায়ী। একদিনের রোজার মধ্যে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চার ওয়াক্তই আদায় করতে পারি। নামাজ স্বল্পণ স্থায়ী ইবাদত। নামাজকে ঠিকমতো সমাধা করতে আমাদের শারীরিক ও মানসিক  উভয় দিকেরই সংযম প্রয়োজন। আমাদের পাপ কর্ম করার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি  দুই ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।  দ্বিতীয় ওয়াক্তের নামাজ দুই ওয়াক্তের ব্যবধানে কৃত পাপ ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়।  এর অর্থ এই নয় যে, ইচ্ছা করে যত পাপ করি নামাজে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে দিবে। আমরা আমাদের নিয়ত অনুযায়ী পুরস্কৃত হই। অন্তর্যামী আল্লাহ আমাদের নিয়ত অবগত থাকেন। সহকর্মীর থেকে শোনা যে, এক হাফেজ জেলখেটে এসে তাকে বলেছে এটা তার প্রাপ্য ছিল; কারণ ওই হাফেজ ইমামতি করতেন, আবার রাতের বেলায় ডাকাতিও করতেন। 

আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহর বান্দা অবশ্যকরণীয় ও ঐচ্ছিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। বান্দা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে যে পর্যায়ে আল্লাহ স্বয়ং তার শ্রবণেন্দ্রীয়, দর্শনেন্দ্রীয়, ধরার হাত আর হাঁটার পা হয়ে যান। অর্থাৎ আল্লাহ তাকে বলে দিবে কি শুনতে হবে, কি দেখতে হবে, কীভাবে হাত ব্যবহার করতে  হবে, কোথায় কীভাবে পদব্রজ ব্যবহার করতে হবে। (বুখারি ৮নং খন্ড, হাদিস নং-৫০৯)।

তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট ইসলাম সম্বন্ধে জানতে এলে উনি (সা.) বলেন, পাঁচবার অবশ্যকরণীয় নামাজ আদায় করতে, অবশ্যকরণীয় রোজা করতে, অবশ্যকরণীয় জাকাত দিতে আর এর সঙ্গে তার ইচ্ছাধীন ঐচ্ছিক ইবাদতসমূহ করতে। ওই ব্যক্তি এগুলো পালনে সংকল্প করলো।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন যে ও কৃতকার্য হবে।  (বুখারি ও মুসলিম)।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন কেউ রমজানের রোজা অসমাপ্ত অবস্থায় মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীকে সেগুলো সমাপ্ত করতে হবে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন আল্লাহ পথে একদিনের রোজা রোজাদারের মুখ দোজখের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে নিয়ে যায় (আবু সাঈদ আল-খুদরী বর্ণিত)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, সংসারে বা প্রতিবেশীর সঙ্গে ছোটখাটো অশান্তির প্রায়শ্চিত্ত নামাজ, রোজা, ও দান-খয়রাত দিয়ে করা যায়। বড় ধরনের অশান্তি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আসে।  এগুলো হয় অফুরন্ত ও পরস্পর নির্ভরশীল। যার অন্তর এগুলো গ্রহণ করবে তার অন্তরে কালো দাগ পড়বে আর যার অন্তরে এটা গ্রহণ হবে না তার অন্তরে সাদা দাগ পড়বে। কালো দাগ মার্কা অন্তর হবে একটা ডুবন্ত জাহাজের মতো। এই অন্তর ভালো-মন্দ বিচার করতে পারবে না ও গভীর আসক্তি সম্পৃক্ত হবে। সুশৃঙ্খলভাবে রোজা পালন এই ভাবাবেগ দমন করতে পারে। জনসংযোগ মাধ্যমে জানা যায়, দেশে মাদরাসার অধ্যরা ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে। কেউ কেউ আবার মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করে এই অপকর্ম করে থাকে।  এই অপরাধ শুধু যৌন নির্যাতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ঘুষের বাণিজ্যে স্থবিরতা আসে না।

শেয়ার করুন