১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৩:২৬:১১ পূর্বাহ্ন


নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারি দলের
ইদানীং আবার মাইনাস টু আলোচনায়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
ইদানীং আবার মাইনাস টু আলোচনায় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা


দেশি-বিদেশি মহলের কাছে বার বার অঙ্গীকার করছে বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচনের। কিন্তু অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং সরকার প্রধানসহ মন্ত্রী, সাংসদের অতিকথন এবং আক্রমণাত্মক কথাবার্তার কারণে ভরসা পাচ্ছে না কোনো মহল। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো দলীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন শতকরা শতভাগ নিরপেক্ষ হয়নি। সূক্ষ্ম স্থূল কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিকাংশ বিরোধীদল চাইছে একটি নিরপেক্ষ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যেখানে সব ভোটার সুষ্ঠু পরিবেশে নিরাপত্তায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। যদি অধিকাংশ দলের সম্মতিতে এই ধরনের নির্বাচন হয়, তবে অনেক উন্নয়ন করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত করা বর্তমান সরকারের ভয় কোথায়? 

সরকারের অনেক সাফল্যের পাশে অনেক ব্যর্থতা আছে। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে একমাত্র সরকারি দলের সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী আছে। বহু দলের সম্মিলনে সৃষ্ট বিরোধী ফ্রন্ট নিরপেক্ষ ভোট হলেই জিতে সরকার গঠন করবে বাস্তবতার বিবেচনায় সেই ধারণার ভিত্তি নেই। 

বিরোধীদল সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য অনেক সত্য-মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করবেই।  হুমকিধমকি দেবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেটি স্বাভাবিক। কিন্তু নিরপেক্ষ, অর্থবহ নির্বাচনের জন্য ময়দানি হুমকিধমকি বন্ধ করতে হবে। বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কথার জবাব দিয়ে কি মাইলস্টোন অর্জন করছে সরকারি দলের মন্ত্রীরা। বিরোধীদল সভা-সমিতি, মিছিল, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে লোকসমাবেশ করলে ভীত কেন হবে সবচেয়ে জনপ্রিয় দাবি করা সরকারি দলটি। মন্ত্রীদের বরং নজর দেওয়া জরুরি দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি কীভাবে সামাল দেওয়া যায়? কীভাবে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ১৫ বছরের তিন টার্মে মন্ত্রী সাংসদদের হাত ধরে অনেক দুষ্কৃতকারী সরকারি দল, অঙ্গ সংগঠন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ করেছে। অনেক সরকারবিরোধী মানুষ সরকারের মধ্যেই ঘাপটি মেরে আছে। ইতিহাস বলে ১৯৭৫, ২০০১ নিজেদের দলের নেতা-নেত্রীরাই বিরোধী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের ভরাডুবি ঘটিয়েছে।  ১৯৯০ পরবর্তী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি কিছু নেতা-নেত্রীর অতি কথনের কারণেই। 

জানি না কেন সরকারি দলের নেতাদের এতো কথা বলতে হবে? কোনো সংকট হলে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া গতি নেই। অন্য কোনো নেতা-নেত্রী সাধারণ সমস্যার সমাধান দিতে পারে না।

বিরোধীদল সমাবেশ ডাকলেই পাল্টা সমাবেশ ডাকতে হবে কেন, এ প্রশ্ন সর্বত্র। ঢাকায় এই ধরনের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে মারাত্মক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। জনগণ এ কারণে সরকারের ওপর বিরক্ত। জানি সরকারপ্রধান কয়েকটি মেগা প্রকল্প আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর নির্বাচনকালীন কেবিনেট ঘোষণা করবেন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করার কথা নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচন কমিশন বিষয়ে ন্যূনতম সমঝোতা কি হতে পারে না? সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধীদল নিজ নিজ অবস্থানে গো ধরে বসে থাকলে কারো লাভ হবে না। বরং সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জরুরি অবস্থা আসতে পারে। তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। ইদানীং আবার মাইনাস টু আলোচনায় এসেছে। অনেককেই এ ধরনের কথাবার্তা ইশারা ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করছেন। যা দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জন্য ভয়ানক বার্তা। দেশের প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির সমাধান রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সমাধান সম্ভব। এখনো সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। আশা করি দেশপ্রেমিক রাজনীতিকরা দেশের কল্যাণে সঠিক কাজটি করবেন। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সংঘাতে নয়, সমঝোতায় আসবে সমাধান।

শেয়ার করুন