০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:০০:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে সাইফুল হক
এটাকে আমি নাম দিয়েছি দুধ-ভাতের নির্বাচন
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
এটাকে আমি নাম দিয়েছি দুধ-ভাতের নির্বাচন সাইফুল হক


বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, এটাকে তো আমি নাম দিয়েছি দুধ-ভাতের নির্বাচন। বাচ্চারা আগে যেভাবে দুধ-ভাত দুধ-ভাত খেলতো। যেটাকে আসলে মানুষ নির্বাচন হিসাবে মনে করে না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: সব মিলিয়ে বর্তমানে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন?

সাইফুল হক: সার্বিক পরিস্থিতি বলতে গেলেতো বলতে হয় যে দেখা যাচ্ছে সরকার জবরদস্তি করে আরেকটি পাতানো নির্বাচন করে ফেলতে চাচ্ছে। এধরনের পরিস্থিতি দেশের জন্য রাজনৈতিক দুর্যোগ ডেকে আনবে। এভাবে জবরদস্তিমূলকভাবে নির্বাচন করে ফেলার পায়তারার-তো বিপদ আছে। দেশে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপসহ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটার সাথে দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট যে দেখা দিয়েছেÑ সব মিলিয়ে দেশ যে নজীবিহীন রাজনৈতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও তার সাথে কূটনৈতিক চাপে পড়ে যাচ্ছে। এই তিনটি চাপ মোকাবেলা করতে গিয়েতো আমরা আসলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধে পড়তে যাচ্ছি। আর এটা তো বুঝতেই পারছেন এধরনের কাজ করতে গিয়ে বিশাল জনগগোষ্ঠীর মতামত উপেক্ষা করছে সরকার। তারা এটা করতে গিয়ে বিশাল একটা ভোটারের ভোট দেয়ার অধিকার ক্ষুন্ন করে ফেলছে। এসব কিছু উপেক্ষা করে যা করা হচ্ছে তাকে-তো মানুষ নির্বাচন হিসাবে নেয়নি। এটাতো এক ধরনের রাজউকের প্লট বরাদ্দের মতো। কিন্তু এভাবেই সরকার যদি ব্যাপক প্রতিবাদ প্রতিরোধ বা লাশের উপর দিয়ে গিয়েও নির্বাচনটা করতে চায় তাহলে-তো সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। রাষ্ট্রের মধ্যে আরো বিভেদ বিভাজন, প্রতিহিংসা তৈরি হবে। আমি আশঙ্কা করছি যে আফ্রিকার মতো দেশের মধ্যে কয়েকটি যে দেশ আছে যাতে কোনো গণতন্ত্র বা সভ্যতা বলে কিছু নেই-বাংলাদেশ না তেমন ধরনের একটি দেশের মত না হয়ে যায় বা এরা নিয়ে যাচ্ছে। 

দেশ: আচ্ছা বিষয়টি এরকম কি-না আপনারা রাজনৈতিকভাবে জনগণকে আপনাদের দাবির ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। বিবোধী দলের আন্দোলন ব্যর্থ করে দেয়া হলো- বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী জনগণের কাছে অধিকভাবে গ্রহণীয় হয়েছে। কারণ তারা দেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে জনগণকে আস্থায় নিয়েছে। তাই আপনাদের ডাকে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না-বিষয়টা কি এরকম কি-না?

সাইফুল হক : না না ..এভাবে তো জনসমর্থন আছে বলে তো বোঝা যায় না..। জনসমর্থন বুঝতে চাইলে তো একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অর্থ্যাৎ একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের দিকে যেতে হতো তাদের। এখন অবস্থাটা কি? প্রধান প্রতিপক্ষকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা হচ্ছে। প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করবে। দেখেন তারা যাদের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে-এটাকে তো আমি নাম দিয়েছি দুধ-ভাতের নির্বাচন। বাচ্চারা আগে যে ভাবে দুধ-ভাত দুধ-ভাত খেলতো..। যেটাকে আসলে মানুষ নির্বাচন হিসাবে মনে করে না। মাঠে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই..। যা আছে কিছু ছা-পোষা..যে গুলাকে মানুষ আসলে কোনো দিনই বিরোধী দলই মনে করে না..। এটাতো আমি দেখি সরকারের রাজনৈতিক পরাজয়।

দেশ: আসলে আমি বলতে চাই আপনারা সরকারের রাজনৈতিক চালে ভুল করে ফেলেছেন বলে মনে করেন কি-না?

সাইফুল হক: না না (একটু হেসে..)। আরে আন্দোলনে চড়াই উৎড়াই আছে। এক পা আগালে দু’পা অনেক সময় পিছিয়ে আসতে চায়। আন্দোলন কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাতো জনগণ বুঝেছে বিএনপি-গণতন্ত্র মঞ্চসহ মাঠে আন্দোলনরত দলটির দাবিটা-তো ন্যায্য..? তা-ই নয় কি? এসব তো কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের দাবি না। জনগণের দাবি। হা কিছুটা চাপে পড়েছে। কিন্তু আমি আশা করি মানুষ সহসা ঘুরে দাঁড়াবে। এবং এইবারের নির্বাচন যে অতীতের দুটো নির্বাচনের মতো হতে যাচ্ছে সে ব্যাপারেতো কারো সন্দেহ নেই। এভাবে তারা মানে ক্ষমতাসীনরাতো শেষ রক্ষা পাবে না। 

দেশ: আচ্ছা বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু প্রশাসনির পদক্ষেপ নিয়েছে- থানায় থানায় বদলি, ২ পুলিশ কমিশনার, ১ ডিসি ও ৫ এসপিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে..এগুলি কি আমলে নেন না। মানে এই ইসি’র অধীনে নির্বাচনে নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ ছিলো?

সাইফুল হক: আরে ধুর..এগুলিতো আমার কাছে কোনো মূল্য নেই। কেনো মূল্য নেই? যারা নির্বাচন করছে তাদের মধ্যে একশত ভাগ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে লাভ কি? এধরনের প্রশ্ন করে আসলে ভালোই করেছেন। আওয়ামী লীগ তো এখন তার জুনিয়র র্পাটনারদের সাথে খেলছে। এখানে আসলে নির্বাচন নির্বাচন খেলা হচ্ছে। এখানে একশত ভাগই যদি নিরপেক্ষই হয় তাতে কি?

দেশ: কিন্তু একশতভাগ নিরপেক্ষতাতো দেখালো..

সাইফুল হক: আরে এটাতো নিরপেক্ষতা দেখালো..এগুলিতো হাস্যকর প্লট। কাউকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিয়ে গেলে কি যায় আসে? সব জায়গায়তো সরকারের অনুগত লোকজন। এগুলি কার্যত কোনো অর্থই বহন করে না। জনগণের কাছে এর কোনো অর্থ হয় না। আসলে এখানে নির্বাচন নির্বাচন একটা পরিবেশ দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব করেতো নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণ করা যাচ্ছে না। 

দেশ: একটা প্রশ্ন বারবার আসে..তা-হলো বিএনপিসহ সমমনা যারা আন্দোলন করছে তারা সম্পূর্ণ বিদেশীদের দিকে তাকিয়ে আছে-বিষয়টি তা-ই। মানে আপনারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞার অপেক্ষায় আছে?

সাইফুল হক: দেখেন প্রথমত কথা হচ্ছে বিদেশীরা কখনো কোনো দেশে পরিবর্তন এনে দিতে পারে না। বুঝতে হবে লড়াইটা আমাদের..সে লড়াইয়ে মানুষ মরিয়া হবে। সুতরাং এখানকার মানুষেরা এখানে যে ধারাবাহিক আন্দোলনে মধ্যে আছে..মানুষকে রাস্তায় নেমে সেই প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদেশীদের নৈতিক সমর্থন আমরা চাইবো। যারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলে..বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলে..সেক্ষেত্রে তারা যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তা-হলে আমরা স্বাগত জানাবো। প্রবাসী কেউ এসে আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে? এমন ধারণা অতীতেও ছিলো না..এখনো কাজ করছে না। 

দেশ: এটা তো ঠিক যে বিদেশী বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হউক আশা করছে দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু এসবে তো সরকার খুব একটা কানে তুলছে না। মানে তোয়াক্কাই করছে না..এটা কিভাবে দেখেন?

সাইফুল হক : আসলে সরকার, সরকারি দল এক সত্ত্বা। এ কারণে এই সরকারকে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ বলি। এখানে সরকার টিকে আছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করে। এরা এতো বেনিফিসারি করেছে যে এরা ছাড়া তাদের টিকে থাকাই মুশকিল। বাংলাদেশে গোটা প্রশাসনকে তার অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছে। ফলে এখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই আজকে গুরুতর হুমকির মুখে। এখানে আসলে জনগণ লড়ছে এই পুরো কাঠামোটা চেঞ্জ করে দিতে.. তাই লড়াইটা দীর্ঘ মেয়াদী হচ্ছে।

শেয়ার করুন