ভারত থেকে মুসলিমদের বিতাড়ন ও ভারতীয় স্থাপত্য নিদর্শন ও সাংস্কৃতিক জগত থেকে মুসলিম অবদানকে অপসৃয়মাণ করে ফেলার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি ও তার বংশবদ ও সরকারি-বেসরকারি মহলে হিন্দু দাঙ্গাবাজরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে জিহাদ শুরু করেছে। নিধন করা হচ্ছে মুসলমানদের, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঈদের জামাত পড়তে দেয়া হচ্ছে না।
ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আরো কত কি-না করা হচ্ছে। তাজমহলের নাম পরিবর্তন করে রামমহল রাখার প্রস্তাব করেছে এক বিজেপি সাংসদ। আরেক বিজেপি মহিলা সাংসদ দিয়া কুমারী রাজস্থান থেকে দাবি করেছেন, তাজমহলের ভূমি তার পৈতৃক সম্পত্তি। কাজেই তাজমহলের অধিকারী তিনি। এসব নিয়ে বিজেপি সোৎসাহে আগুন জ্বালাচ্ছে আর নিধন করে চলেছে মুসলমানদের। বলা হচ্ছে, রাজস্থানের রাজপুতরা যদিও সম্রাট আকবরের পক্ষে ছিলেন। তাদের রানার গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে ছিলেন। দিয়া কুমারী বিষয়টা তদন্তের কথা বলছেন।
কিছু কিছু গোঁড়া হিন্দু বলছেন, তাজমহল শিবমন্দির ভেঙে তার ওপর গড়া হয়েছে। এ এক বাবরী মসজিদের মতো তাজমহল ভাঙার ‘মঙ্গলাচরণ’। হিন্দু জাতিটা ভারতে তেমন কিছু করেনি যে, যা স্মরণযোগ্য। তারা যা করছে তাহলো মুসলিম স্থাপত্যকে ভেঙেচুরে তাদের মাহাত্ম্য জারি। আর এখন শুরু হয়েছে মুসলিম রক্ত নিয়ে যজ্ঞ। মধ্যভারতে হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে মুসলমানদের বাড়িঘর। ভারতীয় হিন্দু গুণ্ডারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় গুণ্ডাদের মুসলিম আক্রমণে উদ্দীপ্ত করে মুসলিম নিধন ক্রমাগত বাড়াচ্ছে। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক ঘটনায় পরিণত করছে। তারা ভারতে থাকতে গেলে প্রথমে সকলকে হিন্দু হতে হবে বলে মন্তব্য করেছে।
যখন ঈদের সময় সংঘর্ষ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কর্তৃপক্ষ বৈষম্যমূলক আচরণ করে মুসলিম নিধন বাড়িয়ে দেয়। ধ্বংস করে হিন্দুরা আর নির্যাতন করা হয় মুসলমানদের। শুধু তাই নয়, আইনি প্রক্রিয়ারও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।
নয়াদিল্লিতে সংঘর্ষের ব্যাপক রূপ নেয়। প্রধান বিচারপতির সংঘর্ষ বন্ধের আদেশের পরেও সারা দিল্লিতে ২ ঘণ্টা যাবৎ মুসলিম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান ও অন্যান্য সম্পদ ধ্বংস করা হয়। চায়ের দোকান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়। ঘরের সিঁড়ি ভেঙে দিয়ে দোতলা থেকে একতলায় নামা-ওঠা বন্ধ করে দেয়া হয় অনেক ঘরের। তারা মসজিদের দেয়ালও বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়। পাশে রয়েছে হিন্দুমন্দির তা ভাঙার ভয়ে মসজিদ পুরো ভাঙেনি। এখন তিনটি রাজ্যে কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বুলডোজার দিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভাঙছেন। কিন্তু এই ভাঙার সময় বলে না যে, তা অবৈধ স্থাপনা তুলে দেয়ার জন্য করা হচ্ছে।
হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানে ভীত গবেষক অসীম আলী বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে সহিংস আচরণের ভয়ে আমি ভীত।’ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদীরা কোনো ইস্যুকে সারা ভারতে ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। ১০০ জনেরও বেশি সিভিল সারভেন্ট মুসলিমদের পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন, তারা এক চিঠিতে নরেন্দ্র মোদিকে হিংসা ও ‘ভিজিল্যান্টি সহিংসতা’ (হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী দল) বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এই ভিজিল্যান্টি গ্রুপ কাঠামো ভাঙার কাজে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়ও সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। প্রশাসন ক্রমাগতভাবে সংখ্যালঘু-বিরোধী হয়ে উঠছে আর মুসলমানদের ভয়ের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করছে। আরেকটি গ্রুপ সিভিল সার্ভেন্টের চিঠির প্রতিবাদ করে মোদির সমর্থনে পত্র লিখেছে। তারা বলে, এই উদ্বেগের সারবত্তা নেই।
মধ্যপ্রদেশের খারগোন শহরে দুই লাখ লোকের বাস। গত ১০ এপ্রিল সেখানে সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়। সেখানে তিন চতুর্থতাংশ হিন্দু। অনেক জায়গায় হিন্দু-মুসলিম একই রাস্তা শেয়ার করে। খারগোনে রমজান মাসে এক হিন্দু দেবতার জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। এক প্রসেশন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। আরেক প্রসেশনের জন্য প্রশাসন মসজিদের রাস্তা বাদ দিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কারণ সময়টা হচ্ছে ইফতারের সময়। কিন্তু তাদের মিছিলটা অনুমোদিত সময়ের অনেক পড়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিছিলে সেøাগান দেয়া হয়- ‘এ দেশে থাকতে চাইলে ভগবান রামের জয়ধ্বনি দিতে হবে’।
অলিগুপ্ত নামে এক সংগঠক নিউইয়র্ক টাইমসকে জানায়, মিছিল দেরিতে বের হয়েছে। কারণ অংশগ্রহণকারীরা দেরিতে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো উস্কানিমূলক গান পরিবেশন করিনি। আর রামের নাম নেয়া দোষের কিছু না’।
সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় পুরো রাত সন্ত্রাসীরা সম্পদ ধ্বংস করে। উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষতি হয়। অঞ্চলের সর্বজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারসহ ৭৩ জন নিহত হয়। পুলিশ একজন নিহত মুসলিমের দেহ কয়েকদিন পর পরিবারকে ফেরত দেয়। পুলিশ বলেছে, তারা কয়েকজন হিন্দু লোককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের নিধনে সাহায্য করছে। এরপর সেখানে মুসলমানদের ঘরবাড়ি কর্তৃপক্ষ ধ্বংস করে। দিল্লি হাইকোর্টেও পুলিশের আচরণ নিয়ে কথা উঠেছে। খারগোনে ১৫০ জন গ্রেফতার হয়। তার মধ্যে ১২৫ জন মুসলমান। অধিকাংশ মুসলমানের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়। কাশ্মিরে মুসলমানদের ঈদের জামাত পড়তে দেয়া হয়নি।
ভারতে নিয়ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১২, ২০১৫, ২০১৮ এবং এখন ২০২২ সালে সংঘর্ষ দিন দিন বিস্তার লাভ করছে।
(নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে রচিত)