০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ১০:৫৮:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্টিত , সহজ গ্রুপে ব্রাজিল - যুক্তরাষ্ট্র ডি গ্রুপে স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া


ভারতের দাদাগিরি বন্ধ করা উচিত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৪
ভারতের দাদাগিরি বন্ধ করা উচিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি


ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসূলভ সম্পর্ক বজায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে এ কথাও ভারতকে স্মরণে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। বাংলাদেশের অধিকার রয়েছে অন্য দেশের সঙ্গে স্বাধীনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার। বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখতে ভারত প্রভাব বিস্তার করুক, সেটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

বাংলাদেশর বর্তমান সরকারের ১৬ বছরের মেয়াদকালে আলোচনার মাধ্যমে অনেক দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু কিছু মৌলিক সমস্যা যেমন ন্যায্যতার তিস্তাসহ সব নদনদীর পানি বণ্টনব্যবস্থা বাংলাদেশকে আশ্বাস দেওয়ার মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর পার হচ্ছে। ঝুলে আছে চিকেন নেক করিডোর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ। নেপাল, ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টিও দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে ভারতের বাধার কারণে। বাংলাদেশ কিন্তু ভারতকে পশ্চিমে যাতায়াতের সব বাতায়ন খুলে দিয়েছে। ভারতের রেল এখন সরাসরি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে যেতে পারবে। ভারত চেষ্টা করছে বাংলাদেশের সব সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের। অথচ ভারতের বাধার মুখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ মায়ানমার হয়ে চীনের দিকে এগোয়নি। বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের ওপর টারিফ নন-ট্যারিফ বাধার কারণে বিপুল বাণ্যিজ্যিক ঘাটতি মেটাতে পারছে না বাংলাদেশ।

শুষ্ক মৌসুমে উজানে পানি সরিয়ে নেওয়ায় মরুকরণের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উত্তর মধ্যাঞ্চল জুড়ে। বর্ষায় আবার পানি ছেড়ে দেওয়ায় বন্যায় ভাসছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে সমস্যা হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাধার মুখে সমস্যা চুক্তিতে রূপান্তর হয়নি। এটাও অবাস্তব নয় যে, গজলডোবায় তিস্তার অধিকাংশ পানি বাঁকবদল করে বাংলাদেশকে দেওয়ার মতো পানি থাকে না। এমতাবস্তায় চীন এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশের এমন মরণপণ সমস্যা থেকে উদ্ধারে। তারা অনেক গবেষণা করে তিস্তা নদীর পানি সংরক্ষণে চীন বাংলাদেশকে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বাংলাদেশ যখন একটা বড় সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পেলো, ঠিক তখন ভারত কেন বাধ সাধলো? এখন ভারত নিজেই বলছে তিস্তায় বাংলাদেশের যে মহাপরিকল্পনা সেটা তারা করতে আগ্রহী। যার অর্থ তিস্তায় চীনকে আনা যাবে না। 

ভারতের পানি দিতে সমস্যা হলে তারাই স্বপ্রণোদিত হয়ে এমন একটা প্রকল্পের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশকেই প্রস্তাব করতে পারতো। কিন্তু এসব চিন্তা তো দূরে থাক কালেভাদ্রে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে রুটিন কথা বলে সব ক্ষ্যান্ত দিয়ে ফেলা হতো। বাংলাদেশ তাকিয়ে চাতক পাখির মতো। কিন্তু তিস্তার পানি আর মেলেনি। 

প্রশ্ন আসতেই পারে কেন নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ভারতের দাদাগিরির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে। কেন চিকেন নেক ব্যবহার করে বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য করতে পারছে না? এটাও এখন বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে বিশাল বড় প্রশ্ন। যার উত্তর খুঁজতে গেলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান এটা বাংলাদেশের তরফ থেকে অনেকটাই একতরফা হিসেবেই ভেসে উঠছে, যা সরকারের জন্যও বিব্রতকর একটা বিষয়।

সৎ প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে ভারতকে দাদাগিরি পরিহার করে ঝুলে থাকা দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। না হলে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব সামাল দিতে ভীষণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ বরাবরের মতো এখনো অবশ্য সব পক্ষকে সমানভাবে দেখেই স্বাধীন উন্মুক্ত পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। কিন্তু এ নীতি একতরফা কখনো সুখকর নয়। 

শেয়ার করুন