২৭ জুন ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:০৯:১০ পূর্বাহ্ন


দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সংকট ‘আরও গভীর হয়েছে- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৫-২০২৪
দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সংকট ‘আরও গভীর হয়েছে- মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর /ফাইল ছবি


দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সংকট ‘আরও গভীর হয়েছে’ উল্লেখ করে তা নিরসন না হলে ‘সরকারের ভবিষ্যত খুব ভালো নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,  ‘‘ একটা কথা আমি বলতে চাই, উনাদের(সরকার) একটা ফ্লস ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ওভারকাম দ্যা ক্রাসিস… সংকট থেকে তারা উপরে উঠে গেছেন।”

‘‘ আমি বলব, সংকট আরও গভীর করেছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংকট আরও গভীর হয়েছে, সরকারের সংকটও আরও গভীর হয়েছে।”

সরকারকে সর্তক করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আপনা্রা যদি এখনো সেটা উপলব্ধি না করেন, সংকট নিরসনের চেষ্টা না করেন তাহলে ভবিষ্যত তাদের জন্য খুব ভালো না।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্য্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘খালেদা জিয়া: জীবনের জন্য লড়াই করছেন’

বিশ্ব মা দিবসের দিন গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির মা নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মা। এজন্য যে, এই মহিয়সী নেত্রী তিনি সারাটা জীবনে এই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য আমাদের এই মহিয়সী নেত্রীর তার সঠিক মূল্যায়নটা এদেশের অনেকে করতে পারছেন না।”

‘‘খালেদা জিয়া এখন লড়াই করছেন তার জীবনের। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ।আপনারা দেখছেন যে, প্রায়শ: তিনি যাচ্ছেন হাসপাতালে, তিনি চেকআপ, প্রসিজিউরও হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে, আবার বাসায় ফিরে আসছেন…. আসার পরেও কিন্তু তিনি ২৪ ঘন্টাই বলা যায় যে, তিনি মেডিকেল কেয়ারের মধ্যে আছেন।”

‘ওরা লুটের বিশেষ গোত্র তৈরি করেছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ এখানে একটা গোত্র তৈরি করা হচ্ছে যাদেরকে সমস্ত রকম দুর্নীতি-অনিয়মের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে… একটা লুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেটা দিয়ে তারা এই সরকারকে টিকিয়ে রাখছে… এর মধ্যে তারা নিজেরাও জড়িত এবং তাদের সুবিধাভোগী লোকজনরা জড়িত।”

‘‘ আজকে যেগুলো দেখছেন সেগুলো হচ্ছে লুট…. মেগা লুট। একজন ব্যক্তি সে এখন সিঙ্গাপুরে  গিয়ে হাইয়েস্ট ইনভেস্টার… চার নম্বরে আছেন… তাই না। আর কয়েকজন ব্যক্তি আছেন পানামা লিস্টের মধ্যে পড়ে যায়…এতো টাকা তারা বানিয়েছেন। এরা দুর্নীতি-অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে এই রাষ্ট্রকে কি করে পরনির্ভরশীল করা যায় এবং তাদের বিশেষ গোত্রকে কিভাবে অন্যায়ভাবে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী করা যায় সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ কারো কোনো জবাবদিহিতা নাই তো, কারো কোনো স্ট্যাক নাই তো। এখানে দেখেন একজন মন্ত্রীর যার লন্ডন বাড়ি পাওয়া তিন‘শ-আড়াই‘শ টার মতো, পত্রিকায় দেখা যায় যে, মন্ত্রী-এমপির বাড়ি-সম্পদ দেশের বাইরে রয়েছে… কারো কোনো স্ট্যাক নেই এখানে। তারা ডোন্ট কেয়ার। তাদের যে বক্তব্য, দাম্ভিকতা এটা অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে… এমন ভাবে কথা বলেন যে, উনারা ছাড়া দেশে আর কেউ নাই।”

‘‘ এটাতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র অলিরেডি হয়েই গেছে । আমরা সেটা আগের থেকে বলে আছি যে, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এই রাষ্ট্রের পরিণত করেছে। কখন ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়? যখন অর্থনৈতিক, মেরুদন্ড ভেঙে ফেলে, যখন তার রাজনৈতিক স্টাকচারটা ভেঙে ফেলে, সামাজিক কাঠামো ভেঙে যায় যখন কোথাও জবাবদিহিতা থাকে না তখন রাষ্ট্র একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়… নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এখন গোটা দেশে একটা নৈরাজ্য চলছে।”

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশের অর্থনীতির ভিত্তির তৈরি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমান একটা ক্লোজড ইকোনমি, একটা ফেল্ড পলিটিক্যাল স্টাকচার থেকে বেরিয়ে এনে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছিলেন, মিকক্সড অর্থনীতি এবং পরবর্তিকালে প্রাইভেট সেক্টার চালু করেছিলেন। ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বেগম জিয়া তার শাসনমালে সেগুলো এগিয়ে নিয়ে গেছে। একটা বিষয় আপনাদের মনে থাকার কথা ২০০৬ সালের সময়ে নিউজ উইকের মতো পত্রিকা কাভার স্টোরি করেছিলো, বাংলাদেশ ইমার্জিং টাইগার…।

‘‘ এমনভাবে তারা(আওয়ামী লীগ সরকার) কথা বলে যে, গণতান্ত্রিক সরকার গুলোর সময়ে কোনো উন্নয়নই হয় নাই। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নই অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে। আজকে সেগুলো দেখছেন সেগুলো হচ্ছে লুট, মেগা লুট।”

‘স্বাস্থ্য খাতের দুরাবস্থা অবিশ্বাস্য’

সরকারি হাসপাতালে অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা কি সরকারি হাসপাতালে কেউ গেছে?যদি যান বিশেষ করে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে যান অবিশ্বাস্য… হাসপাতালে ঢুকা যায় না এতো দুর্গন্ধ, এতো নোংরা, দালালদের অত্যাচার চিন্তা করা যায় না।”

‘‘ আর হাসপাতালের চারপাশে নতুন নতুন ডায়গোনেস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে...এটা বড় ব্যবসা। এখান থেকে দালালরা আসে সরকারি হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে যায় রোগী… এই হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দলীয়করণে উপাচার্য্ ও শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ যে কারণে ব্রেনডেইন হয়ে যাচ্ছে… যারা মেধাবী যারা নিজের যোগ্যতা আছে তারা দেশে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।”

‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার উদাসীন’

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার উদাসীন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবেলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর আগে গত মার্চ মাসে সিপিডির একটি রিপোর্টেও জনস্বাস্থ্যের এক ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছেন না।গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ  -বিএফএসএ’র শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যন্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।”

‘‘ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবৈধ সরকার কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এই সরকার কেন এতো উদাসীন। জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দেশের নাগরিকদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু সরকার সেটা করছে না।”

নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধানে আমদানি পণ্যের বিভিন্ন ক্ষতিকারণ উপাদান সনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও জোট বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ রাষ্ট্রসংঘ কি ধরণের ভূমিকা গ্রহন করেছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যের মান যাচাই করে নেয়া। কিন্তু বর্তমান তাবেদার সরকার আমদানি করার খাদ্যপণ্য যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কিনা এ ব্যাপারে জনগনের যথেষ্ট সন্দিহান।”

‘‘ আমদানি করা পণ্য যথাযথ পরীক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সর্তকতা অবলম্বণ করতে হবে। তাবেদার সরকারের ওপর ভরসা না করে নিজেই নিজের সাধ্যমত নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।”

বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে সরকার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত সাজা প্রদানে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন ও মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারি সচিব ডোনাল্ড লু‘র ঢাকা সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ দেখুন এসব আমাদেরকে জিজ্ঞাসা না করে উনাদের(আওয়ামী লীগ সরকার) জিজ্ঞাসা করুন। এসব নিয়ে আমরা ইন্টারেস্টেড না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগনের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার উপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি।রাজনীতিও আমাদের জনগনকে নিয়ে।”

শেয়ার করুন