১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন


সীমান্ত নীতি বিতর্ক
সুপ্রিম কোর্ট ৫ রিপাবলিকান এ্যাটর্নী জেনারেলের মামলা বাতিল করেছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
সুপ্রিম কোর্ট ৫ রিপাবলিকান এ্যাটর্নী জেনারেলের মামলা বাতিল করেছে সীমান্তে আশ্রয় প্রার্থী অভিবাসীরা


যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গত ২১ অক্টোবর ২০২৪, ক্যানসাস, আলাবামা, লুইজিয়ানা, জর্জিয়া এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পাঁচজন রিপাবলিকান রাজ্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়ের করা মামলা বাতিল করেছে। এর মাধ্যমে ফেডারেল প্রশাসনের সীমান্ত নীতিতে স্টেটগুলোর হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই স্টেটগুলো বাইডেন প্রশাসনের ২০২৩ সালে প্রণীত শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন সীমান্ত নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ইমিগ্রেশন নীতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা বজায় রাখার বিষয়কে ফেডারেল গভর্নমেন্টকে কর্তৃত্ব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে স্টেট আলাদা অভিবাসন নীতি বলবৎ করার সংবিধিনিক অধিকার নেই।

বাইডেন প্রশাসন ২০২৩ সালের মে মাসে একটি সীমান্ত নীতি চালু করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে শরণার্থীদের ঢল কমানো। এই নীতিটি শরণার্থীদের সীমান্ত অতিক্রম করার আগে একটি সরকারি অ্যাপ ব্যবহার করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার বাধ্যবাধকতা করে আইন জারি কর হয়। আইনটি শরণার্থীদের যাত্রাপথে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়। এটি মূলত টাইটেল -৪২ নামক মহামারী-উদ্ভূত একটি নীতির বিকল্প হিসেবে প্রণীত হয়েছিল, যা কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছিল। টাইটেল-৪২ এর আওতায় জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রণীত ব্যবস্থা শরণার্থীদের প্রবেশ সীমিত করেছিল।

টাইটেল -৪২ মূলত ১৯৪৪ সালের পাবলিক হেলথ সার্ভিস অ্যাক্টের অধীনে একটি আইন, যা কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বিদেশিদের প্রবেশ সীমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে, টাইটেল-৪২ এর আওতায় ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে শরণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে। এটি যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে শরণার্থীদের ঢলকে দমন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। টাইটেল-৪২ এর অধীনে সীমান্তে প্রবেশ করতে চাওয়া ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং তাদের কোভিড সংক্রমণ রোধে দ্রুত মেক্সিকো বা তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া হয়। যদিও আইনটি জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রণীত হয়েছিল, এটি কার্যকরভাবে সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন, এই নীতিটি শরণার্থীদের আশ্রয় প্রার্থনার অধিকারকে খর্ব করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন শরণার্থী অধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে, যা বেশ কয়েকটি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন রাজ্যের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ক্যানসাস, আলাবামা, লুইজিয়ানা, জর্জিয়া এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেলরা আদালতকে জানান, তারা মনে করেন ফেডারেল সরকার শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা এই নীতির বৈধতা রক্ষা করতে চান। তারা যুক্তি দেন যে, শরণার্থীরা তাদের স্টেটে প্রবেশ করলে স্থানীয় প্রশাসনিক ও সেবা ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

গুপ্রিম কোর্ট স্টেটগুলোর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায় যে, তারা এই নীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের বৈধতা দেখাতে পারেননি এবং তাদের দাবি করা ক্ষতিগুলোও “গৌণ” ও “অমূলক।” আদালতের এই সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসনের ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্তৃত্বকে সমর্থন করে, যা ২০১২ সালে আরিজোনার দায়ের করা একটি মামলার পর থেকে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন নীতি ও সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এদিকে, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।

শেয়ার করুন