০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:২৫:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কমরেড রনো মূল গন্তব্য থেকে কখনোই তিনি বিচ্যুত হননি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
কমরেড রনো মূল গন্তব্য থেকে কখনোই তিনি বিচ্যুত হননি শোক সভায় উপস্থিতি


সিপিবি আয়োজিত শোকসভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাত দশক ধরে কমরেড রনো মুক্তির লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শ্রমিকশ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মূল গন্তব্য থেকে কখনোই তিনি বিচ্যুত হননি। তাঁর লড়াই সব সময় আমাদের পথ দেখাবে। তারা বলেন রনোর বিপ্লবী জীবন শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির লড়াইয়ে পথ দেখাবে। তারা বলেন,, কমরেড রনো শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির লড়াইয়ের পথপ্রদর্শক। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির বিপরীতে আদর্শের ঝান্ডা তুলে ধরে শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির লড়াইয়ে তিনি সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির জন্য তিনি গোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে তিনি কখনোই আপস করেননি।

এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও লেখক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হায়দার আকবর খান রনোর শোকসভা গত ১ জুন শুক্রবার বিকেলে ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

সিপিবি আয়োজিত শোকসভায় সিপিবিসহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোকসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ-এর উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, রনোর ভ্রাতুষ্পুত্রী অনন্যা লাবণী, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান তারিক চৌধুরী। শোকসভাটি পরিচালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত কমরেড রনোর প্রতিকৃতিতে সিপিবিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা গণসংগীত পরিবেশন করেন।

শোকসভায় সিপিবির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে সদ্যপ্রয়াত কমরেড রনোর বিপ্লবী স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রিন্স বলেন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী কমরেড রনো ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তানি স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ছাত্র আন্দোলন শেষে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন শ্রমিক আন্দোলনে। জেল-জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে তিনি শ্রমিকশ্রেণির মুক্তির লড়াইকে অগ্রসর করেছেন। রাজপথের লড়াইয়ের পাশাপাশি তিনি তাঁর বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে তাত্ত্বিক লড়াইয়ে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

সেলিম বলেন, কমরেড রনোর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটা নক্ষত্রের পতন হলো। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এবং দেশের শ্রমিকশ্রেণির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক গুণের এক অপূর্ব সমন্বয়। তাঁর চিন্তাভাবনা, কর্মকা- সব সময় গতিশীল ছিল। তিনি ছিলেন ইতিহাসের সিপাহসালার। আদর্শের প্রতি সব সময় অবিচল থেকে কমরেড রনো ইস্পাতকঠিন শপথ নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপে বিপর্যয়কালে এবং পরবর্তী সময়ে সমাজতন্ত্রের পক্ষে তিনি তাত্ত্বিক লড়াই চালিয়েছেন। কমরেড রনো ছিলেন আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন সংগঠক। তিনি সব সময় তরুণ বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছেন। কমিউনিস্ট ঐক্যের জন্য আমৃত্যু প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বিকৃতি, বিচ্যুতি, বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে মতাদর্শিক লড়াই চালিয়ে গেছেন। এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। কর্তৃত্ববাদী শাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনে আমরা তাঁর অভাব বোধ করব।

কমরেড আকাশ বলেন, কমরেড রনো ছিলেন ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর চিন্তা ছিল গভীর, স্বচ্ছ ও দৃঢ়। তাঁর কর্মকা- ছিল বহুমাত্রিক। অসুস্থতা তাঁকে লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। তাঁর রচনাসমূহ আমাদের পুনর্পাঠ করতে হবে। তিনি আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।

খালেকুজ্জামান বলেন, সাত দশক ধরে কমরেড রনো মুক্তির লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শ্রমিকশ্রেণির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মূল গন্তব্য থেকে কখনোই তিনি বিচ্যুত হননি। তাঁর লড়াই সব সময় আমাদের পথ দেখাবে।

কমরেড মিহির বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই এবং গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর বিপ্লবী জীবন বিপ্লবী লড়াইয়ের কর্মীদের যুগে যুগে পথ দেখাবে।

সভাপতির বক্তব্যে শাহীন বলেন, শোষণমুক্তি ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কমরেড রনো অনন্য অবদান রেখেছেন। অসুস্থতার মধ্যেও পার্টির দায়িত্ব পালনে তিনি কখনো পিছু হটেননি। তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে দেশে সমাজতন্ত্র তথা ‘মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ’ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার মধ্য দিয়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে।

শেয়ার করুন