টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) পরিবর্তিত মোড়ক এবং সমভাবে নিবর্তনমূলক। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মাধ্যমে তথ্য ও মতপ্রকাশের যে অবারিত সুযোগ রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ডিএসএর অবিকল সিএসএ প্রণীত হয়েছে। প্রস্তাবিত বিধিমালার ক্ষেত্রে তা আরও জটিল হয়েছে।’
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালায় মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অংশীজনের আপত্তি সত্ত্বেও বিধিমালাটি পরিবর্তন করা হচ্ছে না; কিন্তু এতে অনেক পরিবর্তন দরকার। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও আর্টিকেল নাইনটিনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। আর ওই সম্মেলনে টিআইবি পরিচালক বলেছেন ওই কথা।
টিআইবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিধিমালাটি জনবান্ধব করতে হলে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ ঢেলে সাজাতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন এতে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা নিয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশপত্র উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২০-এর ১৯টি বিধি ও একটি তফশিল হুবহু রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালায়। এর কোথাও জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির কার্যক্রমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত ধারা বা বিধির উল্লেখ নেই। এতে ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ, সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ ইচ্ছাধীন কার্যক্রম পরিচালনার ঝুঁকি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তাবিত বিধিমালায় মহাপরিচালক ও পরিচালকদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি ব্যতীত এজেন্সির অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও কার্যাবলি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। একই সঙ্গে এজেন্সি কীভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, জনপ্রশাসন ও সরকারি কৌঁসুলিদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে, সে ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এজেন্সিতে কর্মরত বেশির ভাগের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো দক্ষতা ছিল না। ‘সোর্স মানি ও ঝুঁকিভাতা’ নামে একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে, যা মূল আইনে উল্লেখ নেই। এ ছাড়া, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-পরিকাঠামোয় বড় ধরনের যেসব আক্রমণ হয়েছে, তা দেশের বাইরে থেকে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ে দেশি প্রতিষ্ঠান কী ধরনের আইনি, কূটনৈতিক ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, প্রস্তাবিত বিধিমালায় সে সম্পর্কিত কোনো বিধান নেই।
আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ‘আইন প্রণয়নে আমরা অনেক তাড়াহুড়ো করি। একের পর এক আইন করেই যাচ্ছি এবং কোনোটাই চূড়ান্ত হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার ডিএসএর পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করেছে। সে ক্ষেত্রে একটি ভ্রান্ত আইনের ওপর নির্ভর করে এই বিধিমালা প্রণয়ন খুব একটা কাজে আসবে না।’