জামায়াতে ইসলামী অস্বাভাবিক নিরবতা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। কারো মতে, দলটি আপাতত সরকারকে চটাতে চায় না বা দলের অভ্যন্তরে মূল নেতৃত্ব নানান ইস্যুতে কোণঠাসা থাকতে পারে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গত বছর জামায়াতে ইসলামী ১০ জুন ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলে। সে সমাবেশ নির্বিঘ্নে করে ফেলা নিয়েও চলে নানান ধরনের কানাঘুষা। কারণ বাংলাদেশে সে সময় সক্রিয় মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার বাম গণতান্ত্রিক দল নিয়েই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের ওপর দেশে-বিদেশে ব্যাপক আন্দোলন ও চাপ সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক মাঠ বলা চলে বড়ই উত্তপ্ত। এর পাশাপাশি সরকার সহজেই রাজধানীর গুরুত্ব পয়েন্ট কিংবা বিএনপি যেসব স্থানে সমাবেশ করতে চাইতো সেখানে অনুমতিও দিতো না।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ওই বছরে জামায়াতে ইসলামি ১০ জুন ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ফেলে। এতে সরকারের প্রতি নানান ধরনের অভিযোগ উঠে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী’র সাথে সরকারের গোপন আঁতাত হয়েছে। এমনকি ওই বছরে ২৮ অক্টোবরে শাপলা চত্বরে জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া নিয়েও নানান ধরনের জল্পনা কল্পনা দেখা দিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে যে-ই জামায়াত দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ২০২৩ সালে হঠাৎ রাজনৈতিক মাঠে সোচ্চার হলো, মাঠে নেমে গেলো। কিন্তু সেই সংগঠনটি এখন নিশ্চুপ কেনো? কারো কারো মতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামী নামে দলটি আসলে গোপনে দল গোচ্ছাচ্ছে। পুরো দেশে বার্ষিক সদস্য সম্মেলন করেছে গোপনে সরকারের জ্ঞাতসারেই। দলটির ভেতরে তাদের মতে বিভিন্ন ধরনের দুষ্ঠু চক্রকে মোকাবেলা করতে হিমসিম খাচ্ছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারা। আবার কারো মতে, তাদের পক্ষের মিত্রকে অর্থাৎ বিএনপি’কে পরখ করছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে আদৌ তাদের এই পুরানো মিত্র জামায়াতকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে কি-না? কারণ সম্প্রতি আশ্চর্যজনকভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি মন্তব্য করেন। বলে ফেলেন ‘আমি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি সমর্থন করি না। যা নিয়েই মুহূর্তে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এতে জামায়াত আচমকা বেকায়দা পড়ে। আবার এর অল্প কয়েকদিন আগে ‘দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্মূল হবে, তাদের পদচিহ্নও থাকবে না’- রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একটি বক্তব্য দেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে যেমন নানান আলোচনার ঝড় তুলে তেমনি জামায়াতে ইসলামী’তেও। দেখা দিয়েছে নানান ধরনের অস্থিরতা। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী জামায়াতের ওপরে আগের চেয়ে বেশি খবরদারি হবে ক্ষোদ সরকারের উচ্চ লেবেল থেকে। খুব শিগগির নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ! সে পদক্ষেপের মাত্রা এ যাত্রায় হয়তোবা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, একারণে জামায়াতে ইসলামী বেশ নড়েচড়ে বসেছে, বিএনপি’র পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে পাশ কাটিয়ে চলছে। কারণ দলটি বুঝেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে বেশ শক্ত পজিশনে আছে। আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী’র শুভানুদ্যায়ী বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তলাষ্ট্রও ভারতের কথায় বা ইশারায় চুপসে গেছে। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এমন পরিস্থিতি দলটির বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়েও বেশি বিপদজ্জনক।