১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ১১:০১:০৫ পূর্বাহ্ন


এটাকে আমরা গণহত্যা বলি : মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৪
এটাকে আমরা গণহত্যা বলি : মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


কোটা আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই এটা (জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের উদ্যোগ) সরকারের একটি প্রকল্প হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, কোটা আন্দোলণ নিয়ে যে সব হত্যাকান্ড ঘটলো এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। গত ৩০ জুলাই মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ্ক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ করতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই যে আপনি প্রথমেই বললেন, সরকার একটা ইস্যু তৈরি করে সেই ইস্যুকে ডাইভারশনের দিকে নিয়ে যায়, এটা তার আরেকটি প্রমাণ। আমরা ভাই, বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের এটা ঘোষিত কর্মসূচি, আমাদের আদর্শ হচ্ছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বাম রাজনীতি যারা করতেন মির্জা গোলাম হাফিজ থেকে শুরু করে- হাজী মোহাম্মদ দানেশ থেকে শুরু করে তারা সবাই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। প্রায় দুই বছর সেখানে থেকে তারপরে তারা ফিরে আসেন যখন উইথ ড্র করা হলো তখন আবার তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই ধরনের ঘটনা (সিদ্ধান্ত) যারা স্বৈরাচারি, যারা আপনার ডিকট্রেটরস, যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক থাকে না তাদের এই ধরনের সিদ্ধান্ত বহু নিয়েছে এবং এগুলো তাদের নিতে হয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে। কেনো এতো দিন নেয়নি কেনো তারা? আজকে এখন নিচ্ছে কেনো? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা ওরা বলবে, আমরা যে কথাগুলো বলছি তার বিপক্ষে তারা অনেক কথা বলবে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা খুব পরিস্কার করে বলি যে, আমাদের বক্তব্যে আমরা খুব পরিষ্কার- আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি যারা যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার।

তিনি বলেন, এখন জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে কার রাজনীতি সে গ্রহণ করবে, কার রাজনীতি সে গ্রহণ করবে না। এখন এখানে দরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, অবাধ নির্বাচন। আজকে যে এতো ক্রাইসিস এর মূলে হচ্ছে যে, এদেশে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নেই। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার না হলে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না। জনগণের প্রতিনিধি দরকার এবং জনগণের কাছে যাদের একাউন্টেবিলি থাকবে, দায়-দায়িত্ব থাকবে, একটা জবাবদিহিতা থাকবে সেই জবাবদিহিতা যদি না থাকে তাহলে এটা সম্ভব না। আজকে এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই্। তাদের কোনো মতেই তাদের কোনো বৈধতা নেই, তারা কোনো নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। তারা সবসময় কৌশল করে যেভাবে ডিবি অফিসে ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে বলানো হচ্ছে সেই একইভাবে কৌশল করে তারা বিভিন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছে।

২৯ জুলাই সোমবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে নেতারা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জামায়াতের অতীত ও বর্তমান কর্মকান্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় বিবেচনা করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আানিসুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত তিনদিন বিবৃতির মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের বিষয়ে কথা বললেও মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

‘এটা গণহত্যা’

মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে ঘটনাবলী ঘটে গেছে, মানুষের প্রাণ গেছে এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমার লিখিত বক্তব্যে আপনি দেখবেন আমি এটাকে গণহত্যা বলা আছে। আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের তদন্তে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না। এরা কোনো নিরপেক্ষ না তো, কিভা্বে এদের বিশ্বাস করবেন। সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি সংগঠনের হামলার ঘটনা নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব এবং একইসঙ্গে তিনি গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান।

‘কোটা বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন অব্যাহত থাকবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি তো বলেছি যে, তাতের সমস্ত আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের একটা আহ্বান, এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে যাবে। আর জনগণের যে আন্দোলন এই সরকারের চলে যাওয়া। তাদের আন্দোলন একটা সেটা হচ্ছে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারকে চলে যেতে হবে। একই সঙ্গে ‘এই মুহূর্তে কারফিউ প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার’ দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘দায় স্বীকার করে চলে যান’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি জানি গত কয়েকদিন ঘটনায় ছাত্র ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের বাড়িতে তাদের আত্মীয়-স্বজন কেউ খেতে পারছে না। তাদের চোখের সামনে ছেলে চলে গেছে, তাদের ভবিষ্যত চলে গেছে, তাদের সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিসটা সেটা চলে গেছে। চার বছরের বাচ্চা, ছয় বছরের বাচ্চাটা... ওয়াট ইজ এনসার। রাষ্ট্রের কি উত্তর? রাষ্ট্রের জবাবটা কি?”

তিনি বলেন, কেনো তার প্রাণ গেলো? কি উক্তর দেবে সে? দায়িত্ব তো তার। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব তার। একথা বললে তো চলবে না যে, আমরা কি করতে পারি, বিভিন্নভাবে ঘটে গেছে- এই কথা বললে চলবে না। ইউ হেভ ক্রিয়েটেড দিস সিচ্যুয়েশন, এই দায় তোমার, এই দায় অবশ্যই তোমাদের নিতে হবে। যে কথাটা আমরা বলেছি যে, দায় স্বীকার করে তাদের চলে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সমাধান করবে। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই শেষ করতে হবে। দে মাস্ট লিভ। তাদেরকে একটা নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

‘জঙ্গিবাদের বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এদেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই সরকার পরিকল্পিভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।

‘ডিবির খাবার নাটক’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচন্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেয়া হয়েছিলো। আপনারা দেখেছেন, একটা খাবার নাটক করা হয়েছে, ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা খাবার নাটক তৈরি করা হয়েছে। এটা ডিবি অফিসে একটা নামই হয়ে গেছে ভাতের হোটেল হিসেবে। এগুলো কখন, কোন সময়ে হয়? এক ধরনের ভ্যানক্রাসি সেই প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারের ওপরে এসে পড়ে। ডিবি এমন একটা সরকারেরে একটা অত্যন্ত ‍গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধুমাত্র যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে তাদেরকে গ্রেফতার করে তাদেরকে নির্যাতন করা এবং এই সমস্ত নাটক তৈরি করা। নিশ্চয়ই না। ডিবির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব- টার্মস অব রেফারেন্স আছে তাদের কাজের এবং সেগুলো তাদের পালন করতে হয়। তিনি বলেন, এখানে এই ধরনের নাটক, একটা তামাশা তৈরি করে তারা গোটা জাতিকে আমি মনে করি ছোট করেছে, একটা মস্করা সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের যে মন্তব্য সেটা আপনারা শুনেছেন, হাইকোর্ট পরিস্কার করে বলেছে, এটা জাতির সাথে মস্তকরা করা হয়েছে। এরপরে তো আর কিছু থাকা উচিত না। এটা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, আজকে ছাত্রদের নেতৃত্বকে এভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য এই ধরনের একটা অসৎ উপায় তারা খুঁজে নিয়েছে। আমি বলেছিলাম, এই পুরো ইস্যুটাকে সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতো, উদ্দেশ্য থাকতো অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটা সমাধান করতে পারতো। যেহেতু এই সরকারের রাজনৈতিক প্রতিনিধি নাই সেজন্য এসব ঘটনা তারা করেছে। কয়েকবছর আগে গোয়েন্দা পুলিশ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে খাবারের নাটক করে তাকেও হেয়প্রতিপন্ন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘একটা অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি তো এখানে (সরকার) আওয়ামী লীগ খুঁজে পাই না। আমি বার বার আগেও বলেছি, এটা মূলত এখন পুরোপুরিভাবে একটা অদৃশ্য শক্তি যে শক্তি এদেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে সেই শক্তির একটা সরকার। আপনি দেখুন যেখানে এই সমস্ত বাহিনীর প্রধানরা তারা যে ভাষায় প্রকাশ্যে কথা বলেন- মনে হয় না যে, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশে রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যে, এদেশের প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো সরকার নেই। এখানে যে সরকারটা আছে সেটা হচ্ছে যারা এদেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দেশে একটা অরাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করছে তাদেরই সরকার এটা পরিচালনা করছে। এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজুসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

শেয়ার করুন