বহুল প্রচারিত একটি প্রবাদ আছে, ‘পাগলের সুখ মনে মনে, দিনের বেলা তারা গোনে।’ কেউ উদ্ভট কথাবার্তা বললে মানুষ তাদের পাগল আখ্যা দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এবং প্রবাসে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কিছু কার্যক্রম দেখে এ প্রবাদটি বারবার মনে পড়ছে। গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বক্তব্য শুনলে বা ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলে মাথায় একটা প্রশ্ন শুধুই ঘুরপাক খায়-এরা কি রাজনীতিতে নেমে পাগল হয়েছে, না পাগল হতেই রাজনীতি করছে!
গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক যুবলীগের এক প্রাক্তন নেতা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। বিষয়বস্তু ছিল এমন-
‘আগামী ৭ দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘ সদর দফতরে জমা করতে বলা হয়েছে। এটি দিতে না পারলে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বাতিল বলে গণ্য করা হবে। তখন সেনাপ্রধান ক্ষমতা গ্রহণ করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেবেন।’ সংবাদটির জন্য আলজাজিরার বরাত দেওয়া হয়েছে।
১৩ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্ট্যাটাসটি ৮০০-এর বেশি শেয়ার হয়েছে। রিঅ্যাকশন পড়েছে প্রায় ৫ হাজার। ১ হাজার ২০০-এর মতো কমেন্ট পড়েছে। এসব কমেন্টগুলোর অধিকাংশই পোস্টে উল্লিখিত দাবিগুলোর সমর্থনে করা। অথচ মজার ব্যাপার হলো, আলজাজিরার ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো প্রতিবেদন নেই। অর্থাৎ তারা এ ধরনের কোনো প্রতিবেদনই প্রকাশ করেনি। আলজাজিরার সূত্রে ভাইরাল হওয়া শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জাতিসংঘে জমা দেওয়া, এতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ অন্য দাবিগুলো ছিল ভিত্তিহীন।
কয়দিন আগে নিউজার্সি আওয়ামী লীগের এক নেতার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস চোখে পড়েছে। তিনি স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন। আর তার শেয়ারটি একই সংগঠনের ‘সহমত’ ভাইয়েরা কমেন্টের বন্যার ভাসিয়ে দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসটি ছিল এরকম-
‘রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের বরাতে জাতিসংঘে শেখ হাসিনা সরকারের বৈধ পদত্যাগপত্র জমা দিতে না পারায় ড. ইউনূসকে হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এ হুমকিকে সমর্থন করেছে চীন ও ভারত। এসব দাবিও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ‘ডিসমিসল্যাব’ বাংলাদেশে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এ দাবিকে ভুয়া খবর বলে জানান।
উল্লেখ্য, ড. মুহম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ২৭ আগস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ড. মুহম্মদ ইউনূসকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। দূতাবাস থেকে আরো বলা হয়, দুই দেশের বন্ধুত্বের চেতনা থেকেই যৌথভাবে কাজ করবেন তারা। আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাকার প্রতি মস্কোর সমর্থন থাকবে বলেও জানায় রাশিয়া।
এছাড়া অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পরই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, চীন অন্তর্র্বর্তী সরকারের গঠনকে স্বাগত জানাচ্ছে। চীন কখনো কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের যে পথ বেছে নিয়েছে, চীন তাকে শ্রদ্ধা জানায়। বাংলাদেশের সম্পর্কে চীন খুবই গুরুত্ব দেয় এবং দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা সম্পর্ককে তারা এগিয়ে নিতে চায়।
আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করা নিউইয়র্কের একজন তথাকথিত সংস্কৃতিকর্মী কদিন আগে তার ফেস বুকে আরিয়ান আহমদ আজমল নামের দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। স্ট্যাটাসটি সঙ্গে সঙ্গেই অসংখ্য সহমত ভাইয়েরা শেয়ার করেছেন।
স্ট্যাটাসটি এরকম-
‘পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্যার। ভাবতেও পারিনি এতো দ্রুত রাজনীতির স্বাদ মিটে যাবে।’
উল্লেখ্য, এ ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রকাশের পর কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও দেশীয় কোনো মিডিয়াসূত্রে আসিফ নজরুলের আইন উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের গুজব, গুঞ্জন ও আজগুবি বিভিন্ন তথ্য যারা ছড়াচ্ছেন ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের মনে যে প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে ভ্রান্ত করা এবং জনগণের মধ্যে অহেতুক প্রশ্ন ছড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।
উল্লেখ্য, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারাই মূলত এমন কাজগুলো করছে। তাদের বলছি যে কোনো খবর শুনেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না, আগে যাচাই করুন ঘটনা সত্য কি না। তারপর স্ট্যাটাস দিন বা শেয়ার করুন।
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪