প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন আগামী ২৭ অক্টোবর। এ নির্বাচনে দুটি প্যানেল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি প্যানেল হচ্ছে-রুহুল-জাহিদ, অন্যটি সেলিম-আলী প্যানেল। ইতিমধ্যেই দুটি প্যানেল তাদের নির্বাচনী সভা-সমাবেশ শুরু করেছে। কিন্তু এ দুটি প্যানেলের মধ্যে রুহুল-জাহিদ প্যানেলের কর্মকাণ্ড একটু ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে সোসাইটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান দেখা যায়নি। রুহুল-জাহিদ প্যানেলের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এ ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনটি ছিল নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অথবা নিজস্ব প্রয়োজনে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে পরামর্শ এবং করণীয় নিয়ে কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেননি। রুহুল-জাহিদ প্যানেল শুরুতেই প্রমাণ করে দিলেন তারা স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে চলছেন না। সাংবাদিকদের পরামর্শ তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। তাই এ আয়োজন বলে জানালেন প্যানেলে সভাপতি প্রার্থী রুহুল আমিন সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ মিন্টু। তারা নতুন কিছু করতে যাচ্ছেন। কথায় আছে না, দিনের সূর্যোদয়ের সময়ই বলা যায়, দিন কেমন যাবে। রুহুল-জাহিদের কর্মকাণ্ড দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তারা ভালো কিছু করতে এসেছেন, কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করতে এসেছেন।
সুন্দর এ অনুষ্ঠানটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের মুন লাইট গ্রিল রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সভাপতি প্রার্থী রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ মিন্টু এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজু মিয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন সাংবাদিক মোমিন মজুমদার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন এবং তিনি কী কী কাজ করেছেন, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির দায়িত্ব নিয়েছিলাম। কিন্তু কমিটির মধ্যে বিভক্তির কারণে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তারপর আমরা অনেক কাজ করেছি। যার মধ্যে প্রায় ৮০টির মতো ভায়োলেশন ছিল। তার প্রায় সবকটি শেষ করেছি। আরেকটি বাকি রয়েছে, সেটি শেষ করতে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ মিন্টু সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, সোসাইটির অফিসে সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ানের সঙ্গে কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেনের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় আমরা সমঝোতা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিছু লোকের কারণে পারিনি। তবে সর্বশেষ কোর্ট হাজিরার দিন কয়েকজন সাক্ষীকে অনুরোধ করেছি কোর্টে না যাওয়ার জন্য। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। যে কারণে বিষয়টির সহজ নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি, সেই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য জাহিদ মিন্টুকে প্রার্থী হিসেবে নিয়ে এসেছি। তার সঙ্গে আমি বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটিতে নেতৃত্বে দিয়েছি। তার আমলেই দুটি ভবন ঋণ মুক্ত হয়েছে। আগামীর প্রজেক্ট হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কবর ক্রয়। এটিও জাহিদ মিন্টু প্রায় শেষ করে এনেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির জন্য কমপ্লেক্স করা তার পক্ষেই সম্ভব। সে এখানে লেখাপড়া করেছে, নিজের ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেছে। নিউইয়র্কে তার ফার্মটি বড়গুলোর মধ্যে একটি। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যার পক্ষে অসম্ভবকে সম্ভব করা। তার সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি বড় মাপের একজন মানুষ। মানুষের কল্যাণে কাজ করার তার মানসিকতা আছে। যার কারণে আমি তাকে নিয়ে এসেছি।
রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ সোসাইটির সঙ্গে আছি। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সবার সহযোগিতায় পালন করার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, এবার আমি বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। এই নির্বাচনে আমি এবং প্যানেলের জন্য আপনাদের সহযোগিতা এবং পরামর্শ চাই। এই সোসাইটিকে এগিয়ে নিতে হলে আপনারা সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। তিনিও নির্বাচিত হলে ভবন করার পরিকল্পনার কথা জানান।
জাহিদ মিন্টু উপস্থিত সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক দিন থেকেই আমি মানুষের কল্যাণে নি:স্বার্থভাবে কাজ করে আসছি। এই কাজটি আরো বৃহৎ আকারে করতে চাই, যে কারণে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে এসেছি। বাংলাদেশ সোসাইটি যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং অতীতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ তাদের জন্যই আজকে আমরা এখানে। তিনি তার বক্তব্যে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির জন্য কী করেছেন-যার মধ্যে ব্রুকলিনে দুটি ভবন, আগামীর প্রকল্প ১ লাখ কবর ক্রয়ের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি প্রবাসের মধ্যে একটি আদর্শিক এবং শক্তিশালী সংগঠন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে নির্বাচনে পূর্বে কোন প্যানেল বা প্রার্থী আনুষ্ঠানিভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেননি, পরামর্শ চাননি, সহযোগিতা কামনা করেননি। কিন্তু আমরা কাজটি শুরু করেছি। আমি এবং আমাদের প্যানেল আপনাদের বুদ্ধি, পরামর্শ এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের পরামর্শ আমরা আমাদের চলার পথে পাথেয় মনে করি। তিনি বলেন, সব নির্বাচনের সময় আমরা শুনে আসছি, সবাই প্রতিশ্রুতি দেন বাংলাদেশ ভবনের কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা শুধু অনিক প্রতিশ্রুতিই পেয়েছি, তার কোনো বাস্তবায়ন দেখিনি। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যদি আমাদের নির্বাচিত করেন তাহলে আমরা প্রবাসে বাংলাদেশ কমপ্লেক্স করবো। যেখানে থাকবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সব কর্মকা-ের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ইতিমধ্যেই এ প্রকল্প নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। আমরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্বাসী। আপনারা জানেন আমি কোনোদিন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি, এটা করবো না। সুতরাং আমরা আপনাদের সহযোগিতা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট চাই।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, টাইম টিভি ও বাংলা পত্রিকার সিইও আবু তাহের, ডিরেক্টর সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক জন্মভূমির সম্পাদক রকন তালুকদার, সাপ্তাহিক বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, ঠিকানার বার্তা সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, নবযুগ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাগর, আজকাল প্রতিনিধি মনোয়ারুল ইসলাম, দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধি মঞ্জুরুল হক, ডিভিসির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি কানু দত্ত, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোমিন মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিবলি চৌধুরী কায়েছ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি আবুল কাশেম, আহমেদ হোসেন দীপু প্রমুখ।