১৫ অক্টোবর ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:১৭:২০ অপরাহ্ন


অমিত শাহর বক্তব্যে তোলপাড়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২৪
অমিত শাহর বক্তব্যে তোলপাড় বক্তব্য রাখছেন অমিত শাহ


বন্ধু দেশ, প্রতিবেশী দেশ ও দেশের জনগণের সঙ্গে ব্যবহারের ভদ্রতাটুকু ভুলে গেছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপি সরকারের প্রভাবশালী এ নেতা সম্প্রতি এমন সব মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে যা রীতিমতো দৃষ্টিকটু। রাষ্ট্রীয় লেনদেন, মিল-অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব সম্পর্ক চিরকালের। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক যেমনটা মনে করেন, তেমনি ভারতের জনগণও সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে করেন। কিন্তু শুধু ভোট পাওয়া, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য প্রতিবেশী নাগরিকদের নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য সেটা কোন শিষ্টাচারে পড়ে, সেটা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। 

বাংলাদেশ যেমন তার প্রতিবেশী ভারতকে সব সময় বিপদ-আপদে পাশে চায়, তেমনি ভারতও চীনের পেটের মধ্যে থাকা সেভেন সিস্টার্স রক্ষায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। সেখানে দেশটির প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী এবং নরেন্দ্র মোদির আস্থাভাজন ব্যক্তির মুখ থেকে প্রতিবেশী দেশের জনগণকে নিয়ে যে হুমকি-ধমকি, সেটা ভারতের নীতির সঙ্গে মিল আছে কি না সেটা বিশ্লেষণ করছে। বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় আকারে ছোট হতেই পারে। কিন্তু বন্ধুত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে ওই ছোট অবস্থান কখনো প্রভাব বিস্তার করে বলে অন্তত বাংলাদেশের মানুষ কখনো বিশ্বাস করে না। সেটা না হলে ভারত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ইস্যুতে একপেশে মনোভাব পোষণ করার পরও প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ভারত যেতো না চিকিৎসা বা ঘুরতে, শপিং করতে। আর লাখ লাখ ভারতীও বাংলাদেশে এসে চাকরি করে লাখ লাখ ডলার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতেন না। 

কী বলেছিলেন অমিত শাহ? 

ভয়েস অব আমেরিকা জানায়, ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অমিত শাহ গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঝাড়খন্ড রাজ্যে এক নির্বাচনী সভায় হুমকি দেন যে, রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করার পর ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হবে। ‘আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান করছি, ঝাড়খন্ডে বিজেপি সরকার গঠন করুন এবং আমরা প্রতিটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করে দেবো’, রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলার সাঁওতাল পরগনায় এক জনসভায় শাহর বক্তব্য উদ্ধৃত করে কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ এ কথা জানায়।

অমিত শাহ তার বক্তব্যে বিজেপি নেতাদের পুরোনো কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, সাঁওতাল পরগনায় আদিবাসীর সংখ্যা কমছে এবং ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, এ ভূখণ্ড আদিবাসীদের, কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা এখানে বাড়ছে।’ অমিত শাহ ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ’ তদন্ত করার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়ায় ঝাড়খন্ড হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানান। এ বিজেপি নেতা আরো বলেন, ঝাড়খন্ড সরকারকে এ বিষয় তদন্ত করতে সাহায্য করার জন্য কেন্দ্র থেকে শিগ্্গিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে।’ 

প্রতিবাদ ঢাকার

সম্প্রতি ঝাড়খন্ড সফরকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে অত্যন্ত নিন্দনীয় মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবাদপত্রে ঢাকার পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, ভারত সরকারকে রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে গুরুত্বারোপ করে বলা হয় যে, প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে আসা এ ধরনের মন্তব্য দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার মনোভাবকে ক্ষুণœ করে।

এদিকে অমিত শাহর এমন বক্তব্যে উত্তাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এ ব্যাপারে টু শব্দ পাওয়া না গেলেও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যকে সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারপরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীব্যাপী যে ভূকম্পন তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সেটাতে তারা (ভারত) যে মনঃক্ষুণ্ণ ও বেদনার্ত সেটা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কথার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারপরিপন্থী।

এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অমিত শাহর বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানায়।

শেয়ার করুন