নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বর্তমানে একাধিক দুর্নীতি তদন্তের সম্মুখীন হয়েছেন। একাধিক দুর্নীতি তদন্ত তার রাজনৈতিক অবস্থানকে ক্রমশ রে মধ্যে ফেলেছে। নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে দুর্নীতির তদন্ত কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবে এই অবস্থায় একটি অভিযোগ তার জন্য মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। মেয়র অ্যাডামস বর্তমানে এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এফবিআই ও অন্যান্য ফেডারেল তদন্তকারী সংস্থা অ্যাডামসের অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টা ফ্র্যাঙ্ক কারোনের সঙ্গে সম্ভাব্য ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিষয়ে সব তথ্য দিতে ব্রুকলিনের একটি গির্জাকে সমন পাঠিয়েছে। তদন্তটি উপদেষ্টা ফ্র্যাঙ্ক কারোনের সঙ্গে গির্জার প্রিস্ট সম্ভাব্য আর্থিক লেনদেনের ওপর কেন্দ্রিত এবং এটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্ব বহন করছে। ফেডারেল তদন্তকারীরা বিভিন্ন নথি এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করতে চেষ্টা করছেন।
৩০ বছর আগে মেয়র এড কচের তৃতীয় মেয়াদও তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ছিল। যদিও কচ নিজে কোনো অপরাধমূলক জবাবদিহিতায় পড়েননি। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে তিনি চতুর্থ মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, অ্যাডামসের বর্তমান পরিস্থিতি কচের তৃতীয় মেয়াদের সঙ্গে সদৃশপূর্ণ।
এছাড়াও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে কুমোর শীর্ষ সহকারী জো পারকোকো ঘুষের মামলায় অভিযুক্ত হন। কুমো সেই সময় নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। যদিও পরে পারকোকোর দোষ মুক্তি হয়, ততদিনে কুমোর প্রশাসনে এই কেলেঙ্কারির ছাপ থেকে যায়।
সাবেক গভর্নর ডেভিড প্যাটারসন মেয়র অ্যাডামসের একজন মিত্র। তিনি মনে করেন অ্যাডামসের বর্তমান অবস্থা তার নিজের সঙ্গে মিল রয়েছে, যেখানে তিনি তার এক সহকারীর সঙ্গে গার্হস্থ্য সহিংসতার মামলায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্যাটারসন অবশ্য নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং এডামসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হতে পারে।
দুর্নীতির কেলেঙ্কারি নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে নতুন নয়। মেয়র বিল ডি ব্লাসিও তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়নি। ডি ব্লাসিও দ্বিতীয় মেয়াদ সহজেই জয় করেছিলেন। একইভাবে গভর্নর ইলিয়ট স্পিতজারের ক্ষেত্রে, যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়নি, তবুও তিনি পদত্যাগ করেন।
তবে অ্যাডামসের বর্তমান পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। ২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তুর্কি দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ অনুদান নেওয়ার অভিযোগে তার প্রচারণার বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, অ্যাডামসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। এসব তদন্তের ফলে তার পুলিশ কমিশনার এবং সিটি হলের প্রধান আইনজীবী পদত্যাগ করেছেন।
তদন্তের পরিধি এখনো স্পষ্ট নয়, তবে রিপোর্ট অনুসারে তদন্তকারীরা সিটির চুক্তি প্রক্রিয়া এবং সাবেক পুলিশ কমিশনারের যমজ ভাইয়ের লাভজনক কানেকশন নিয়ে তদন্ত করছেন। যদিও এ অভিযোগে এখনও কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অ্যাডামসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ফেডারেল তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।
বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, যদি তদন্ত অ্যাডামসের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অন্তর্ভুক্ত করে, তবে তিনি নিজেও দায়ী হতে পারেন। তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা যদি অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন, তবে ভোটাররা মেয়র অ্যাডামসকেও জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করতে পারেন। তবে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, অ্যাডামস নিজেকে রক্ষা করতে তার সমস্যা তৈরি করা সহযোগীদের বরখাস্ত করতে পারেন। অনেকে মনে করেন, অ্যাডামসের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রকৃত ক্ষতি তখনই হবে, যদি তিনি নিজেই অভিযুক্ত হন। যদি এরকম কিছু ঘটে, তাহলে তার দীর্ঘদিনের সমর্থকরাও তাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবেন।
এদিকে মেয়র অ্যাডামস তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জনসাধারণকে আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি সিটি হলের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত নন, বরং তিনি তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করছেন। তবে তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে এবং ২০২৫ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেছেন। সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করেন অ্যাডামস হয়তো কিছু অবৈধ বা অনৈতিক কাজ করেছেন। তবে এখনো তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তদন্তের চূড়ান্ত ফলাফলই নির্ধারণ করবে অ্যাডামস তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন কিনা।