নেভাদার লভলক কারাগারে মুসলিম বন্দিদের নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার নিষ্পত্তি করতে নেভাদা স্টেট কর্তৃপক্ষকে গত ১৩ অক্টোবর বুধবার ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ফেডারেল কোর্ট। নেভাদা ইউএস ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক মিরান্ডা ডু এই মামলাগুলোর বিচার করেছেন এবং তার রায়ে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলিম বন্দিদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মামলার প্রধান বাদী সাঈদ এলমাজজুব, যিনি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদ- ভোগ করছেন। তিনি আদালতে দাবি করেন যে তাকে মুসলিম ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থনা করতে দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে তিনি কারাগারের চ্যাপলিন স্কট ডেভিসের কাছে শুক্রবারের দুপুরে জুমার নামাজের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে এবং অন্যান্য সময়ের প্রস্তাব দেয়, যা মুসলিম ধর্মীয় প্রথার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বাদী এলমাজজুব বলেন, ‘আমরা শুধু চাইছিলাম যে, ২০-৩০ মিনিটের জন্য কোনো একটি জায়গা, হলওয়ে বা কক্ষ দেওয়া হোক, যেখানে আমরা শুক্রবার দুপুরে প্রার্থনা করতে পারবো। এটা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক, যেমনটা শনিবার ইহুদিদের জন্য এবং রবিবার খ্রিস্টানদের জন্য।’ তবে নেভাদার লভলক কারাগারের কর্তৃপক্ষ তাকে সকাল ৮টায় প্রার্থনার জন্য সময় দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, যা মুসলিম প্রথায় গ্রহণযোগ্য নয়। পরে তিনি অভিযোগ দায়ের করলে কারা কর্তৃপক্ষ একই সময়ের প্রস্তাব পুনরায় দেয় এবং তার অভিযোগকে উপেক্ষা করে। পরবর্তীতে, এলমাজজুব একটি গ্রিভ্যান্স দায়ের করেন এবং উল্লেখ করেন যে প্রশাসনিক নিয়মে নির্দিষ্ট প্রার্থনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তাতেও কোনো সমাধান হয়নি।
ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক মিরান্ডা ডু তার রায়ে বলেন, ‘এটি এমন একটি বিরল মামলা যেখানে বাদীরা সরাসরি প্রমাণ পেয়েছেন যে তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’ তিনি রায়ে আরো উল্লেখ করেন যে, নামাজের সময় নির্ধারণ নিয়ে চ্যাপলিন স্কট ডেভিসের নিজের নেওয়া নোটে এ ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারক ডু রায়ে তার মন্তব্যে বলেন, ‘এটি এমন একটি ঘটনা যেখানে প্রমাণ এতোটাই শক্তিশালী যে, কোর্ট এটি উপেক্ষা করতে পারে না।’
এলমাজজুবের মামলা নিষ্পত্তির জন্য ৯৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু রাজ্য কোনো দায়িত্ব বা ভুল স্বীকার করেনি। এলমাজজুব এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা আমার জন্য মানসিকভাবে কষ্টের কারণ ছিল। তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম তারা দোষ স্বীকার করুক এবং মুসলিম প্রার্থনার জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করুক। কিন্তু তারা তা করতে রাজি হয়নি।’ দ্বিতীয় মামলাটি ছিল একটি প্রার্থনা গোষ্ঠী ‘দ্য ওয়ে ফেইথ গ্রুপ’-এর এক মুসলিম সদস্যের দ্বারা দায়ের করা। এই মামলাতেও আদালত বাদীদের পক্ষে রায় দেন এবং স্টেট মামলার বাদীকে ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়। বিচারক ডু নেভাদা স্টেটকে আদেশ দিয়েছিলেন যাতে শুক্রবার দুপুরের জুমার প্রার্থনা নির্ধারণ করা হয়। যদি স্টেট সেই আদেশ পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আদালত অবমাননার আদেশ দেবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন।
বাদী এলমাজজুব বলেন, ‘এই মামলা খুব সহজেই সমাধান করা যেত যদি তারা আমাদের প্রার্থনার সময় নির্ধারণ করতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি এবং এর ফলে মামলা করতে হয়েছে।’ তিনি তার ক্ষতিপূরণের একটি অংশ দিয়ে তার মায়ের সহায়তা করেছেন এবং বাকিটা দিয়ে নিজেকে একটি আইনজীবী নিয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন যাতে তার শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
নেভাদার লভলক কারাগারে মুসলিম বন্দিদের নামাজের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাটি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। বিচারক মিরান্ডা ডুর রায় এবং ক্ষতিপূরণের আদেশ কেবল বন্দিদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নয়, এটি ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় বার্তা প্রেরণ করেছে। তবে এই মামলাগুলোর নিষ্পত্তি ধর্মীয় অধিকার রক্ষার দীর্ঘ লড়াইয়ের একটি অংশমাত্র, যেখানে ক্ষতিপূরণ অর্থের চেয়ে অধিকারের স্বীকৃতি এবং সম্মানের গুরুত্ব বহন করে। এই ধরনের ঘটনা থেকে কারা কর্তৃপক্ষের শিক্ষা নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি আরো সংবেদনশীল ও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ মামলাগুলো নেভাদার কারাগার ব্যবস্থার ওপর একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবং কারা কর্তৃপক্ষকে বিশাল অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।