ইউএস নবম সার্কিট কোর্ট অব আপিলস গত ২৩ অক্টোবর বুধবার ‘মেটারিং’ পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষণা করে নিম্ন আদালতের একটি রায় বহাল রেখেছে। আদালত বলেছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশে বাধা প্রদানকারী ‘মেটারিং’ পদ্ধতি অবৈধ। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশে বাধা প্রদানকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে। ‘মেটারিং’ একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের প্রবেশ বিন্দুতে আশ্রয় প্রার্থীদের প্রবেশ সীমাবদ্ধ বা বিলম্বিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় আবেদন করার জন্য প্রবেশের অনুমতি প্রদান করে। আশ্রয়প্রার্থীদের সাধারণত অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয় এবং মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে বলা হয়। এই অপেক্ষা কখনো কখনো কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্তও স্থায়ী হয়।
এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু এর ফলে আশ্রয় প্রার্থীরা অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আটকে পড়েন এবং তাদের আশ্রয় প্রার্থনার আইনি অধিকার লঙ্ঘিত হয় বলে সমালোচিত হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধা প্রদানে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভয় দেখানো, সীমান্ত থেকে জোর করে ফেরত দেওয়া, শারীরিক নির্যাতন এবং অন্যান্য অপমানজনক কৌশল। ফলে দুর্বল পরিবার, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা মেক্সিকোতে আটকে থেকে তাদের অনেকেই সহিংসতা ও শোষণের শিকার হয়েছেন এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
২০১৭ সালে, একটি অলাভজনক আইনি সংস্থা আল ওত্রো লাদো এবং অসংখ্য আশ্রয়প্রার্থী এই বাধা প্রদানের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেন। বাদীদের পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনা করেছে সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড রিফিউজি স্টাডিজ, আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল, সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, এবং ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ড; সঙ্গে আইন ফার্ম মায়ার ব্রাউন এলএলপি ও ভিনসন অ্যান্ড এলকিনস এলএলপি। ২০২১ সালে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের একজন বিচারক মেটারিং নীতিকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং রায়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সীমান্ত কর্মকর্তারা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়া করতে বাধ্য। সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, কিন্তু নবম সার্কিট আদালত আল ওত্রো লাদো এবং অন্যান্য বাদীদের পক্ষে রায় প্রদান করে।
যদিও এই রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে, এটি লক্ষ্য করা হয়েছে যে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মেটারিংয়ের নতুন কৌশল তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালে সরকার একটি নিয়ম প্রণয়ন করে যাতে অধিকাংশ সীমান্ত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবেদন নিষিদ্ধ করা হয়। কেবল যারা সীমিতসংখ্যক অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সিবিপি ওয়ান স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের জন্য আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে, যা কার্যত মেটারিংয়ের নতুন রূপ।
আল ওত্রো লাদোর বর্ডার রাইটস প্রজেক্টের পরিচালক নিকোল এলিজাবেথ রামোস বলেন, মেটারিং নীতির কারণে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। অনেককেই নির্যাতন, ধর্ষণ, শোষণ ও গুম করা হয়েছে এবং তাদের আর কোনো খবর শোনা যায়নি। আজকের রায়ে এই পরাজয় মেনে নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের উচিত এই অধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা। এই শিক্ষা নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাত বছর সময় এবং প্রচুর ট্যাক্স প্রদানকারীর অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, অথচ এটি শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল যে আইনের শাসন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা আবশ্যক।
সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের লিটিগেশন ডিরেক্টর মেলিসা ক্রো বলেন, আজকের রায় আমাদের নিশ্চিত করেছে যেসব মানুষের নিরাপত্তার জন্য সরকার একটি সুষ্ঠু ও অর্থবহ প্রক্রিয়া প্রদান করতে বাধ্য। সীমান্তরক্ষীরা নির্বিচারে মানুষকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠাতে পারে না। এটি আমাদের আইনের লঙ্ঘন এবং শরণার্থীদের বিপদে ফেলছে। প্রশাসনের উচিত আজকের রায়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের সিনিয়র লিটিগেশন অ্যাটর্নি সুচিতা মাথুর বলেন, সরকারের উচিত সীমান্তে মানবিক প্রক্রিয়া উন্নয়নে বিনিয়োগ করা। এই রায় আশ্রয় প্রার্থনার মানবাধিকারকে সমর্থন করে।
সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস-এর সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি অ্যাঞ্জেলো গুইসাডো বলেন, আমি গত সাত বছর ধরে সীমান্তে মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যারা এই অবৈধ নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিচারব্যবস্থা তাদের কষ্টকে স্বীকৃতি দিয়েছে দেখে আমি আনন্দিত।
নবম সার্কিট কোর্টের রায়টি মেটারিং পদ্ধতির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি রায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান সীমান্ত নীতির সমালোচনার পরে, এই রায় আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা এবং আইনি অধিকার পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। এখন প্রশাসনের উচিত মানবিক এবং আইনানুগ সীমান্ত প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হওয়া, যাতে আশ্রয়প্রার্থীরা নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।