১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৩:১৪:৩৫ পূর্বাহ্ন


ট্রাম্পের গণহারে বহিষ্কারের পরিকল্পনা
বিপদে পড়বে মার্কিন শিশুদের, ৪ মিলিয়ন পরিবার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৪
বিপদে পড়বে মার্কিন শিশুদের, ৪ মিলিয়ন পরিবার ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম এফোর্সমেন্ট অভিবাসী পরিবারগুলোকে প্রক্রিয়া ছাড়াই বহিষ্কার করছে


প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গণহারে বহিষ্কারের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এতে সম্ভাব্যভাবে ৪ মিলিয়ন মিশ্র-অবস্থার পরিবার বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এসব পরিবারে কিছু সদস্য মার্কিন নাগরিক, আবার কিছু অবৈধ অভিবাসী, যারা একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ফেডারেশনের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এই বিষয়টি উঠে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হলে অনেক শিশু তাদের পিতা-মাতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। বিশেষত অ্যারিজোনা, কলোরাডো এবং পেনসিলভানিয়ার মতো রাজ্যগুলোতে এ পরিস্থিতি আরো প্রকট হতে পারে। মিশ্র-অবস্থার পরিবার এবং মানবাধিকারকর্মীরা এখন থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লিলি, একজন মার্কিন নাগরিক, যিনি তার অবৈধ অভিবাসী স্বামীকে বহিষ্কৃত হওয়ার আশঙ্কায় পাসপোর্ট প্রস্তুত করেছেন এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন অভিবাসী কমিউনিটিতে গণহারে বহিষ্কারের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। এই গণবহিস্কার শুধু অভিবাসী পরিবারকে নয়, বরং মার্কিন নাগরিক শিশুদের জীবনকেও বিপন্ন করবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক শিশু, যাদের বাবা-মা অভিবাসী, তারাও বিপদগ্রস্ত হতে পারে। ২০২২ সালে প্রতি চারটি আমেরিকান শিশুর মধ্যে একটির বাবা-মা অভিবাসী ছিলেন এবং ৪ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন নাগরিক শিশু ১৮ বছরের নিচে যারা অবৈধ অভিবাসী পিতা-মাতার সঙ্গে বসবাস করতেন। সান ফ্রান্সিসকোর অভিবাসী আইন সংস্থান কেন্দ্রে স্টাফ অ্যাটর্নি অ্যান্ড্রু ক্রায়ক্রফট জানান, গণহারে বহিষ্কার মার্কিন নাগরিক শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।

ইয়াং সেন্টারের কো-ডিরেক্টর কেলি অ্যালবিনাক ক্রিবস বলেছেন, ‘এই শিশুদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছে এবং তারা এখন তাদের বাবা-মাকে হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে তার গণহারে বহিষ্কারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে অভিবাসী কমিউনিটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা একে অন্যটির পরিপূরক লক্ষ্য হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, এর ফলে মার্কিন নাগরিক শিশুদের ওপর মানসিক চাপ পড়তে পারে।

ট্রাম্পের প্রশাসন যদিও এ ধরনের নীতি নতুন নয়, কিন্তু পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে শিশুদের মানসিক ক্ষতি সীমিত করার চেষ্টা করেছিল। যেমন-ওবামা প্রশাসন স্কুল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং উপাসনালয়ে আইস রেইড নিষিদ্ধ করেছিল। তার আগে বুশ প্রশাসন আইসকে বড় ধরনের রেইডের আগে স্কুল এবং শিশু সুরক্ষা সেবা সংস্থাগুলোকে জানাতে বলেছিল। তবে ট্রাম্পের নীতি শিশুদের ওপর ক্ষতি করার ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে আরো কড়াকড়ি আনছে। সেন্টার ফর ল, সোশ্যাল পলিসি এবং ইমিগ্র্যান্ট ফ্যামিলির পরিচালক ওয়েন্ডি সারভান্টেস বলেন, ‘ট্রাম্পের সময়, আগের চেয়ে আরো গভীর ক্ষতি শিশুদের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনার একটি প্রধান অংশ।’

২০১৮ সালের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায়, ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত ৫ হাজার বিদেশি শিশুসহ মার্কিন নাগরিক শিশুদের তাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে আলাদা করেছে। ২০১৯ সালে সারভান্টেস মিসিসিপি রাজ্যে গিয়েছিলেন, যেখানে আইস কর্মকর্তারা ৭০০ অবৈধ অভিবাসী কর্মীকে গ্রেফতার করেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন নাগরিক শিশুদের বিদ্যালয়ে পড়তেন।

আগামী জানুয়ারিতে, একে একে পরিবারের বিচ্ছিন্নতা এবং অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ আবারও কার্যকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্প আরো জোর দিয়েছেন অভিবাসীদের বৈধ অবস্থার ওপর হামলা করার জন্য এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আইন বাতিল করতে। এমনকি তিনি মার্কিন নাগরিক শিশুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। যদিও এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার জন্য ব্যাপক সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে, তবে এটি একটি খরচ সাপেক্ষ এবং জনমত সম্পর্কে বড় প্রশ্ন তৈরি করছে। সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের সিনিয়র পরিচালক ডেবু গান্ধী বলেন, ট্যাক্স পেয়ারের অর্থ খরচ করে মা-বাবাকে ফেরত পাঠানো, যারা মার্কিন নাগরিক শিশুদের কোনো নিরাপত্তা বিপদ তৈরি করে না, তা খরচ বাড়াবে।

ইয়াং সেন্টারের ক্রিবস বলেন, অভিবাসী বাবা-মায়ের থেকে বিচ্ছিন্নতা বা তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে। এ চাপ আগামী প্রশাসনের অধীনে বিশেষভাবে বাড়তে চলেছে, যেখানে এক বা একাধিক অভিবাসী পিতা-মাতা বৈধ অবস্থান হারিয়ে ফেলবে। এ পরিস্থিতিতে, অভিবাসী এবং শিশুকল্যাণ সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে এ ধরনের পলিসির কারণে বিপর্যয়টি আরো বাড়তে না পারে। ক্রিবস আরো বলেন, আমরা পরবর্তী চার বছর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এর মধ্যে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটবে।

শেয়ার করুন