১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৩:৬:৩১ পূর্বাহ্ন


ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধেক মুসলিম শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৪
ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধেক মুসলিম শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া


ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধেক মুসলিম শিক্ষার্থী তাদের ক্যাম্পাসে বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে একটি নতুন জরিপে উঠে এসেছে। সেন্টার ফর দ্য প্রিভেনশন অফ হেট অ্যান্ড বুলিইং (সিপিএইচবি) কর্তৃক পরিচালিত এই জরিপে ক্যালিফোর্নিয়ার ৮৭টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২০ জন মুসলিম শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, গত চার বছরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি ইসলামোফোবিয়া (ইসলাম-বিরোধী আচরণ) ১০ ভাগ বেড়ে গেছে এবং বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা তাদের সহপাঠী, শিক্ষক বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এই বাড়তি বৈষম্য মূলত প্যালেস্টিনিয়ানদের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান প্রতিবাদ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ এবং তার পরবর্তী সময়ে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে ক্যাম্পাসে মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘৃণা, আরব-বিরোধী ও প্যালেস্টাইনি-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। সেন্টার ফর দ্য প্রিভেনশন অব হেট অ্যান্ড বুলিংয়ের মতে, বিশেষ করে প্রো-প্যালেস্টাইনি প্রতিবাদকারীরা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছেন এবং অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমর্থন বা সাহায্য প্রদানে অবহেলা করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) ছাত্র সামার বলেছেন, অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী, যারা গাজার যুদ্ধের কারণে প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের শোকের সঙ্গে সহানুভূতির অভাব অনুভব করছেন। তারা শুধু পরিবারকে হারাচ্ছেন না বরং তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসের সহপাঠী বা প্রশাসনের কাছ থেকেও কোনো সমর্থন পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এই সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানো, শোকের সময় নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং ছাত্রদের সমর্থন করা।

ইউএসসির প্রতিবেদন অনুসারে, ৪৯ ভাগ মুসলিম শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, তারা গত এক বছরে ইসলাম-বিরোধী বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। এটি গত বছরের তুলনায় বেশি, যা স্নাতক এবং পোস্ট-স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে, প্রো-প্যালেস্টাইনি প্রতিবাদ আন্দোলনগুলোর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংসতা এবং সহিংস কর্মকা- সংঘটিত হয়েছে, যেমন ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে এক সহিংস সংঘর্ষ।

এই বিষয়টি ইউসিএলএর ‘অ্যান্টি-প্যালেস্টাইনিয়ান, অ্যান্টি-মুসলিম এবং অ্যান্টি-আরব’ বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, যেখানে ক্যাম্পাসে মুসলিম এবং প্যালেস্টাইনি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে একটি আলাদা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, ৮৪ ভাগ ইহুদি শিক্ষার্থী মনে করেন, গত বছরের অক্টোবর হামলার পর থেকে ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে যে, মুসলিম শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তাদের অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানাতে আগ্রহী নন। ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে, তারা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি এবং এই কারণে তারা আরো অস্বস্তিতে পড়েছেন।

এই জরিপটি ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল, যা প্রো-প্যালেস্টাইনি প্রতিবাদ ও সহিংসতা বৃদ্ধির সময়কালকে ঢেকে রেখেছে। জরিপে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন, তবে এটি কিছু বড় বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইউসিএলএ, ইউসিসি আইভাইন, ইউসিসি রিভারসাইড ইত্যাদির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পাস যেমন পোমোনা কলেজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

ইউএসসি এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত এখন আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে মুসলিম, আরব এবং প্যালেস্টাইনি শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশে নিরাপদ বোধ করতে পারেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে যে, তারা সহনশীলতা এবং বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস তৈরি করার জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় প্রকাশে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির সম্মুখীন না হন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে, শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত, চিন্তা এবং সামাজিক পরিচয় প্রকাশে মুক্তভাবে তাদের শিক্ষাজীবন পরিচালনা করতে পারবে। এই ধরনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব, যাতে সব শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা অর্জন করতে পারেন কোনো ধরনের বৈষম্য বা আতঙ্ক ছাড়াই।

শেয়ার করুন