১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৬:২৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে জয়া আহসান
আমরা নিজেদের আনন্দের জন্য কেন অন্যের ক্ষতি করি : জয়া আহসান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৫
আমরা নিজেদের আনন্দের জন্য কেন অন্যের ক্ষতি করি : জয়া আহসান জয়া আহসান


জয়া আহসান। প্রিয় অভিনেত্রী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। যিনি বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। বিদায়ী বছর শেষে তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে নতুন বছরের পরিকল্পনা ও ব্যক্তিগত ভাবনা শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি, শহরের আতশবাজি ও ফানুসের কারণে প্রাণীজগতের ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে এক গভীর আলোচনা করেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: আপনি ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যেখানে আপনি আতশবাজি ও ফানুসের কারণে প্রাণীজগতের ক্ষতির কথা তুলে ধরেছেন। এই বিষয়টি আপনি কেন এত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছেন?

জয়া আহসান: হ্যাঁ, নতুন বছরের প্রথম দিনটির পেছনে যে উৎসব ও আনন্দ, তার মধ্যে অনেক কিছুই আমাদের অজান্তে অন্যদের জন্য এক বিপর্যয় হয়ে দাঁড়ায়। আমি যখন দেখি, আতশবাজি আর ফানুসের কারণে পাখি, কুকুর, বিড়াল, এমনকি মুরগি পর্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, তখন মনে হয় আমাদের নিজেদের উৎসবের আনন্দের জন্য এত প্রাণের ক্ষতি কেন? এ বছরও হয়তো আমরা দেখব, আমাদের শহরের অসহায় প্রাণীগুলোর দুঃখ, আর তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত।

প্রশ্ন: আপনি লিখেছেন, ‘এই শহরের পাখির মৃত্যু, কুকুর-বিড়াল, এমনকি ডিমের ভেতর বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।’ কীভাবে আপনি মনে করেন এসব প্রাণীর মৃত্যুর দায় আমাদের?

জয়া আহসান: আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভাবেন, ‘পাখি মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট হয় না’, তবে কী আমরা এদের গুরুত্ব বুঝি না? প্রতিটি প্রাণীই সমান। সেগুলোর জীবনও মূল্যবান। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের উৎসবের জন্য যদি প্রাণীদের অস্থিরতা, আহত বা মৃত্যুর কারণ হয়, তাহলে তার দায় আমাদেরও। আর এ দায়কে অস্বীকার করা উচিত নয়।

প্রশ্ন: গত বছরের স্মৃতিচারণ করে আপনি এক শিশু, উমায়েরের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছিলেন। কি ঘটেছিল তার সম্পর্কে একটু জানাবেন?

জয়া আহসান: ২০২২ সালের জানুয়ারির ১ তারিখে যখন মানুষ আতশবাজি আর ফানুসের তা-বে উল্লাস করছিল, ঠিক তখনই ছোট্ট উমায়ের মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল। শিশু উমায়েরের মৃত্যু, শুধু যে তার পরিবারের জন্য কষ্টকর ছিল, তা নয়, শহরের নগরবাসীর প্রতি এটা একটি গুরুতর প্রশ্ন। আমরা কেন নিজেদের আনন্দের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে রাজি হই? এমন মৃত্যু ও পরিস্থিতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তোলে।

প্রশ্ন: আপনি কিভাবে আমাদের নগরবাসীকে সচেতন করতে চান?

জয়া আহসান: প্রথমেই বলব, সবাই যেন প্রাণীজগতের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। আতশবাজি বা ফানুসের মতো উৎসবগুলোর মাধ্যমে জীবনের কোনো দুঃখ বা ক্ষতি ঘটানো উচিত নয়। আমরা যদি একে অপরের আনন্দের মধ্যে ছোট ছোট প্রাণীগুলোর বিপদের কথা মনে রাখি, তাদের দুর্ভোগ কাটিয়ে দেব। এবারের নতুন বছরেও আমি আশা করবো, আমরা সবাই একত্রে আনন্দ করতে পারি, কিন্তু সেটা যেন অন্য কোনো প্রাণী বা মানুষের ক্ষতির কারণ না হয়।

প্রশ্ন: নতুন বছরের এই দিনে, আপনি কি কিছু বিশেষ বার্তা দিতে চান?

জয়া আহসান: আমি শুধু একটিই অনুরোধ করতে চাই। যখন আতশবাজি আর ফানুসের ঝলকানি দেখতে যাবেন, তখন কি একটু সময় নিয়ে ভাববেন, আমাদের উল্লাসের কারণে চারপাশের ছোট ছোট প্রাণীগুলোর কি হতে পারে? তাদের জীবনও মূল্যবান। একে অপরের আনন্দের জন্য, আসুন আমরা সবাই আরও মানবিক হই।

প্রশ্ন: ২০২৪ সালের মধ্যে আপনার কি কোনো প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে?

জয়া আহসান: আমি কখনোই খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করি না। সাধারণত আমি কোনো পরিকল্পনা বা রোলমডেল তৈরি করে ভবিষ্যতের দিকে তাকাই না। বরং, প্রতিটি বছর আমি চেষ্টা করি যেন ভালোভাবে কাটুক, আমরা সবাই ভালো থাকি। ২০২৪ সালটি বাংলাদেশিদের জন্য সত্যিই ইভেন্টফুল ছিল, কিন্তু ২০২৫ সাল নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা করছি না। আমার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কাজটি ভালোভাবে করা এবং ভালো ফলাফল পাওয়া।

প্রশ্ন: নতুন বছরে আপনার পরিকল্পনা কী?

জয়া আহসান: নতুন বছরের জন্য আমার তেমন কিছু পরিকল্পনা নেই। আমি সাধারণত কাজের প্রতি মনোযোগী থাকি। আমি কখনোই পরিকল্পনা করে কিছু করি না, বরং যা সামনে আসে, সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে এগিয়ে যাই। কাজের মধ্যে তৃপ্তি খুঁজি এবং সেভাবেই চলতে চাই।

প্রশ্ন: বলিউডে ঢালিউডের মূল্যায়ন নিয়ে আপনার মতামত কী?

জয়া আহসান: বাংলাদেশের সিনেমার মূল্যায়ন আমি খুব ভালো দেখেছি, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভাল সার্কিটে। আমি ভারতে কাজ করেছি এবং সেখানে খুবই আগ্রহের সাথে বাংলাদেশের কন্টেন্ট দেখেন তারা। বাংলাদেশের সিনেমা এবং শিল্পের প্রতি অনেক প্রশংসা শোনা যায়। আমি মনে করি, বলিউডেও বাংলাদেশি কন্টেন্ট বেশ জনপ্রিয় এবং তারা আমাদের কাজকে ভালোভাবে ফলো করে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন।

প্রশ্ন: ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো আফসোস বা অনুশোচনা রয়েছে কি?

জয়া আহসান: আফসোস বা অনুশোচনা কিছু নেই। আমি কখনো চিন্তা করি না যে, কোন চরিত্রটি আমার ড্রিম চরিত্র ছিল বা কোনটি পেলে ভাল হতো। তবে, আমি মনে করি, বাংলাদেশের ডিরেক্টররা আমার পুরো সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারেননি। আমি জানি, আমার আরও অনেক কিছু করার সুযোগ ছিল, কিন্তু সম্ভবত সে সম্ভাবনা পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি।

শেয়ার করুন