১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪০:৬ পূর্বাহ্ন


প্রসঙ্গ নিউ এজে ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত
ভারত তাদের গণমাধ্যমের আজগুবি খবরে আস্থা রাখবে না..
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
ভারত তাদের গণমাধ্যমের আজগুবি খবরে আস্থা রাখবে না.. সাক্ষাৎকার প্রদান করছেন ড. ইউনূস


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিষ্কার করলেন ভারত সরকারকে তার সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার প্রপান্ডা থেকে বিরত রাখতে রাজি করাতে পেরেছেন। এর পাশাপাশি তিনি আভাস দিলেন যে, দেশের ভেতরে সংস্কার বা দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেরা নিজোরা যতোই উত্তেজিত হউক না কেনো এক সময়ে তারা ঐক্যমতে পৌঁছে যাবে। এবং দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও হয়ে যাবে। বুঝিয়ে দিলেন মাঠের ভেতরে বাইরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবাই যা দেখছে তার বিপরীত চিত্রও আছে। 

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজকে তিনি এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আর এসাক্ষাৎকারে কয়েকটি বিষয় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত কৌশলী উত্তর দিয়েছেন। যাতে উপরের বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছে পত্রিকাটির সম্পাদক নূরুল কবীর। 


ভারত প্রসঙ্গ

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুঝিয়ে দিলেন যে তিনি ভারত থেকে একটি কূটনৈতিক সাফল্য কৌশলে আয়ত্ত করে নিয়েছেন। কেননা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের গণমাধ্যমে তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানান ধরনের সংবাদ পরিশেন করে যাচ্ছে। তারা কখনো বলছে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। কখনো বা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের আশে পাশে উগ্র মৌলবাদী চক্র ঘিরে ফেলেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বাংলাদেশে শক্ত আসন গেড়ে বসেছে। ভারতের গণমাধ্যমে এমন প্রচারণাকে অনেক সময় কারো কারো অভিমত ছিল এটা ওই দেশটির সরকারই আস্কারা দিয়ে করাচ্ছে। ধরে নেয়া হয় ভারত সরকারি ভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস’র শাসনামলকে বির্তর্কিত করতে গাটছাড়া বেঁধেছে। কিন্তু প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউ এজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে দিলেন তিনি এসব বিষয়ে এখন থেকে ভারতের সরকারের সম্পৃক্ততা যদিও আগে থেকে থাকলেও সেটা সামনের দিনে আর চলমান থাকবে না। নিউএজে দেয়া সাক্ষাৎকারের এক অংশের প্রশ্ন উত্তরে এমনটাই ফুটে উঠেছে। 

দেখা যাক নিউ এজে কি বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস?

ভারত প্রসঙ্গে নিউ এজের পক্ষ থেকে একটি বিষয় জানতে চাওয়া হয় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। নিউ এজ তাকে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশে রাজনৈতিক রক্তাক্ত পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে মানুষের মনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটাকে আমাদের পাশের দেশ ভারত এক ধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং নানান কথা বলছে। এটা ঠিক জাতীয়তাবাদী চৈতন্য থেকে নয়, দেশকে ভালোবাসি বলে নয়, তথ্য বিকৃতি হিসেবে নানা জায়গা থেকে মিডিয়া এগুলো সাধ্যমতো বলছে। কিন্তু সেটা হচ্ছে একটা মিডিয়ার লড়াই। বলতে চাচ্ছি বস্তুত ফাংশনাল ডিপ্লোম্যাসিতে আপনার এ ক’দিনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ভারতের সম্পর্কে একটা সুষ্ঠু ওয়ার্কিং রিলেশন তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে কি আমরা এগুতে পেরেছি?

ড. ইউনূস এসময় উত্তরে বললেন, ‘‘আমরা বরাবরই সেটা চেষ্টা করছি। ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরা। প্রথমবার যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে আলাপ হলো (উনি ফোন করেছিলেন)। উনি অভিযোগ করলেন এখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। বললাম, যে এটা অতিরঞ্জিত কতোগুলো সংবাদ আপনার কাছে যাচ্ছে। কাজেই এটা আপনি বিশ্বাস করবেন না। যদি আপনি প্রকৃত তথ্য জানতে চান আপনার সাংবাদিকদের পাঠান। এখানে আসুক, তারা দেখুক। দেখে রিপোর্ট করুক। আমাদের তথ্যগুলো যদি আস্থায় আনতে না চান তাহলে এটাই প্রকৃত পরিস্থিতি। পরবর্তীতে অনেক ভারতীয় সাংবাদিক এখানে এসেছিলেন। তারা রিপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে করে অতিরঞ্জন থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু কিছু সংবাদ আছে যেগুলো অতিরঞ্জনের বিষয় না। এগুলো একেবারে গাঁজাখোরি কতোগুলো কথা। সে রকম চলছেই। নানারকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরবর্তীতে যখন তাদের পররাষ্ট্র সচিব আসলেন তখন বললাম এরকম কেন হচ্ছে? উনি বললেন, এটা আমাদের সরকারের বিষয় না। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। আমাদের আওতার বাইরে। কাজেই সরকার এটা থেকে দূরে সরলো। কাজেই এটা আমাদের জন্য একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এতদিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে প্রকাশ করছিল। এখন বলছে আমাদের না। কাজেই এটা হয়ে গেল। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেয়ার জন্য। ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্টরা যখন আসে তারা করে। এখন মনে হয় ইন্টারন্যাশনাল কভারেজের কারণে অত বেশি জুত করতে পারছে না। এখনো উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে, কিন্তু জুত করতে পারছে না। আগে বলছিল, এটা ইসলামিস্ট অভ্যুত্থান হয়েছে। তালেবানদের হাতে চলে গেছে ইত্যাদি। পত্র-পত্রিকা, ইন্টারন্যাশনাল কাগজপত্রে যখন আসছে ওখানে তারা আর সুবিধা করতে পারছে না ওরকম বলে। কিছু কাগজ দেখালো এখানে, দেখা গেল কেবিনেটের মধ্যে কারা কারা আছে। তাদের যে পরিচিতি দিলো কেউ বিশ্বাস করবে না এরা ইসলামিস্ট গোষ্ঠীর। কাজেই এই ধরনের প্রোপাগান্ডা আগের থেকে অনেকটা কমেছে।’’

এমন উত্তরে কি মেসেজ দিলেন ইউনুস?

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটা স্পষ্ট করে বললেন, তিনি ভারতে বোঝাতে পেরেছেন তাদের গণমাধ্যম নানারকম আজগুবি সংবাদ দিচ্ছে। পরবর্তীতে যখন তাদের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের আসে তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবিষয়টি তুলে ধরলে ভারত বলতে বাধ্য হয় বলতে যে ‘এটা তাদের সরকারের বিষয় না। সরকার এটার মধ্যে জড়িত না। এগুলো মিডিয়ার বিষয়। তাদের আওতার বাইরে।’ নিউ এজের সাথে এসব তথ্য তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দিলের ভারত সরকারকে সেদেশের আজগুবি সংবাদ নিয়ে হৈ হুল্লোড় দেখে দূরে রাখা গেছে। এজন্য বেশ দৃঢ়তার সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়ে দিলেন, ‘এটা অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এতদিন সরকার এটার মধ্যে জড়িত ছিল বলে প্রকাশ করছিল। এখন বলছে আমাদের না। কাজেই এটা হয়ে গেল।’ ড. ইউনুস আরো বুঝিয়ে দিলেন যে, তার সরকার চেষ্টা করেছে সরকারের তথ্যগুলো তাদের কাছে দেয়ার জন্য। ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্টরা যখন আসে তারা করে। ’ এটি উল্লেখ করে ড. ইউনুস আশ্বস্ত করলেন তার কৌশলের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল কভারেজের কারণে ভারতীয় মিডিয়া অত বেশি জুত করতে পারছে না। এখনো উল্টাপাল্টা খবর দিচ্ছে, কিন্তু জুত করতে পারছে না।

সংস্কার না নির্বাচন? এমন বিভেদ নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বার্তা.. 

দেশের ভেতরে বিএনপিসহ প্রায় সবদলই এখন চায় দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচন। এনিয়ে বিএনপি জামায়াতের মধ্যে মতভেদ চরমে পৌঁছে। এক পর্যায়ে দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি হয়তাবা মাঠে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে পারে বা আন্দোলনের ডাক দিয়ে দিতে পারে-এমন আশঙ্কাও দেখা দেয়। দেশে এখন পর্যন্ত সেধরনের একটি রাজনৈতিক উত্তেজনা সবার চোখেই পড়ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টির গোমড় ফাঁক করে দিয়েছেন বলেই ধরে নেয়া যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নিউ এজের প্রশ্নটা ছিল এরকম..। 

‘আমরা লক্ষ্য করছি পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যারা নতুন রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন, অর্থাৎ তরুণরা যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে তারা নির্বাচনের জন্য সময় নিতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে আনা দরকার। তবে পাবলিক ডিবেটের মধ্যে এক ধরনের তিক্ততা তৈরি হয়েছে। আপনার নজরে এসেছে?‘

নিউ এজের এমন প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের ড. ইউনূস সাফ বুঝিয়ে দিলেন যে, বিষটির ব্যাপারে খুব ভালো করে নজরে এসেছে তার। নিউ এজের পাল্টা প্রশ্ন ছিল যে,‘সেটা দুশ্চিন্তার ব্যাপার নয়? আর ড. ইউনূস উত্তরে দৃঢ়তার সাথে বললেন,‘ মোটেও না। কারণ ওই যে বললাম, বাইরে একরকম, ভেতরে আরেক রকম। সেই কারণে তারা শেষ পর্যন্ত একমত হয়ে যাবে।’

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ধরনের উত্তরে তিনি এটা স্পষ্ট করে দিলেন যে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির একে অপরের মধ্যে যতোই বিভেদ দলাদলি থাকুক না কেনো সবশেষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের আয়ত্তেই সব থাকবে। জাতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তথা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিই আস্থাশীল থাকবে, সবাই নির্বাচনেই অংশ নেবে। তিনি তার সরকারের কিছু কিছু ব্যর্থতাও অকপটে স্বীকার করে নেন।

শেয়ার করুন