তীব্র শীত এবং কয়েকটি স্টেটে তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে ভয়াবহ এক তুষারঝড়। তুষারে ঢেকে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। ৬ কোটির বেশি মানুষ আবহাওয়া সতর্কতার আওতায় রয়েছেন। সাতটি অঙ্গরাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তুষারঝড়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তুষারঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টর্ম ব্লেয়ার’। সেটি এখন পূর্ব উপকূলের দিকে আঘাত হেনেছে। এ অঞ্চলে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অবস্থিত। গত ৬ জানুয়ারি সোমবার ওয়াশিংটন, মেরিল্যান্ড, ক্যানসাসসহ বিভিন্ন স্টেটে ব্যাপক তুষারপাত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতরের (এনডব্লিউএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মধ্যাঞ্চল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত ৩০টি অঙ্গরাজ্য সতকর্তার আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি ও ফিলাডেলফিয়ার মতো বড় শহরগুলো। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভারী তুষারপাত ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কারণ হতে পারে স্টর্ম ব্লেয়ার।
গত ৫ জানুয়ারি রোববার উপদ্রুত বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়ের কারণে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলে তুষার জমে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। বিলম্ব বা বাতিল হয়েছে হাজার হাজার ফ্লাইট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে কানসাস, কেন্টাকি, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, আরকানস ও নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে।
উড়োজাহাজ চলাচলের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, রোববার ঝড়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চলাচল করা ১ হাজার ৭০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৮ হাজার ৩০০টি ফ্লাইটে বিলম্ব হয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তির জন্য আমেরিকান, ডেল্টা, সাউথওয়েস্ট ও ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ভাড়া মওকুফের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।
‘মাইরাডার’ নামে আবহাওয়া-সংক্রান্ত একটি অ্যাপের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ম্যাথিউ কাপুচির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানসাস শহরে গত ৩২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুষারপাত হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে এক ফুটের বেশি তুষার জমেছে। উত্তর মিসৌরির অবস্থাও খারাপ। সেখানে তুষার জমেছে ১৪ ইঞ্চি।
যুক্তরাষ্ট্রে এই তুষারঝড় এক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের আবহাওয়াবিদ ড্যান ডেপডউইন। তিনি বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকতে পারে। এই সপ্তাহে জানুয়ারির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকবে। নিউইয়র্কে হালকা তুষারপাত হলেও ঝেঁকে বসেছে শীত।
কানাডার বাসিন্দাদেরও তুষারঝড়ের কারণে কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। দেশটির অনেক অংশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কিছু এলাকায় ঝড়ের সঙ্গে হঠাৎ করে ভারী তুষারপাত হচ্ছে। কানাডার মধ্যাঞ্চলের প্রদেশ মানিটোবায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নিচে নেমেছে। আর রোববার অন্টারিও প্রদেশে প্রায় ১২ ইঞ্চি তুষারপাত হয়েছে। এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করতে সক্ষমÑএমন বেশ কয়েকটি বজ্রঝড় যুক্তরাষ্ট্রের আরকানস ও লুইজিয়ানা থেকে মিসিসিপি ও আলাবামার দিকে এগোতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়াবিদ রেয়ান মাউয়ি বলেন, ‘একটি জগাখিচুড়ি অবস্থা সৃষ্টি হতে চলেছে। বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। বেশ কিছু সময় ধরে আমরা এমন কিছু দেখিনি।’
আটলান্টিক সিটির প্রবাসীদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত
সুব্রত চৌধুরী : গত ৬ জানুয়ারি নিউজারসি রাজ্যের আটলান্টিক সিটিসহ পার্শ্ববর্তী শহরগুলো তুষারঝড়ের কবলে পড়ে। এর ফলে ব্যাহত হয় শহরগুলোর অধিবাসীদের মতো প্রবাসীদেরও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড তুষারপাতের সঙ্গে বয়ে গেছে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তুষারপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা। তুষার ঝড়ের কারণে বিমানের অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নিউজার্সী রাজ্যের গভর্নর ফিল মারফি তুষার ঝড়কে সামনে রেখে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তুষার ঝড়কে সামনে রেখে আটলান্টিক সিটির নগর কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। আটলান্টিক সিটির অধিবাসীদের সিআরডিএর অধীনস্থ ওয়েব গ্যারেজে ফ্রি পার্কিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া জরুরি পরিসেবা ব্যতিত আটলান্টিক সিটি গভর্নমেন্ট ও আটলান্টিক কাউন্টি গভর্নমেন্টের অফিসসমূহ বন্ধ ছিল। স্কুল-কলেজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা ছিল খুব কম। সিটির লোকজন রাস্তাঘাটের তুষার পরিষ্কারে ব্যস্ত ছিলেন। টহল পুলিশ, দমকল বাহিনী আর রাস্তাগুলোতে বরফ গলিয়ে ফেলার লবন ছিটানোর গাড়ি ছাড়া তেমন কিছুই নজরে আসেনি দুর্যোগে আক্রান্ত জনপদে। তুষারপাতের মধ্যে আটলান্টিক সিটিতে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটে। আটলান্টিক সিটির মেয়র মার্টি স্মল শুরু থেকেই পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছিলেন।
তুষার ঝড়ের সময় আটলান্টিক সিটির প্রবাসীরা প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। যারা ক্যাসিনোতে কাজ করেন তাদেরকে কাজে যেতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়েছিল। তুষার ঝড়ের তীব্রতা কমে আসলে অনেক শিশু-কিশোর ‘স্নো বল’ খেলায় মেতে ওঠে। রমনীদের কেউ কেউ আবার তুষারঝড়ে স্নাত হয়ে তুষার কণা গায়ে মেখে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।