৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:০৭:০৮ অপরাহ্ন


বিএনপি’র দাম্ভিকতা : রুপা হকের মন্তব্য
লক্ষণ মোটেই ভালো না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
লক্ষণ মোটেই ভালো না ব্রিটিশ এমপি রূপা হক


রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজির মামলায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আমিনকে আটক করেছিল সেনাবাহিনী। সম্প্রতি রাজধানীর নিউ পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে লালবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। জানা গেছে, আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজির সময় সেনাবাহিনী পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্তের ভিত্তিতে আমিনুল ইসলাম আমিনের নাম উঠে আসে। পর সেনাবাহিনীর তৎপরতায় আমিনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করে। তবে গ্রেফতারের খবর শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, কোথাও কোথাও মিস্টি বিতরণও চলে। এর পাশাশি চাঁদাবাজি বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ। 

ঘটনা দুই

মুন্সিগঞ্জে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার এক যুবদল নেতাকে থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে জেলার শ্রীনগর থানায় এ ঘটনা ঘটে। থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই আসামির নাম তরিকুল ইসলাম। তিনি শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনা তিন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর ও অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে ‘গণঅনশন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমে বলেছেন, নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হন্তান্তরের জন্য আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্পষ্টভাবে বলেছি। এ বিষয়ে পাঠানো চিঠিও আমাদের হাতে আছে। নতুন ক্যাস্পাসের কাজ বাস্তবায়নে জবি প্রশাসন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

ঘটনা চার

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে জলমহালের দখল নিয়ে রাতের আঁধারে টর্চ জ্বালিয়ে দুই বিএনপি নেতার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। গত সপ্তাহের ৮ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার স্বজনগ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গুরুতর আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য আহতদের হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার জলমহাল (কাইঞ্জা বিল) দখল নিয়ে ১নং লাখাই ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আরিফ আহমেদ রুপন ও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা হারিছ মিয়ার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তাদের পক্ষ নিয়ে গ্রামের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও টর্চ লাইট নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় রাতের আঁধারে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এতে উভয় পক্ষের নারী-শিশুসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক লোকজন আহত হয়। খবর পেয়ে লাখাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত ৯টার দিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করে।

এসব লক্ষণ মোটেই ভালো না

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে এধরনের একের পর ঘটনা অশনি সংকেত। এগুলোতে বোঝাই যাচ্ছে লক্ষণ মোটেই ভালো না। যদিও এসব ঘটনায় বিএনপি তার অঙ্গসংগঠন খুব্র দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু কারো কারো মতে, বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে বা জড়িত হয়ে এসব ঘটনা দলটির পাশাপাশি দেশেরও মহাদুর্যোগ বয়ে আনবে বলেই তারা মনে করেন। কারো কারো মতে, বিএনপি’র এক শ্রেণীর ধরেই নিয়েছে যে, তারা ক্ষমতায় চলেই এসেছে। আর তাদের কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ নেই মাঠে। খালি মাঠে বিএনপি গোল করে করে দেবে। কিন্তু মাঠে বিএনপি’র এক শ্রেণীর নেতাকর্মীরা এমনকি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যেভাবে দখল মাতব্বরীতে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে কারো মনে অন্য ধরনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এভাবে দখল মাতব্বীতে লিপ্ত থাকলে মাঠ যে সম্পূর্ণ অন্য দিকে চলে যাবে তা স্পষ্ট। সম্প্রতি দেশে-বিদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনার সূক্ষ্ণভাবে বিশ্লেষণ করতে তা-ই মনে করেন অনেকে। আরেকটি সূত্র মনে করে এই যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর ও অস্থায়ী আবাসনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ‘গণঅনশন’ কর্মসূচি করেছে-এটা কোনোভাইে দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য শুভকর নয়। কেননা শিক্ষার্থীরা যারা দেশের আগামী ভবিষ্যত তারা যদি এটা মনে করে দেশের সেনাবাহিনী একমাত্র বিশ্বস্থ আশ্বার জায়গা, তা কিন্তু কারো জন্য মঙ্গলজনক হবে না। অন্যদিকে এধরনের ঘটনায় প্রমাণ করে যে, রাজনীতিবিদরা যে সাধারণ জনগণকে আস্থায় নিতে পাছে না- তা-ও দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

কি বোঝালেন রুপা হক?

বিগত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সমালোচনা করে সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রূপা হক সফর করে গেছেন। রাজধানী ঢাকায় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য চায় বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার থাকতে হবে। যদি খুব তাড়াহুড়া করা হয়, সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হবে। সফররত ব্রিটিশ লেবার পার্টির এই সংসদ সদস্য রুপা হক এক সংবাদ সম্মেলনেও অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একজন নেতার কন্যা, আরেকজন নেতার বেগম এবং তাদের ছেলেরা সব কিছুতে আধিপত্য দেখাবে- এ প্রবণতার পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রায় ৫৪ বছরের এ বাস্তবতা থেকে বের হয়ে আসতে একটা পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার’ স্বভাবত দুই পরিবার বলতে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উত্তরাধিকারীদের বোঝান তিনি। এ দুই পরিবারের নিরঙ্কুশ নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চার দশকেরও বেশি সময় দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাতাহাতি ..অতপর..

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সর্বস্তরের জনগণ। তাদের সাথে সমমনা বলে পরিচিত জাতীয় নাগরিক কমিটি। কিন্তু বর্তমানে এদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু বিরোধের ঘটনা নিয়ে অনেকের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। পিরোজপুরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ হাতাহাতি পর্যন্ত গড়িয়েছে। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটনাকে কেউ কেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের বলে মনে করছে। 

শেষ কথা

বিশ্লেষকদের মতে, রুপা হক এমন ধরনের বক্তব্য বা প্রস্তাব করেছেন এমননি এমনি নয়। এর পেছনে অনেক কিছু থাকতে পারে। বলা যেতে রুপা হকে এমন মন্তব্য হালকা পাতলা নেয়া কারণ নেই যখন বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে। বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হলেও এটাই বাস্তব সত্য। কেননা বিএনপি যেভাবে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে, অথচ পর্দার আড়ালে কি হয়ে যেতে পারে, সে-টি তারা ধারণাও করতে করতে পারছে না..। যখন আফগানিস্তানের তালিবান সরকার বলে ফেলে- ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চায়। আফগানিস্তানের কার্যনির্বাহী বিদেশমন্ত্রী মাওলাই আমির খান মুত্তাকি সম্প্রতি ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে দুবাইয়ে বৈঠকে এমনটা বলেছেন। আর এর জবাবে মুত্তাকি জানিয়েছেন, ভারত আফগানিস্তানের ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী’। এর পাশাপাশি আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনও দেশেরই কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই বলেও মুত্তাকি ভারতের বিদেশ সচিবকে ‘আশ্বাস’ দিয়েছেন।

জাতীয় আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিশ্লেষকরা এসবকে একটু অন্যভাবেই দেখেন। কেননা যখন দেখা যায়, কলকাতায় সাংবাদিকদের ভারতের বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গার্সেটি বলেন, বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও সহনশীল রাষ্ট্র দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থ জড়িত এবং বাংলাদেশ নিয়ে দু’দেশকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। এসব ঘটনায় এখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে বিএনপি যদি ক্ষমতা পেয়েই যাচ্ছে এমন মোহে অতিমাত্রায় অসহিষ্ণু হয়ে হয়ে উঠতে থাকে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে যাবে তা কেউই কল্পনাই করতে পারছে না। 

শেয়ার করুন